উত্তর পশ্চিম সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান হামলা। লক্ষ্য ছিল তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহীরা। যুক্তরাজ্যের ওয়ার মনিটরিং গ্রুপ এই খবর দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার এই বিমানহানায় অন্ততপক্ষে ৫৬ জন বিদ্রোহী মারা গেছেন। শতাধিক আহত বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সিরিয়ান অবসারভেটারি ফর হিউম্যান রাইটস। রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলি বিদ্রোহীদের সামরিক প্রশিক্ষণ শিবিরে বোমা ফেলে। এই প্রশিক্ষণ শিবির ইদলিব প্রদেশে এবং তুরস্কের সীমান্তের কাছে। ফয়লাক আল-শাম গোষ্ঠী এই প্রশিক্ষণ শিবির চালাতো।
ইদলিব এখনো বিদ্রোহীদের দখলে। তাদের সাহায্য ও সমর্থন করে তুরস্ক। রাশিয়া আবার সিরিয়ার স্বীকৃত সরকারের পক্ষে। গত মার্চে সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে তুরস্কের একটা চুক্তিও হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়ার বিমানহানা ও অ্যামেরিকার ড্রোন হানার পর সেই চুক্তি কার্যত অর্থহীন হয়ে পড়ল। সিরিয়ান অবসারভেটারি অফ হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, দিন কয়েক আগেই অ্যামেরিকার ড্রোন হানায় পাঁচজন সাধারণ মানুষ ও ১৭ জন বিদ্রোহী মারা গেছেন।
পশ্চিমা অস্ত্রে সহিংস মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা
মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে মোট অস্ত্রের চার ভাগের তিন ভাগই সরবরাহ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো৷ সহিংসতা বা মানবাধিকার বিবেচনায় না নিয়েই বিক্রি হয় অত্যাধুনিক সব অস্ত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Dietsch
পাঁচ বছরের তথ্য
ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসি সিআইপি এক প্রতিবেদনে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের অস্ত্র বিক্রির পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে৷ দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই পাঁচ বছরে ব্যাপক পরিমাণ অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিক্রি করা হয়েছে৷
ছবি: U.S. Marine Corps photo by Cpl. Gabino Perez/AP Photo/picture alliance
বিক্রিতে শীর্ষে কারা!
স্বাভাবিকভাবেই এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি করা মোট অস্ত্রের ৪৮ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের৷ এরপর রাশিয়া ১৭ শতাংশ অস্ত্র বিক্রি করে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও পরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে যথাক্রমে ফ্রান্স (১১%), জার্মানি (৫%), যুক্তরাজ্য (৫%), ইটালি (৩%) এবং চীন (২%)৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ক্রয়ে শীর্ষে সৌদি আরব
অস্ত্র ক্রয়েও স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র সৌদি আরব৷ দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের মোট অস্ত্রের ৪৮ শতাংশ নিজেই ক্রয় করে৷ এরপরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে যথাক্রমে মিশর (১৪%), আলজেরিয়া (১০%), আরব আমিরাত (৯%), ইরাক (৮%), কাতার (৮%), ইসরায়েল (৫%) এবং তুরস্ক (৪%)৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Huwais
সহিংসতায় উসকানি
অঞ্চলটিতে কেবল ছোটখাট অস্ত্র নয়, বরং বড় এবং বিধ্বংসী অস্ত্রও বিক্রি করা হচ্ছে৷ ফলে ব্যাপকভাবে যেসব সহিংসতা ছড়াচ্ছে, তাতে এসব অস্ত্রও বড় ভূমিকা রাখছে৷ সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরবরাহ করা বিমান, বোমা, মিসাইল এবং সাঁজোয়া যান নিয়ে ইয়েমেনে হামলা হচ্ছে৷ মিশরে তথাকথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নাম করে ব্যবহার হচ্ছে মার্কিন যুদ্ধবিমান, ট্যাংক ও হেলিকপ্টার৷
ছবি: Mohammed Hamoud/Anadolu Agency/picture alliance
গৃহযুদ্ধের মদদ
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি বিরাজমান৷ সেসেব দেশে যুদ্ধরত দুই পক্ষেই দেখা যায় মার্কিন ও ইউরোপিয়ান অস্ত্র৷ ইরাক, ইয়েমেন, সিরিয়া এবং লিবিয়ায় যুদ্ধরত সব পক্ষই মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করছে৷ সিরিয়া এবং লিবিয়ায় রুশ অস্ত্রও দু’ পক্ষের কাছে রয়েছে৷ এমনকি তুরস্ক ও আরব আমিরাত লিবিয়ায় যেসব অস্ত্র সরবরাহ করেছে, সেগুলোও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই তৈরি করা৷
ছবি: Esam Omran Al-Fetori/Reuters
ব্যবসা, ক্ষমতা
বিশ্বে কোটি কোটি টাকার অস্ত্রের বাজার রয়েছে৷ ফলে সহিংসতা বা যুদ্ধে একদিকে মানুষের প্রাণহানি হলেও সে অস্ত্র বিক্রি করে ঠিকই লাভবান হচ্ছে নানা দেশের অস্ত্র উৎপাদনকারীরা৷ এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বেশ ক্ষমতাধর লবি বজায় রাখেন৷ এছাড়া বৈশ্বিক রাজনীতিতে বিভিন্ন অঞ্চলে নিজ দেশের ‘বন্ধুত্ব’ ধরে রাখাও নানা ধরনের অস্ত্র সরবরাহ চুক্তির অন্যতম একটি কারণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Dietsch
6 ছবি1 | 6
সিরিয়া সরকারের সেনা ও রাশিয়ার বিমান বাহিনীর যৌথ আঘাতে বিদ্রোহীরা এখন কোণঠাসা। তাঁরা এখন তুরস্কের সীমান্তে ছোট জায়গা অধিকার করে আছে। তুরস্ক এই বছর কয়েক হাজার সেনাকে ওই অঞ্চলে পাঠিয়েছিল। সিরিয়ার সেনাকে রুখতে ও উদ্বাস্তুদের স্রোত বন্ধ করতেই তাঁরা এই ব্যবস্থা নেয়। গত নয় বছর ধরে সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াই চলছে।