সিরিয়ায় নতুন করে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জাতিসংঘ৷ অন্যদিকে চলছে যুদ্ধ৷ বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনীর হামলায় আলেপ্পোয় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
আবার ভেস্তে যেতে বসেছে সিরিয়ায় শান্তি ফেরানোর উদ্যোগ৷ নতুন করে হামলা শুরু করেছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনী৷ এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সহায়তা চেয়েছেন জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্তাফান দে মিস্তুরা৷ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শান্তি আলোচনা শুরুর আগেই যুদ্ধবিরতি নতুন করে কার্যকর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার ভূমিকা রাখার দরকার৷ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে সিরিয়া শান্তি আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার পর তিনি এ কথা বলেন৷
বাশার আল-আসাদ সরকার এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে পরবর্তী পর্যায়ের শান্তি আলোচনা শুরু হবে আগামী মে মাসে৷ তবে আলোচনার ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিমধ্যেই শঙ্কা আরো বড় হয়ে উঠেছে৷ গত সপ্তাহে সিরিয়ার প্রধান বিরোধী জোট হাই নেগোসিয়েশন কমিটি (এইচএনসি) জানিয়েছে, বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনী আবার সাধারণ নাগরিকের ওপর হামলা শুরু করায় তারা আর শান্তি আলোচনায় অংশ নেবে না৷
অনশনের শহর মাদায়া
গত তিন মাস ধরে অনশনে মৃত্যুর বিরুদ্ধে যুঝছে মাদায়ার আবালবৃদ্ধবনিতা৷ তবে অবশেষে সেই মৃত্যুর শহরে মানবিক সাহায্য পৌঁছতে শুরু করেছে৷
ছবি: Aktivisten aus Madaja
শহরে আটক
আসাদ বিরোধী বিদ্রোহী ও আইএস যোদ্ধাদের দখলে মাদায়া৷ শহরটিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে আসাদ সমর্থক ও হেজবোল্লা গোষ্ঠীর যোদ্ধারা৷ ফলে কোনো রসদ শহরে ঢুকতে পারছিল না, মানুষজন এমনকি ঘাসপাতা খেয়ে বেঁচে ছিলেন৷
ছবি: Aktivisten aus Madaja
জল আর নুন
আস্তাকুঁড়ে খাবারের খোঁজে মানুষ, গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সিরিয়ায় এ ধরনের দৃশ্য কল্পনা করা যেত না৷ মা দুধের বদলে বাচ্চাকে জলে নুন গুলে খেতে দিচ্ছেন৷
ছবি: Aktivisten aus Madaja
অশনি সংকেত
যে ভিডিও থেকে এই শিশুটির ছবি নেওয়া হয়েছে, সেটি তোলা হয় ২০১৬ সালের ৫ই জানুয়ারি৷ শীতের মৌসুম চলেছে, কাজেই ক্ষুধা ও অপুষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হাড়কাঁপানো শীত৷
ছবি: Reuters
কষ্ট তো ছোটদেরই
বড়দের যুদ্ধে যারা সবার আগে ও সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়, তারা হলো ছোটরা৷ অক্টোবর মাস থেকে মাদায়ায় বাইরে থেকে কোনোরকম সাহায্যই যে পৌঁছায়নি৷
ছবি: Aktivisten aus Madaja
মানবিক ট্র্যাজেডি
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে মানুষকে যখন ঘাসের রুটি খেতে হয়, তখন সেটাকে ট্র্যাজেডি ছাড়া আর কী বলা চলতে পারে...৷
ছবি: Aktivisten aus Madaja
প্রতিবাদের ঝড়
যেমন সিরিয়ার ইদলিব শহরে৷ বিক্ষোভকারীরা চান, মাদায়ায় ত্রাণ পাঠানো হোক – আর চান গৃহযুদ্ধের অন্ত৷
ছবি: picture-alliance/AA/F. Faham
সাহায্য পৌঁছাবে কেমন করে
মাদায়া থেকে পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে একাধিক মানুষ গুলিতে প্রাণ দিয়েছেন৷ জুলাই মাস থেকেই মাদায়া অবরুদ্ধ, কাজেই সেখানে ত্রাণসাহায্য পাঠানো কঠিন৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Krzysiek
সাহায্য যখন পৌঁছাতে শুরু করল
সিরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান বাশার আল-আসাদের অনুমতি পাবার পর জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও সেই সঙ্গে রেড ক্রস ও রেড ক্রেসেন্ট ত্রাণসাহায্য পাঠাতে শুরু করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Beshara
অন্যান্য ভুখা শহর
মাদায়াই শুধু নয়, সেই সঙ্গে একেবারে উত্তরে অবস্থিত আরো দু’টি শহরে ত্রাণ পাঠানো শুরু হয়েছে৷ শিয়া অধ্যুষিত ফুয়া ও কফারিয়া শহর দু’টি অবরুদ্ধ করে রেখেছে বিদ্রোহীরা, কিন্তু মানুষজনের অবস্থা মাদায়ারই মতো৷ কেননা যুদ্ধে দু’পক্ষ থাকতে পারে, অনশনে নয়৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
9 ছবি1 | 9
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর আলেপ্পোয় আবার রক্তক্ষয় শুরু হয়েছে৷ ব্রিটেন ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনীর বিমান হামলায় শহরটিতে অন্তত ২০ জন মারা গেছে৷ নিহতদের মধ্যে একজন শিশু এবং তিন জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে বলেও মানবাধিকার সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়৷
এসিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
ভালোবাসার জয় দেখালো সিরীয় যুগল
তাদের শহরে চলছে অনবরত বোমা বর্ষণ৷ তা সত্ত্বেও হোমসের এক জুটি হারতে মানতে রাজি হয়নি৷ বার্তা সংস্থা এএফপি-র আলোকচিত্রির তোলা তাদের কিছু দুর্লভ ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
‘সিরিয়াকে পুর্ননির্মাণ করছে ভালোবাসা’
জাফর মেরাই তোলা ছবিগুলোর চারপাশে চমৎকার কোনো স্থাপনা নেই, নেই সবুজ প্রকৃতির ছোয়া৷ বরং সেগুলো ঘিরে আছে যুদ্ধের বিভীষিকা৷ এসব ছবি মাসখানেক আগে তোলা৷ কিছু ছবি তিনি নিজেই ফেসবুকে দিয়েছেন, কিছু প্রকাশ করেছে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি৷ শিরোনাম, ‘সিরিয়াকে পুর্ননির্মাণ করছে ভালোবাসা’৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
ধ্বংসাবশেষের মধ্যে জীবন এবং ভালোবাসা
১৮-বছর বয়সি নাদা মেহরি এবং ২৭ বছর বয়সি হাসান ইউসুফ তাঁদের বিয়ের ছবি তোলার জন্য বেছে নিয়েছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত হোমসের কিছু স্থান৷ আর মেরাই ছবির মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছেন ‘জীবন মৃত্যুর চেয়ে শক্তিশালী’৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
চারিদিকে যুদ্ধে বিভীষিকা
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে মৃতের সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি, তাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক৷ দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমস মূলত আক্রান্ত হয়েছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত সেনাদের দ্বারা৷ কেননা, ২০১২ সালে আসাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল যেসব শহরে, তার একটি হোমস৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
সাদা পোশাক, ধূসর পাথরকুঁচি
একসময়ের সমৃদ্ধ শহরটির মাঝখানে বিয়ের সাদা পোশাকে দাঁড়িয়ে আছেন নাদা, তাঁর হবু স্বামী যুদ্ধের পোশাকে৷ যুদ্ধবিগ্রহের মাঝের সিরিয়ার তরুণ জুটিদের অবস্থা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ছবিতে৷ পেছনে দেখা যাচ্ছে গোলার আঘাতে জর্জরিত বিভিন্ন ভবন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
অনবরত হামলা
হোমসে এখনো নিয়মিত হামলা চালানো হচ্ছে৷ গত ২৬ জানুয়ারি এক আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ২২ জন, আহত শতাধিক৷ সেই হামলার দায় অবশ্য স্বীকার করেছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
হোমস একা নয়
গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো আসাদের বাহিনীর পক্ষ নিয়ে সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে বিমান হামলা চালাচ্ছে৷ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশটির রাজধানী দামেস্ক থেকে ১৭০ মাইল দূরে একটি হাসপাতালে রাশিয়ার বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে নয় ব্যক্তি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
আন্তর্জাতিক সমালোচনা
ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আসাদ জানিয়েছেন যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন৷ তবে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আডেল আল-জুবের এক জার্মান পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ‘‘ভবিষ্যতে বাশার আল-আসাদ বলে কেউ থাকবে না৷....সিরিয়ার দায়িত্ব আর তাঁর কাঁধে থাকবে না৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের মূল বিষয়
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ছিল সদ্য সমাপ্ত মিউনিখ সম্মেলনে অন্যতম আলোচনার বিষয়৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সেই সম্মেলনে বলেন, আমাদের মতে, রাশিয়া অধিকাংশ হামলা চালাচ্ছে সিরিয়ার আইনসম্মত বিরোধী গোষ্ঠীর উপরে৷ রাশিয়া অবশ্য দাবি করছে, জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে দমনে বিমান হামলা চালাচ্ছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
যুদ্ধের সময় ভালোবাসা
কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী মেরাই-এর ছবিতে আবেগপূর্ণ মন্তব্য করেছেন৷ একজন লিখেছেন, ‘নিজেকে ছবির বরের মতো মনে হচ্ছে৷’ আরেকজন লিখেছেন, ‘সৃষ্টিকর্তা আপনার এবং সিরিয়ার সব মানুষের সহায় হোন৷ এ সব ছবি গোটা বিশ্বের সঙ্গে শেয়ার করায় ধন্যবাদ৷’
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
জীবন বয়ে যাওয়ার প্রমাণ
মেরাই-এর ছবিগুলো ফেসবুকে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে৷ অনেকে সেসব ছবি দিয়ে গ্যালারি, এমনকি ভিডিও তৈরি করেছেন৷ একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘‘মেরাই-এর ছবিগুলো প্রমাণ করছে যুদ্ধের মাঝেও মানুষের জীবন থেমে নেই, একরকম কেটে যাচ্ছে৷’’