সিরিয়া সংকটে এবার আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে চাইছে অ্যামেরিকা৷ কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের তৎপরতার ফলে জটিলতা বাড়ছে, যার পরিণতি সুদূরপ্রসারী হতে পারে৷ বিশেষ করে তুরস্ক ক্ষোভ প্রকাশ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
গত কয়েক বছরে মার্কিন প্রশাসন সিরিয়া সংকটে তেমন জোরালো ভূমিকা পালন করেনি৷ প্রায় ২,০০০ মার্কিন সৈন্য সিরিয়ায় মোতায়েন থাকলেও পরিস্থিতি সামলানো ছাড়া কোনো স্পষ্ট দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য চোখে পড়েনি৷ বিশেষ করে রাশিয়া ও ইরান সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়ে চলেছে৷ সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন সিরিয়ায় তাঁর প্রশাসনের লক্ষ্য তুলে ধরেছেন৷ তথাকথিত ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর পুনরুত্থান থামানো ছাড়াও অ্যামেরিকা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রস্থানের জন্য প্রস্তুত থাকতে চায়৷ সেইসঙ্গে ইরানের প্রভাব প্রতিপত্তি কমানোও ওয়াশিংটনের লক্ষ্য৷ তাই মার্কিন সৈন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য সিরিয়ায় মোতায়েন থাকবে বলে জানান টিলারসন৷
তবে টিলারসন আরও বলেন, সিরিয়া সংকট সমাধানের লক্ষ্যে মার্কিন প্রশাসন কূটনৈতিক উদ্যোগও চালিয়ে যাবে৷ বিশেষ করে সেই লক্ষ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগকে সমর্থন করে অ্যামেরিকা৷ উল্লেখ্য, আগামী সপ্তাহে ভিয়েনায় সিরিয়ার সরকার ও বিরোধী পক্ষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে জাতিসংঘ৷
সিরিয়ায় নিজস্ব স্বার্থরক্ষায়অ্যামেরিকা যেভাবে কুর্দি বিদ্রোহীদের সহায়তা দিয়ে চলেছে, তার প্রবল বিরোধিতা করছে তুরস্ক৷ কিছু মার্কিন কর্মকর্তা ৩০,০০০ সদস্যের মিলিশিয়া সৃষ্টি করার কথা বলায় আরও ক্ষুব্ধ হয়েছে আংকারা সরকার৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বিষয়টি সামাল দেবার চেষ্টা করছেন৷
ন্যাটো সহযোগী ও সিরিয়ার প্রতিবেশী হিসেবে তুরস্কের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তুরস্ক মরিয়া হয়ে রাশিয়া ও ইরানের সমর্থন নিয়ে সিরিয়ায় মার্কিন-সমর্থিত কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে জোরালো সামরিক অভিযান চালানোর উদ্যোগ নিচ্ছে৷ উল্লেখ্য, মাস তিনেক আগেই তুর্কি সেনাবাহিনী সিরিয়ার ইডলিব প্রদেশে প্রবেশ করেছে৷ এবার তারা আফরিন অঞ্চলে বিমান হামলা চালাতে চায়৷ এমন অবস্থায় অ্যামেরিকার প্রস্তাবিত বাহিনীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে৷ সেইসঙ্গে তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়া ও ইরানের ঘনিষ্ঠতাও ওয়াশিংটনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷
কোণঠাসা হলেও ফুরিয়ে যায়নি আইএস
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট সিরিয়া ও ইরাকে তাদের মূল ক্ষমতাকেন্দ্রে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ তবে মিশর, লিবিয়া, আফগানিস্তানের মতো দেশেও তাদের প্রভাব কম নয়৷ ইউরোপে আইএস ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ব্যক্তিদের কার্যকলাপের ঝুঁকিও বাড়ছে৷
ছবি: Reuters/Rodi Said
সিরিয়া ও ইরাকে জমি হাতছাড়া
রাকা শহরকে কেন্দ্র করে বিশাল খিলাফত গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিল আইএস৷ সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছিল৷ মার্কিন নেতৃত্বে কোয়ালিশন বাহিনীসহ একাধিক শত্রুর চাপে তারা অনেক এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে৷
ছবি: Reuters
আর্থিক সংকট
‘খিলাফত’ স্থাপন করতে অর্থের প্রয়োজন৷ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের মতোই এলাকা দখল করে কর বাবদ টাকা তুলে, সেখানকার প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে এসেছে আইএস৷ তাদের যোদ্ধা ও কর্মীদের বেতন-ভাতাও এসেছে সেখান থেকে৷ বর্তমানে জমি হারিয়ে চরম অর্থাভাবে ভুগছে আইএস৷
ছবি: Reuters/Rodi Said
লিবিয়ায় আবার মাথাচাড়া দেবার প্রচেষ্টা
যেখানেই অরাজকতা, সেখানেই সুযোগ খোঁজার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে আইএস৷ সিরিয়া ও ইরাকে ধাক্কা খেয়ে লিবিয়ায় আবার উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে তারা৷ সে দেশের একনায়ক গাদ্দাফির বিরুদ্ধে সংগ্রামের পর অনেক চরম ইসলামপন্থি গোষ্ঠী আইএস-এর ছত্রছায়ায় চলে আসে৷ প্রাথমিক সাফল্যের পর সেখানেও জমি হারায় তারা৷ এবার নতুন করে উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে আইএস৷
ছবি: Reuters/I. Zitouny
ইয়েমেনে কঠিন লড়াই
অরাজকতার সুযোগ নিয়ে ইয়েমেনেও পা রাখতে চেয়েছিল আইএস৷ কিন্তু সেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কম নয়৷ আল-কায়েদা ও শিয়া বিদ্রোহীদের দৌরাত্ম্যের মাঝে জায়গা করে নিতে আইএস-কে বেগ পেতে হয়েছে৷ শিয়া-সুন্নি সংঘাতের বৃহত্তর কালো ছায়া তাদের অ্যাজেন্ডা অনেকটা দাবিয়ে রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y.Arhab
মিশরে উপস্থিতি
মিশরের সিনাই উপদ্বীপে আইএস ঘাঁটি গেড়েছে৷ খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে তারা মিশরের প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলছে৷ দু’টি গির্জার উপর সাম্প্রতিক হামলার পর সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে৷
ছবি: Reuters/A. Aboulenein
আফগানিস্তানে তালেবানকে চ্যালেঞ্জ
দুর্বল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নিয়ে এতকাল আফগানিস্তানে চরমপন্থি সন্ত্রাস চালিয়ে এসেছে তালিবান৷ তাদের শক্তিক্ষয়ের ফলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তার অনেকটাই দখল করতে এগিয়ে এসেছে আইএস৷ জেহাদি ভাবধারার সওদাগর হিসেবে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চাইছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/TTP
অনুপ্রেরণার উৎস
সরাসরি এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ পরিচালনা ছাড়াও ভাবাদর্শ ও জেহাদি রপ্তানির কাজেও সাফল্য দেখিয়েছে আইএস৷ কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলার ডাক দিয়ে এমনকি অচেনা মানুষকেও উদ্বুদ্ধ করে লক্ষ্য হাসিল করেছে এই গোষ্ঠী৷ নিস, প্যারিস, বার্লিন, লন্ডন, স্টকহোম-এর মতো শহরে হামলার ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বনাম আইএস
পূর্বসূরি বারাক ওবামা-র কড়া সমালোচনা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প আইএস-কে নির্মূল করার ব্রত নিয়েছেন৷ ক্ষমতায় আসার পর ইয়েমেন ও আফগানিস্তানে সরাসরি আইএস-এর বিরুদ্ধে সামরিক হামলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ তবে এক্ষেত্রে কোনো সার্বিক নীতি এখনো স্পষ্ট নয়৷