রাসায়নিক হামলার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ডুমা শহরে এখনো পৌঁছতে পারেনি আন্তর্জাতিক তদন্তকারী দল৷ এদিকে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্ব পরস্পরকে দোষারোপ করে চলেছে৷ সোমবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পাওয়া গেছে৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ার দুমা শহরে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করা হয়েছিলো কিনা, সে বিষয়ে অকাট্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার আগেই শনিবার সে দেশের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল অ্যামেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেন৷ ৯ সদস্যের আন্তর্জাতিক তদন্তকারী দল গত সপ্তাহে সিরিয়ায় পৌঁছলেও এখনো ঘটনাস্থলে যাবার সুযোগ পায়নি৷ এই বিলম্বকে কেন্দ্র করে অ্যামেরিকা ও রাশিয়া পরস্পরকে দোষারোপ করছে৷ উল্লেখ্য, রাসায়নিক অস্ত্র নিরোধের আন্তর্জাতিক সংস্থা ওপিসিডাব্লিউ'র ইনস্পেক্টররা ডুমা শহরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ, সাক্ষীদের জেরা ও তথ্যপ্রমাণ নথিভুক্ত করতে চান৷ রবিবার তাঁরা সিরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন৷
অ্যামেরিকা ও ব্রিটেনের অভিযোগ, রাশিয়া অথবা সিরিয়া তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে সম্ভবত ঘটনাস্থলে তথ্যপ্রমাণ বিকৃত করছে৷ সোমবারও দুমা শহরে সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও রুশ সামরিক পুলিশকে টহল দিয়েছে এবং ত্রাণ বিতরণ করেছে৷ অন্যদিকে রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে এই বিলম্বের জন্য শনিবারের হামলাকে দায়ী করেছে৷ ইনস্পেকটররা পৌঁছানোর ঠিক আগে হামলা চালানোর যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মস্কো৷ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ গ্যারেন্টি দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া ঘটনাস্থলে কোনোরকম রদবদল করেনি৷ রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, আন্তর্জাতিক তদন্তকারী দল সম্ভবত বুধবার ঘটনাস্থলে যেতে পারবেন৷ তাঁদের নিরাপত্তার খাতিরে তার আগে সেখানে পৌঁছানোর রাস্তা মাইনমুক্ত করতে হবে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মঙ্গলবার সেই যাত্রাপথ পরীক্ষা করবেন৷
এদিকে সোমবারও সিরিয়ার উপর সম্ভবত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে৷ সিরিয়ার সেনাবাহিনীর দাবি, তারা হোমস প্রদেশ ও দামেস্কের কাছে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে৷ তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সে সময়ে ওই এলাকায় কোনো মার্কিন সামরিক কার্যকলাপ চলছিল না৷ ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইসরায়েল এমন রিপোর্টের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করে না৷
সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা লুক্সেমবুর্গে এক বৈঠকে সিরিয়ার উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন৷ বাশার আল আসাদ প্রশাসনকে আরও একঘরে করার লক্ষ্যে আরও পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা করেছেন তাঁরা৷
এদিকে মার্কিন নেতৃত্বে শনিবারের হামলার কার্যকারিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে৷ সমালোচকদের মতে, পূর্বঘোষিত এই হামলার মাধ্যমে আসাদ প্রশাসনের কৌশলগত ভারসাম্যে কোনো পরিবর্তন ঘটে নি৷ এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে রাসায়নিক হামলা প্রতিরোধ করাও সম্ভব হবে না৷ এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
শীতল যুদ্ধ কি ফিরে আসছে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বার্লিন প্রাচীর পতনের সময় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল যুদ্ধ চলেছে৷ সিরিয়াসহ আরও কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও অ্যামেরিকার মধ্যে সংঘাত বেড়ে চলেছে৷
ছবি: AP
শীতল যুদ্ধের চরিত্র
শুধু দুটি পরাশক্তি নয়, পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত দুই শিবির যে কোনো সময়ে একে অপরের উপর হামলা চালাতে পারে৷ অথচ বাস্তবে সেরকম হামলা অথবা ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে একটি কাঠামো সফলভাবে কাজ করেছে৷ ‘শান্তিপূর্ণ’ সেই সহাবস্থানে আঁচ পড়ার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Wieseler
উত্তেজনা সত্ত্বেও ‘স্থিতিশীলতা
অ্যামেরিকার নেতৃত্বে সামরিক জোট ন্যাটো ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ওয়ারশ জোট আজকের দৃষ্টিভঙ্গিতে যথেষ্ট স্থিতিশীল ছিল৷ রাতারাতি কোনো আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনাও ছিল অকল্পনীয়৷ এমনকি জোটের বাইরেও ওয়াশিংটন ও মস্কোপন্থি দেশগুলির অবস্থান সহজে বদলায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শান্তির ‘অলীক’ প্রত্যাশা
বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর রাশিয়া তথা পূর্ব ইউরোপে প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তনের ফলে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বৈরি মনোভাবের চূড়ান্ত অবসান ঘটবে, এমন আশা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো প্রায় রাশিয়ার দোরগোড়ায় গিয়ে পৌঁছে যায়৷ খোদ রাশিয়াকেও পশ্চিমা বিশ্বের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে গণ্য করা হতে থাকে৷
ছবি: Reuters/Axel Schmidt
‘দুর্বল রাশিয়া’
মিখাইল গর্বাচভ ও বরিস ইয়েলৎসিন শীর্ষ নেতা হিসেবে রাশিয়ার গৌরব খর্ব করে সে দেশের পতন তরান্বিত করেছেন, অনেক মানুষের মনে এমন অভিযোগ রয়েছে৷ ভ্লাদিমির পুটিন সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট সফল হয়েছেন বলে মনে করেন তাঁরা৷ রাশিয়ার স্বার্থ জোরদার করতে তিনি পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতেও ভয় পান না, এমন ধারণা তাঁকে ক্রমশ আরও শক্তিশালী করে তুলছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP/SZ Photo
স্বার্থের সংঘাত
ইউক্রেন, ইরান, সিরিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকটের ক্ষেত্রে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থের সংঘাত তীব্র হয়ে উঠছে৷ নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও রাশিয়া প্রয়োজনে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে তার ঘোষিত স্বার্থ কায়েম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ প্রশাসনের প্রতি সমর্থন ও সাহায্য তারই অন্যতম দৃষ্টান্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass/M. Metzel
অস্থায়ী আনুগত্য
শীতল যুদ্ধের সময়ে দুই পরাশক্তির কোনো একটির প্রতি বাকি দেশগুলির স্থায়ী আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি৷ আজ পরিস্থিতি বদলে গেছে৷ তুরস্কের মতো ন্যাটো সদস্য দেশ জোটসঙ্গীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে৷ পূর্ব ইউরোপের কিছু ইইউ সদস্য দেশও পুটিন প্রশাসনের প্রতি বেশি ঝুঁকতে শুরু করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Saribas
সিরিয়াকে ঘিরে আবার বিশ্বযুদ্ধ?
আসাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে এর আগেও রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে রাশিয়াকে সতর্ক করে সিরিয়ার উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন, তার ফলে দুই শক্তির মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা বাস্তব হয়ে উঠেছে৷ শেষ পর্যন্ত এমন সংঘাত এড়ানো সম্ভব হলেও এমন যুদ্ধ এড়ানোর কাঠামো দুর্বল হয়ে উঠেছে৷