জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলা এবং বেসামরিক নাগরিকদের ‘অমানবিক দুর্ভোগ' বন্ধ করার জন্য তাঁর দেশ কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত৷ যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AA/A. Ozdil
বিজ্ঞাপন
সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ায় ৩০ দিনের নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের খসড়া প্রস্তাব পেশ করেন নিকি হ্যালি৷ এ সময় তিনি জানান, আর রাসায়নিক হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাবে৷ তিনি বলেন, ‘‘যেসব দেশ রাসায়নিক হামলা এবং অমানবিক দুর্ভোগ বাড়ানোর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছাপূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাদের, বিশেষ করে সিরিয়ার বেআইনি সরকারকে এই বলে সতর্ক করে দিতে চাই যে, যুক্তরাষ্ট্র পালটা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছে৷''
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া
আবার মৃত্যু৷ আবার সারি সারি শিশুদের লাশ৷ আবার সিরিয়া৷ আসাদ সরকারের বোমারু হামলায় ফের শ’য়ে শ’য়ে শিশুর মৃত্যু হয়েছে৷ এর আগেও অবশ্য বহুবার এমন দৃশ্য দেখেছে সিরিয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/Syrian Civil Defense White Helmets
সপ্তাহব্যাপী বিমান হামলা
গত সপ্তাহেই রাজধানী দামেস্কের অদূরে ঘুটা অঞ্চলে বিদ্রোহীদের উপর হামলা শুরু করে আসাদ সরকারের অনুগত বাহিনী৷ একের পর এক বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করা হয়৷ এখনো পর্যন্ত সেই হামলায় পাঁচশ’রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যদিও জাতিসংঘ সিরিয়ায় আগেই ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/Syrian Civil Defense White Helmets
নারকীয় অবস্থা
জাতিসংঘের মহাসচিব ইতিমধ্যেই সিরিয়ার অবস্থাকে ‘পৃথিবীর বুকে একটি নরক’ বলে বর্ণনা করেছেন৷ জাতিসংঘের দাবি– আসাদ বাহিনী যত দ্রুত সম্ভব সাধারণ মানুষের উপর এই আক্রমণ বন্ধ করুক৷ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন করে আসাদ বাহিনী ঘুটায় আক্রমণ শুরু করেছে৷
ছবি: Reuters/B. Khabieh
রাসায়নিক বোমা
অভিযোগ আগেও ছিল, এবারো উঠেছে৷ অভিযোগ, আসাদ সরকার সিরিয়ার সাধারণ মানুষের উপর রাসায়নিক বোমা বর্ষণ করছে৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বহু আহতের শরীরেই ক্লোরিন গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে৷ বোমা হামলার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তিরা৷ তবে সরকারপক্ষের দাবি, কখনোই ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়নি হামলায়৷
ছবি: Reuters/B. Khabieh
রাস্তা জুড়ে যুদ্ধের চিহ্ন
যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার রাস্তাঘাট ভরে আছে নানা অস্ত্রের ভগ্নাবশেষে, যার মধ্যে মিসাইলের চিহ্নও মিলেছে৷ সবচেয়ে সমস্যার বিষয় হলো, অতর্কিতে আসাদ সরকার হামলা শুরু করায় অধিকাংশ সাধারণ মানুষই পালাতে পারেননি৷
ছবি: Reuters/B. Khabieh
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুমা
নতুন করে আক্রমণের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘুটা অঞ্চলের দুমা শহর৷ সাময়িক যুদ্ধ বিরতির পর সাধারণ মানুষ রাস্তা পরিষ্কার করার কাজে নেমে পড়েছেন৷
ছবি: Reuters/B. Khabieh
খাবার নেই, জল নেই
আক্রমণের ফলে দুমায় খাবার এবং পানীয় প্রায় ফুরিয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু নতুন করে খাবার আসছে না৷ সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত৷
ছবি: Reuters/B. Khabieh
নতুন করে যুদ্ধবিরতি
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ নতুন করে সিরিয়ায় যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেছে৷ ৩০ দিনের জন্য যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করা হয়েছে৷ যদিও রাশিয়ার তরফ থেকে বলা হয়, আইএস এবং আল কায়দার উপর হামলা চলতে পারে৷ রাশিয়া আসাদ বাহিনীর অন্যতম মিত্র৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
7 ছবি1 | 7
নিকি হ্যালি জানান, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করেছিল, তা কার্যত পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ওই যুদ্ধবিরতিকে কাজে লাগিয়ে আসাদ সরকার, ইরান এবং রাশিয়া প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে চলেছে৷ নিকি হ্যালি দাবি করেন, যুদ্ধবিরতি শুরুর প্রথম দিকে রাশিয়া দিনে অন্তত ২০ বার দামেস্ক এবং গুটায় বোমা হামলা চালিয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত নতুন যুদ্ধবিরতির খসড়ায় যুদ্ধরত কোনো পক্ষ যুদ্ধবিরতি চলার সময় প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালাতে পারবে না৷ এর ফলে যুদ্ধবিরতিচলাকালীন ৩০ দিন জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপরও হামলা চালানো যাবে না৷ আসাদ সরকারবিরোধী পশ্চিমা শক্তি মনে করে, জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সুযোগ থাকায় সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আসাদ বাহিনী এবং রাশিয়া বারবার হামলা চালাচ্ছে৷
জাতিসংঘে রাশিয়ার নিযুক্ত দূত ভাসিলি নেবেনজিয়া অবশ্য সিরিয়া পরিস্থিতির জন্য যুক্তরাষ্টকেই দায়ী করেছেন৷ তিনি জানান, রাশিয়া মনে করে, ‘‘আসাদ সরকারকে দোষারোপ করা এবং রাশিয়ার কাছে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন ছাড়া যুক্তরাষ্ট আসলে কিছুই করছে না৷''
'Hell on Earth': Eastern Ghouta
12:03
This browser does not support the video element.
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনী ইতিমধ্যে গুটার শতকরা ৬০ ভাগ এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে৷ ব্রিটেনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থা আরো জানাচ্ছে, গত কিছুদিনে গুটায় অন্তত ১১০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ২৪১ জন শিশু৷
এদিকে ফ্রান্স মনে করে একমাত্র রাশিয়া চাইলেই সিরিয়ায় রক্তপাতবন্ধ হতে পারে৷ তাই জাতিসংঘে ফ্রান্সের দূত ফ্রঁসোয়া দুলাত্রে বলেছেন, ‘‘আমরা সবাই জানি যে, রাশিয়া এখনো সামরিক হামলা বন্ধ করেনি৷ অথচ রাশিয়া বোমা হামলা বন্ধ করে আসাদ সরকারকেও হামলা বন্ধে রাজি করলে রক্তস্নান থামাতে পারে৷ ''
এসিবি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ)
সিরিয়ায় তুর্কি-মার্কিন সংঘাতের বিভিন্ন দিক
সিরিয়ার জটিল সংকটে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তি নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে জড়িয়ে পড়েছে৷ বিশেষ করে তুরস্ক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাত সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে৷ রাশিয়া, ইরান ও আসাদ সরকার পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রাখছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Suna
গৃহযুদ্ধের জটিল সমীকরণ
বহু জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়ের দেশ সিরিয়ায় গ্রহযুদ্ধ শুধু বাশার আল আসাদ সরকার বনাম বিরোধীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়৷ আইএস-বিরোধী সংগ্রামেও ঐক্যের অভাব রয়েছে৷ প্রতিবেশী, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তি বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখাচ্ছে৷ তুরস্ক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাদের মধ্যে অন্যতম৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
তুরস্কের কুর্দি ‘জুজু’
সীমানার মধ্যে সংখ্যালঘু কুর্দি জনগোষ্ঠীকে কমবেশি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও প্রতিবেশী দেশগুলিতে কুর্দিদের তৎপরতা নিয়ে লাগাতার দুশ্চিন্তায় থাকে তুরস্কের সরকার৷ সিরিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়৷ সেখানে আফ্রিন অঞ্চলে আসাদ প্রশাসনের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে কুর্দি ওয়াইপিজি গোষ্ঠী জাঁকিয়ে বসেছে৷ কয়েক বছর ধরে কার্যত স্বাধীন হয়ে উঠেছে সিরিয়ার কুর্দি অঞ্চল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. George
তুর্কি-মার্কিন সংঘাত
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ওয়াইপিজি গোষ্ঠীকে সহযোগী হিসেবে দেখে মার্কিন প্রশাসন৷ তাই তাদের আর্থিক ও সামরিক মদত দিয়ে চলেছে ওয়াশিংটন৷ অন্যদিকে তুরস্কের এর্দোয়ান সরকার তাদের সন্ত্রাসবাদী হিসেবে গণ্য করে৷ কুর্দিদের দমন করতে সরাসরি সামরিক অভিযানও চালাচ্ছে তুরস্ক৷ দুই ন্যাটো সদস্য দেশের মধ্যে এমন স্বার্থের সংঘাত নতুন সংকট সৃষ্টি করছে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/E. Turkoglu
বিপজ্জনক পরিস্থিতি
ওয়াইপিজি যোদ্ধারা আইএস জঙ্গিদের বিতাড়ন করার পর মার্কিন প্রশাসন সিরিয়ার উত্তরে তাদের নিয়ে ৩০,০০০ সদস্যের এক সীমান্তরক্ষী বাহিনী সৃষ্টি করার উদ্যোগ নিয়েছে৷ কুর্দি গোষ্ঠীর এই শক্তিবৃদ্ধি প্রতিরোধ করতেই সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্ক৷ ফলে কুর্দি এলাকায় সক্রিয় মার্কিন সৈন্যরাও সেই হামলায় জড়িয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
রাশিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়া
সিরিয়ায় নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করতে তুরস্ক রাশিয়া ও ইরানকে তুষ্ট রাখার উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে৷ কুর্দিদের দমন করতে সিরিয়ার আকাশে নির্বিঘ্নে বোমারু বিমান চালাতে চায় তুরস্ক৷ ওয়াইপিজি গোষ্ঠীর দাবি, রাশিয়া পরোক্ষভাবে তুরস্কের আকাশ অভিযানে মদত দিচ্ছে৷ রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ আসাদ সরকার হুমকি সত্ত্বেও তুরস্কের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না৷
ছবি: Reuters/Sputnik/Mikhail Klimentyev/Kremlin
সম্ভাব্য পরিণতি
তুরস্কের চাপে ওয়াইপিজি গোষ্ঠী কোণঠাসা হয়ে পড়লে আংকারার মদতপুষ্ট ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’ নিয়ন্ত্রিত দুই বিচ্ছিন্ন এলাকা যুক্ত হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে আসাদবিরোধী এই গোষ্ঠীর শক্তিবৃ্দ্ধি হলেও কুর্দি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের নতুন সমীকরণের প্রয়োজন হবে৷ সেই অবস্থায় আসাদের স্বার্থরক্ষায় রাশিয়া ও ইরান কী করবে, তা-ও স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
ওয়াশিংটনের সঙ্গে বোঝাপড়া
যে কোনো মূল্যে ওয়াইপিজি গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করতে আংকারা সরকার বদ্ধপরিকর৷ ওয়াশিংটনের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে তারা কুর্দি যোদ্ধাদের ইউফ্রেটিস নদীর পূর্বে চলে যাবার প্রস্তাব দিয়েছে৷ মানবিজ এলাকায় তুর্কি ও মার্কিন সৈন্যদের যৌথভাবে মোতায়েনেরও প্রস্তাব দিয়েছে তুরস্ক৷