সংসদের অনুমোদনের পর ব্রিটিশ বোমারু বিমান সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর উপর হামলা শুরু করে দিয়েছে৷ শুক্রবার জার্মান সংসদ সিরিয়া অভিযান অনুমোদন করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
এবার ব্রিটিশ বোমারু বিমান সিরিয়ায় আইএস-এর উপর হামলা শুরু করলো৷ ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে ওমর তৈলক্ষেত্রের উপর সফল হামলা চালানো হয়েছে৷ সংসদের অনুমোদনের পর দ্রুত এই অভিযান শুরু হয়েছে৷
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করার পর একাধিক ইউরোপীয় দেশ আইএস-এর বিরুদ্ধে কার্যত ‘যুদ্ধ' ঘোষণা করেছে৷ তাদের বক্তব্য, আইএস-এর বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে তারা জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে, যেমনটা ফ্রান্সের ক্ষেত্রে দেখা গেছে৷ প্যারিসে হামলার পর ফ্রান্স আইএস-এর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছে৷ এবার ব্রিটেনও সেই পথে অগ্রসর হয়েছে৷
শুধু বিমান হামলার মাধ্যমে আইএস-দমনের উদ্যোগের বিরুদ্ধে সমালোচনাও কম হচ্ছে না৷ ব্রিটেনের বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরিমি করবিন নিরীহ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷
ব্রিটিশ অভিনেতা ও কমেডিয়ান স্টিফেন ফ্রাই মধ্যপ্রাচ্যে অতীতের পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক অভিযানের পরিণাম নিয়ে তৈরি শ্লেষাত্মক এক তালিকা শেয়ার করেছেন৷
ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পর জার্মানিও সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ তবে জার্মান বিমান সরাসরি হামলা চালাবে না৷ টরন্যাডো বিমান থেকে নজরদারি চালানো সহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত সহায়তা করতে চায় জার্মানি৷ শুক্রবার জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগ এই অভিযান অনুমোদন করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার সরকারের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সওয়াল করেছেন৷
সংসদে আসন সংখ্যার জোরে জার্মানির ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করাতে পারবে – এমনটাই ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ তবে বিরোধী বামপন্থি ও সবুজ দল এই প্রশ্নে সরকারের তড়িঘড়ি মনোভাবের সমালোচনা করছে৷ তাদের মতে, অনেক ভেবেচিন্তে জার্মানির ভূমিকা স্থির করা উচিত৷
তুরস্ক জানিয়েছে, তিন হাজারের মতো শরণার্থী সপ্তাহান্তে সেদেশে প্রবেশ করেছে৷ ‘ইসলামিক স্টেট’ এবং কুর্দি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের মাত্রা বাড়ায় সিরীয়রা তাদের সবকিছু ফেলে রেখে দেশত্যাগ করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
বাধ্য হয়ে পলায়ন
গত সপ্তাহে ১৩ হাজারের মতো সিরীয় সেদেশের তেল আবিয়াত শহর ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছে৷ আধুনিক ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার নামে সহিংস প্রচারণার জন্য বিদেশে সেনা নিয়োগে শহরটি ব্যবহার করে জঙ্গিগোষ্ঠী৷ তুরস্ক অবশ্য শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়নি৷ ফলে অবৈধভাবে দেশত্যাগ করেছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
জঙ্গি এবং বন্ধ সীমান্তের মাঝে
কুর্দি সেনারা ধীরে ধীরে তেল আবিয়াত শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ ইতোমধ্যে শহরটির কাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম দখল করেছে তারা৷ কুর্দিদের ঠেকাতে দুটি সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে ‘ইসলামিক স্টেট৷’ তবে, কিছু সিরীয় গোলাগুলির মাঝে আটকে পড়ে শহরটিতে রয়ে গেছে৷ আর যারা সেখান থেকে বের হতে পেরেছে, তারা বাধা পেয়েছে সীমান্তে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
‘ইসলামিক স্টেট’-এর থাবা থেকে রক্ষা
গত সপ্তাহান্তে তিন হাজারের মতো শরণার্থী সিরীয়-তুর্কি সীমান্ত অতিক্রম করেছে৷ ছবিতে কিছু সিরীয়কে দেখা যাচ্ছে, যারা অবৈধভাবে কাটাতারের বেড়া অতিক্রম করে তুরস্কে প্রবেশের চেষ্টা করছে৷ তেল আবিয়াত ‘ইসলামিক স্টেট’-এর নিয়োগ কেন্দ্র হলেও কুর্দি সেনারা সেখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত মানিয়ে চলার চেষ্টা করেছিল সিরীয়রা৷
ছবি: Reuters/K. Celikcan
‘সীমান্তের মধ্যে থাকুন’
সিরীয়রা সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করলে গরম পানি এবং ‘পিপার স্প্রে’ করে তুর্কি বাহিনী৷ এক পর্যায়ে অবশ্য একটি সীমান্ত অনিচ্ছুকভাবে খুলে দেয়া হয়৷ তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী নুমান কুর্টুলমুস জানিয়েছেন, সিরীয়রা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলা এড়ানোর চেষ্টা করছেন৷ আমরা তাদের সীমান্তের মধ্যে রাখার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি, বলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Str
ইউএনএইচসিআর-এর কাছে নথিভুক্ত ৪০ লাখ সিরীয়
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর মে মাসের শেষের দিকে জানিয়েছে, চল্লিশ লাখের মতো শরণার্থী তাদের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য নথিভুক্ত হয়েছে৷ সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে এখন অবধি সতের লাখের মতো শরণার্থী গ্রহণ করেছে তুরস্ক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Gurgah
সবচেয়ে ‘বেশি ভুগছে’ শিশুরা
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার আন্থনিও গুটারেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, সিরিয়ায় সংঘাতের কারণে সিরীয় ছেলে-মেয়েরা ব্যাপকহারে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ তুরস্কে নিবন্ধিত সিরীয় শরণার্থীদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
যথেষ্ট নয়
চলতি বছরের শুরুতে তুরস্ক সিরীয় শরণার্থীদের জন্য তাদের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পটি খুলে দিয়েছে৷ সুরুচ ক্যাম্পে ৩৫ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করে৷ আরো ৯০ হাজার শরণার্থীর অবস্থান দেশটির ২৫টি ক্যাম্পে৷ তবে ইউএনএইচসিআর-এর প্রশংসা সত্ত্বেও তুরস্ক রেকর্ড সংখ্যক সিরীয় শরণার্থীর চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
পেছনে ফেলে আসা
তেল আবিয়াত শহর থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে কোবানিতে এখনও কিছু সিরীয় রয়ে গেছেন৷ ইসলামিক স্টেট-এর গণহারে মানুষ হত্যা এবং কুর্দি পেশমার্গা বাহিনীর হামলায় শহরটি কার্যত ধ্বংসস্তুতে পরিণত হয়েছে৷ সেখানে খাবার এবং বিদ্যুতের অভাব রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও অল্প কিছু মানুষ শহরটিতে টিকে থাকার লড়াই করছে৷