২০১১ সালের মার্চে শুরু৷ তারপর কেটে গেছে ২৬ মাস৷ এই ক’মাসে সিরিয়া হারিয়েছে তার ৯৪ হাজার নাগরিককে৷ এরপরও সংকট নিরসনের কোনো লক্ষণ নেই৷ উল্টো প্রতিদিনই সেখানে যুদ্ধাপরাধের ঘটনা ঘটছে বলে দাবি জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিটির৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে গঠিত এই কমিটি মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে৷ সেখানেই যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত এই মন্তব্য করা হয়েছে৷
সিরিয়ার আন্দোলনের বার্ষিকী
সিরিয়ার সরকারবিরোধী আন্দোলনের দুই বছর পূর্ণ হলো৷ শুরুতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চললেও ক্রমেই তা সহিংস হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Gaia Anderson
টিনএজারদের দিয়ে শুরু
সিরিয়ার দারা শহরের একটি স্কুলের দেয়ালে স্লোগান লেখায় আটক করা হয়েছিল কয়েকজন টিনএজারকে৷ তারা লিখেছিল, টিউনিশিয়া আর মিশরের পর সিরিয়ার বাশার আল আসাদ হবেন পরবর্তী আরব নেতা যাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে৷ এই ঘটনার পরই শুরু হয় জোরদার আন্দোলন৷
ছবি: Gaia Anderson
দেশত্যাগীর সংখ্যা বাড়ছে
এখন পর্যন্ত প্রায় দশ লক্ষ সিরীয় ভয়ে দেশ ছেড়েছেন৷ আর প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ দেশের ভেতরেই গৃহহীন হয়ে পড়েছেন৷
ছবি: Gaia Anderson
অর্ধেকই শিশু
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, যারা দেশ ছেড়েছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু৷
ছবি: Gaia Anderson
শান্তিপূর্ণ থেকে সহিংস
শান্তিপূর্ণ থেকে সহিংস শান্তিপূর্ণভাবে যারা আন্দোলন শুরু করেছিলেন, ক্রমেই তারা দেখতে পান যে তাদের রাস্তাগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে৷ এছাড়া সশস্ত্র কিছু জনগণ ও সেনাবাহিনী ত্যাগ করাদের নিয়ে বিরোধী একটি জোটও গড়ে উঠেছে যারা সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে৷
ছবি: Gaia Anderson
শিশু শিক্ষা হুমকির মুখে
সরকারবিরোধী আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের শিক্ষা৷ জাতিসংঘ বলছে, প্রতি পাঁচটি স্কুলের একটি হয় যুদ্ধে ধ্বসে গেছে, না হয় আশ্রয় শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷
ছবি: Gaia Anderson
তুরস্ক আশ্রয় নিয়ে তিন লক্ষ সিরীয়
তুরস্কের আশ্রয় শিবিরগুলোতে থাকা প্রায় তিন লক্ষ সিরীয়র মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ থাকে সরকারি পরিচালনায় থাকা শিবিরে৷ যেখানে স্কুল ও চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে৷ বাকি শরণার্থীরা যেখানে থাকছেন সেখানে ন্যূনতম সুবিধা নেই৷
ছবি: Gaia Anderson
সাহায্য থেকে বঞ্চিত
সিরিয়ার বিরোধীরা বলছে জাতিসংঘের সাহায্যগুলো পাচ্ছে সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর বাসিন্দারা৷ বঞ্চিত হচ্ছেন বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উত্তরাঞ্চলের জনগণ৷
ছবি: Gaia Anderson
সহায়তা বিতরণ হচ্ছে না
গাল্ফ দেশগুলো থেকে যে অর্থ সহায়তা আসছে বিরোধী নেতারা সেগুলো আশ্রয়প্রার্থীদের না দিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়াতে কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: Gaia Anderson
ত্রাণ নিয়ে যেতে সমস্যা
‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বলছে যেসব এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে যাওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য৷ এমনকি কোনো জায়গায় যাওয়াও যাচ্ছে না৷ সিরীয় সরকারই ঐসব এলাকায় ত্রাণ সংস্থাগুলোকে যেতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: Gaia Anderson
সমাধান হচ্ছে না
সিরিয়ার বিরোধীরা এক হতে না পারায় এবং পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক উদ্যোগ না থাকায় সিরিয়ার সমস্যার সমাধান হচ্ছে না৷
ছবি: Gaia Anderson
10 ছবি1 | 10
এছাড়া সরকারি ও বিরোধী দুই পক্ষই রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করেছে বলে তাদের কাছে ‘যৌক্তিক প্রমাণ' থাকার কথা জানিয়েছে তদন্ত কমিটি৷ তবে এর জন্য সরকারি বাহিনীই ‘বেশি দায়ী' বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে৷ ঠিক কী ধরণের রাসায়নিক উপাদান এবং কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তা অবশ্য নির্ধারণ করতে পারে নি তদন্ত কমিটি৷
এদিকে, কমিটির সদস্য ও যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কার্লা ডে পন্টে বলেন, ‘‘শুধুমাত্র রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দিলে চলবে না, কেননা সিরিয়ায় ইতিমধ্যে প্রচুর লোক নিহত হয়েছে....সিরিয়ায় সহিংসতা, নিষ্ঠুরতা ও নির্যাতনের ধরণ দেখে আমি খুবই বিস্মিত৷''
বিরোধীরা যে শিশু-কিশোরদের সেনা হিসেবে ব্যবহার করছে সে বিষয়টিরও নিন্দা জানিয়েছেন কমিটির সদস্য ডে পন্টে৷ প্রতিবেদনে ৮৬ জন কিশোর-সেনা নিহত হওয়ার ব্যাপারেও তথ্য দেয়া হয়েছে৷
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার জাতিসংঘের তদন্ত কমিটির সদস্যদের সিরিয়ায় যাওয়ার অনুমতি না দেয়ায় স্কাইপ ও টেলিফোনের মাধ্যমে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে৷ প্রায় ১৬শো ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী, শরণার্থী ও নির্বাসিত ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে৷