সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতির ফলে ঐ অঞ্চলে শান্তির একটা আভাস দেখা দিয়েছিল, জাতিসংঘ নেতৃত্বে জেনিভায় শান্তি আলোচনা একটা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছিল৷ কিন্তু হোমসে আবারও হামলায় ভেস্তে গেল সবকিছু৷
বিজ্ঞাপন
বিদ্রোহীদের অভিযোগ, সিরিয়া সরকারের যুদ্ধ বিমান হোমসের কেন্দ্রে বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে বোমা ফেলে তাদের তিন সদস্যকে হত্যা করেছে৷ এ ঘটনায় আহত হয়েছে অনেকে৷ শনিবারের সেনা সদস্যদের ওপর হামলার জের ধরেই পাল্টা এই হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে আল-কায়েদা সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠী এ হামলা চালিয়েছে৷ শনিবারের ঐ আত্মঘাতী হামলায় এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ ৪২ জন নিহত হয়েছে৷
ছ'টি আত্মঘাতী হামলায় এবং গোলাগুলিতে সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ ৪২ জন নিহত হয় বলে জানিয়েছে, ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অবজারভেটরি হিউম্যান রাইটস৷
হামলার পর থেকেই গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের তীব্র শব্দে শহরটি প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে তারা৷ তবে হামলাকারী জঙ্গিরা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) না অন্য কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হওয়া যায়নি৷ হোমস শহরের অবরুদ্ধ একটি অংশ বাদে পুরো শহরটি সিরীয় সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷
‘ইসলামিক স্টেট’ আসলে কী?
আল-কায়েদার অখ্যাত এক উপদল থেকে প্রভাবশালী ‘মিলিট্যান্ট মুভমেন্টে’ পরিণত হয়েছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ জিহাদি এই গোষ্ঠীটির দখলে থাকা অঞ্চল থেকে আক্রমণের কৌশল – আইএস-এর এমন নানা দিক তুলে দেয়া হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
আইএস কোথা থেকে এসেছে?
ইসলামিক স্টেট (আইএস) সুন্নী ইসলামিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী আল-কায়েদার একটি উপদল, যেটি আইএসআইএল, আইসিস এবং দায়েশ নামেও পরিচিত৷ ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণের পর এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটে৷ এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন আবু বকর আল-বাগদাদি৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটির লক্ষ্য হচ্ছে ইরাক, সিরিয়া এবং অন্যান্যা অঞ্চল নিয়ে একটি ইসলামিক স্টেট বা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস কোথায় কাজ করে?
বিশ্বের ১৮টি দেশে আইএস সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ ইরাক এবং সিরিয়ার কিছু অংশ এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এটি সিরিয়ার রাকা শহরকে রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে৷ তবে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন অবধি নিজেদের দখলে থেকে এক চতুর্থাংশ এলাকা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে৷
কারা তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে?
আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে৷ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের সমন্বয়ে তৈরি মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি ‘কোয়ালিশন’ আইএস অধ্যুষিত এলাকায় বিমান হামলা চালাচ্ছে৷ এই কোয়ালিশনে কয়েকটি আরব দেশও রয়েছে৷ অন্যদিকে সিরিয়া সরকারের পক্ষে সেদেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া৷ তবে ভূমিতে তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে কুর্দিশ পেশমার্গার মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো৷
ছবি: picture-alliance/abaca/H. Huseyin
আইএস-এর অর্থের উৎস কী?
জঙ্গি গোষ্ঠীটির অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে তেল এবং গ্যাস৷ এটি এখনো সিরিয়ার তেল উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ দখলে রেখেছে৷ আর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে জঙ্গি গোষ্ঠীর এই মূল্যবান সম্পদ৷ এছাড়া কর, মুক্তিপন এবং লুট করা পুরাকীর্তি বিক্রি করেও অর্থ আয় করে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
আইএস কোথায় কোথায় জঙ্গি হামলা চালিয়েছে?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷ চলত বছর সবচেয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলাটি চালানো হয়েছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে, যেখানে দু’শোর বেশি মানুষ নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে৷ আইএস-এর নেতারা জঙ্গি গোষ্ঠীটির আদর্শে বিশ্বাসীদের এককভাবে বিভিন্নস্থানে আঘাত হানতে উৎসাহ প্রদান করে৷
অন্যান্য আর কী কৌশল ব্যবহার করে আইএস?
নিজেদের ক্ষমতার পরিধি বাড়াতে অনেক কৌশল ব্যবহার করে আইএস৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটি ‘কালচারাল ক্লিনজিংয়ের’ নামে সিরিয়া এবং ইরাকের অনেক ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম লুট ও ধ্বংস করেছে৷ এছাড়া সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর কয়েকহাজার মেয়েকে ক্রীতদাসী বানিয়েছে৷ গোষ্ঠীটি নিজেদের ‘প্রোপোগান্ডা’ এবং নিয়োগের কাজে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
শরণার্থী হয়েছেন কতজন?
সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে সেদেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রতিবেশী লেবানন, জর্ডান এবং তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছেন৷ অনেক সিরীয় ইউরোপেও পাড়ি জমিয়েছেন৷ এছাড়া প্রায় ৩০ লাখ ইরাকে ইরাকের মধ্যেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
7 ছবি1 | 7
এদিকে, এ অবস্থায় জেনিভায় সিরিয়ার শান্তি আলোচনা ভেস্তে যেতে বসেছে৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন সোমবার বলেন, ‘‘জানুয়ারিতে কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় প্রথম দফার যে আলোচনা হয়েছিল, আসাদের মিত্র দেশ রাশিয়া ও ইরান এবং আসাদের বিপক্ষ দেশ তুরস্কের মধ্যে সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল তা একটি ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছিল৷ কিন্তু এই অস্ত্র বিরতির মধ্যেই তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট তাদের হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷''
এদিকে, তুরস্কভিত্তিক সিরিয়ার বিদ্রোহী দলগুলো জানিয়েছে, সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তারা রবিবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে৷ যে শহরটি গত সপ্তাহে ইসলামিক স্টেটের কাছ থেকে মুক্ত করা হয়৷ তবে সিরিয়ার সেনাবাহিনী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি৷
ফ্রি সিরিয়ান আর্মি-র বিদ্রোহীরা রবিবার রাতে একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাডেফ শহরের কাছে আল-বাবে সংঘর্ষ শুরু হয় রবিবার সন্ধ্যা থেকে যেখানে সেনাবাহিনী আইএস-এর কাছ থেকে স্থানটি দখল করেছে৷
এদিকে, জাতিসংঘের দূত স্তাফান দে মিস্তুরা সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং সরকার বাহিনী দু'পক্ষের প্রতিনিধিদের জেনিভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলের আলোচনার জন্য, যাতে ৬ বছর ধরে চলা এই সংকটের সমাধান সম্ভব হয়৷ তবে দু'টি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এতে যোগ দিলেও বাকিরা যোগ দেননি৷ স্টাফানের সঙ্গে আলোচনার পর তাদের একটি দল জানিয়েছে, সরাকারবাহিনী তাদের সদস্যদের উপর আবারও হামলা চালিয়েছে এবং এই আলোচনায় তাদের কোন প্রতিনিধি না থাকায়, সফল কোন আলোচনা সম্ভব নয়৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
আলেপ্পো: তখন আর এখন
আলেপ্পো-ঝলমলে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর সিরিয়ার একটা শহর৷ সবসময় যেখানকার বাজার থাকতো সরগরম৷ আর এখন আলেপ্পো যেন এক ভুতূরে শহর৷ আলেপ্পোতে গৃহযুদ্ধের আগের ও পরের কিছু ছবি থাকছে ছবিঘরে৷
উমায়াদ মসজিদ, তখন
৭১৫ সালে নির্মিত উমায়াদ মসজিদকে সিরিয়ার ‘মর্যাদাপূর্ণ স্থাপনা’ বলা হতো৷ এমনকি জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাতেও এর নাম রয়েছে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
উমায়াদ মসজিদ, এখন
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর ২০১৩ সালে হামলায় এই মসজিদও রেহাই পায়নি৷ প্রার্থনায় জায়গায়ও গোলাগুলি হয়৷ ২০১৬ সালের মার্চে একটি মিনার ধসে পড়ে৷ এখন জায়গাটি দেখলে একটা ধ্বংসস্তূপ মনে হয়৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
নহাসিন হাম্মাম, তখন
পুরানো আলেপ্পোর এই হাম্মাম পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় স্থান বলে পরিচিত ছিল৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
নহাসিন হাম্মাম, এখন
গৃহযুদ্ধ শুরুর পর এই জায়গাটির চেহারা দেখে বোঝাই যায় না কতটা আরামের জায়গা ছিল এটি৷ এখানে এখন পানি আর গোসল করার জিনিসের বদলে যুদ্ধের ভয়ংকর ক্ষত চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
কেল্লা, তখন
আলেপ্পোর কেল্লা বিশ্বের অন্যতম বড় ও পুরানো কেল্লার তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ ১২শ’ শতাব্দীতে দুর্গটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়৷
ছবি: Reuters/S. Auger
কেল্লা, এখন
সময়ের সাথে লড়াই করে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা দুর্গটি নিজের অধিবাসীদের ঝগড়া-বিবাদ সহ্য করতে পারেনি৷ যুদ্ধের প্রভাবে দুর্গটি তার পুরোনো জৌলুস হারিয়েছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
পুরানো শহর, তখন
২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে তোলা এই ছবিটি৷ পুরানো শহর তার চাকচিক্যে ঐতিহ্যে ঝলমল করছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
পুরানো শহর, এখন
এই ছবিটি ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বরের৷ পুরানো শহরের চাকচিক্যের ছিটেফোটাও এখন আর নেই৷ যেন এক ভুতূরে নগরী৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
শাহাবা মল, তখন
২০০৯ সালের ডিসেম্বর, এই মল ক্রিসমাসের জন্য সাজানো হয়েছিল৷ ২০০৮ সালে নির্মিত এই শপিং মলের সাজ সজ্জা দেখতেই অনেক লোক এখানে যেতো৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
শাহাবা মল, এখন
গুগলে যদি এখন এই নামটি সার্চ করেন, তবে লেখা দেখবেন ‘চিরকালের জন্য বন্ধ’ ৷ ২০১৪ সালে হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় মলটি৷
ছবি: Reuters/A. Ismail
আল-জারাব বাজার, তখন
আল-জারাব বাজার এর প্রধান দরজা৷ পুরোনো আমলের এই বাজারে ছবিটি ২০০৮ সালে তোলা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
আল-জারাব বাজার, এখন
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে বাজারের এই ছবিটি তোলা হয়েছে৷ বাজারের বেশিরভাগ অংশই বিধ্বস্ত হয়েছে হামলায়৷