মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে রাশিয়া যেভাবে সিরিয়ায় বিভিন্ন বেসামরিক এলাকার উপর বোমাবর্ষণ করেছে, তা যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য হতে পারে৷ অ্যামনেস্টির রিপোর্টে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
অ্যামনেস্টি বুধবার যে রিপোর্ট প্রকাশ করে, তা-তে সিরিয়ায় বিভিন্ন বেসামরিক এলাকায় রুশ বোমাবর্ষণে শত শত মানুষ নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে৷
‘‘দৃশ্যত কিছু রুশ বিমান হানা সরাসরি বেসামরিক ব্যক্তি অথবা স্থানকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে, এমন সব বেসামরিক এলাকার উপর, যেখানে কোনো সামরিক লক্ষ্য থাকতে পারে না৷ এছাড়া হাসপাতাল ইত্যাদির উপরও আক্রমণ চালানো হয়েছে, যার ফলে বেসামরিক ব্যক্তিরা হতাহত হয়েছে৷ এ ধরনের আক্রমণ যুদ্ধাপরাধের তুল্য হতে পারে'', বলেছেন ফিলিপ লুথার, যিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক৷
গত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস অবধি রাশিয়া হোমস, ইদলিব ও আলোপ্পো প্রদেশগুলিতে যে সব বিমান হানা চালায়, তার মধ্যে ছ'টি পর্যালোচনা করে দেখেছে অ্যামনেস্টি৷ অ্যামনেস্টি বলছে, ঐ সব বিমান হানায় অন্তত ২০০ বেসামরিক ব্যক্তি এবং ডজন খানেক যোদ্ধা নিহত হয়েছে৷
তুরস্ক জানিয়েছে, তিন হাজারের মতো শরণার্থী সপ্তাহান্তে সেদেশে প্রবেশ করেছে৷ ‘ইসলামিক স্টেট’ এবং কুর্দি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের মাত্রা বাড়ায় সিরীয়রা তাদের সবকিছু ফেলে রেখে দেশত্যাগ করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
বাধ্য হয়ে পলায়ন
গত সপ্তাহে ১৩ হাজারের মতো সিরীয় সেদেশের তেল আবিয়াত শহর ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছে৷ আধুনিক ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার নামে সহিংস প্রচারণার জন্য বিদেশে সেনা নিয়োগে শহরটি ব্যবহার করে জঙ্গিগোষ্ঠী৷ তুরস্ক অবশ্য শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়নি৷ ফলে অবৈধভাবে দেশত্যাগ করেছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
জঙ্গি এবং বন্ধ সীমান্তের মাঝে
কুর্দি সেনারা ধীরে ধীরে তেল আবিয়াত শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ ইতোমধ্যে শহরটির কাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম দখল করেছে তারা৷ কুর্দিদের ঠেকাতে দুটি সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে ‘ইসলামিক স্টেট৷’ তবে, কিছু সিরীয় গোলাগুলির মাঝে আটকে পড়ে শহরটিতে রয়ে গেছে৷ আর যারা সেখান থেকে বের হতে পেরেছে, তারা বাধা পেয়েছে সীমান্তে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
‘ইসলামিক স্টেট’-এর থাবা থেকে রক্ষা
গত সপ্তাহান্তে তিন হাজারের মতো শরণার্থী সিরীয়-তুর্কি সীমান্ত অতিক্রম করেছে৷ ছবিতে কিছু সিরীয়কে দেখা যাচ্ছে, যারা অবৈধভাবে কাটাতারের বেড়া অতিক্রম করে তুরস্কে প্রবেশের চেষ্টা করছে৷ তেল আবিয়াত ‘ইসলামিক স্টেট’-এর নিয়োগ কেন্দ্র হলেও কুর্দি সেনারা সেখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত মানিয়ে চলার চেষ্টা করেছিল সিরীয়রা৷
ছবি: Reuters/K. Celikcan
‘সীমান্তের মধ্যে থাকুন’
সিরীয়রা সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করলে গরম পানি এবং ‘পিপার স্প্রে’ করে তুর্কি বাহিনী৷ এক পর্যায়ে অবশ্য একটি সীমান্ত অনিচ্ছুকভাবে খুলে দেয়া হয়৷ তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী নুমান কুর্টুলমুস জানিয়েছেন, সিরীয়রা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলা এড়ানোর চেষ্টা করছেন৷ আমরা তাদের সীমান্তের মধ্যে রাখার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি, বলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Str
ইউএনএইচসিআর-এর কাছে নথিভুক্ত ৪০ লাখ সিরীয়
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর মে মাসের শেষের দিকে জানিয়েছে, চল্লিশ লাখের মতো শরণার্থী তাদের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য নথিভুক্ত হয়েছে৷ সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে এখন অবধি সতের লাখের মতো শরণার্থী গ্রহণ করেছে তুরস্ক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Gurgah
সবচেয়ে ‘বেশি ভুগছে’ শিশুরা
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার আন্থনিও গুটারেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, সিরিয়ায় সংঘাতের কারণে সিরীয় ছেলে-মেয়েরা ব্যাপকহারে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ তুরস্কে নিবন্ধিত সিরীয় শরণার্থীদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
যথেষ্ট নয়
চলতি বছরের শুরুতে তুরস্ক সিরীয় শরণার্থীদের জন্য তাদের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পটি খুলে দিয়েছে৷ সুরুচ ক্যাম্পে ৩৫ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করে৷ আরো ৯০ হাজার শরণার্থীর অবস্থান দেশটির ২৫টি ক্যাম্পে৷ তবে ইউএনএইচসিআর-এর প্রশংসা সত্ত্বেও তুরস্ক রেকর্ড সংখ্যক সিরীয় শরণার্থীর চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
পেছনে ফেলে আসা
তেল আবিয়াত শহর থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে কোবানিতে এখনও কিছু সিরীয় রয়ে গেছেন৷ ইসলামিক স্টেট-এর গণহারে মানুষ হত্যা এবং কুর্দি পেশমার্গা বাহিনীর হামলায় শহরটি কার্যত ধ্বংসস্তুতে পরিণত হয়েছে৷ সেখানে খাবার এবং বিদ্যুতের অভাব রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও অল্প কিছু মানুষ শহরটিতে টিকে থাকার লড়াই করছে৷
ছবি: DW/K. Sheikho
8 ছবি1 | 8
ইদলিব প্রদেশের আরিহায় একটি জনবহুল বাজার এলাকার উপর তিনটি রকেট পড়ে ৪৯ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হবার কথা বলা হয়েছে অ্যামনেস্টির রিপোর্টে৷
গত অক্টোবর মাসে হোমস প্রদেশের ঘান্টুতে একটি সম্ভাব্য রুশ আক্রমণে ৪৬ জন বেসামরিক ব্যক্ত নিহত হন; তাদের মধ্যে ছিলেন ১১ জন মহিলা এবং ৩২টি শিশু, যারা একটি বসতবাড়ির মাটির তলার ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল – জানিয়েছে অ্যামনেস্টি৷
রাশিয়া যে ঘনবসতি এলাকার উপর আনগাইডেড মিসাইল ও ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করে থাকতে পারে, তার হদিশ আছে, বলছে অ্যামনেস্টি৷ ক্লাস্টার বোমা আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ৷ ইতিপূর্বে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মানবাধিকার সংগঠনও সিরিয়ায় সম্প্রতি অন্তত ২০ বার ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের খবর দিয়েছিল – এমনকি এই সব বোমা রাশিয়া বা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে তৈরি হয়ে থাকতে পারে, এমন হদিশও নাকি পেয়েছে এইচআরডাব্লিউ৷
রুশ বোমাবাজি কি সত্যিই যুদ্ধাপরাধ? না এটাও একটা রাজনীতি? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
যেভাবে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ধ্বংস করল তুরস্ক
রাশিয়ার একটি যু্দ্ধবিমান ভূপতিত৷ রাশিয়ার দাবি, বিমানটি সিরিয়ায় আইএস-এর ওপর বোমা বর্ষণ করছিল৷ তবে তুরস্ক বলেছে, তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করার কারণেই গুলি করে মাটিতে ফেলা হয়েছে বিমানটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Anadolu Agency
যেখানে পড়েছে বিমানটি
মঙ্গলবার তুরস্কের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, একটি যুদ্ধ বিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে তুরস্কে ঢুকে পড়ে৷ সতর্কতা সংকেত দেয়া সত্ত্বেও বিমানটি যাত্রাপথ বদলায়নি৷ ফলে বাধ্য হয়েই গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে বিমানটিকে৷ যুদ্ধ বিমানটি তুরস্কের সীমান্তবর্তী ‘তুর্কমেন পাহাড়’ নামে পরিচিত একটি এলাকায় ভূপতিত হয়৷
আকাশ থেকে মাটিতে পড়ছে রাশিয়ার বিমান
গুলির আঘাতে বিমান ভূপতিত হওয়ার ফুটেজ প্রথম দেখিয়েছে তুরস্কের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল হাবারটুর্ক৷ ওপরের ছবিটি সেই ফুটেজ থেকেই নেয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Anadolu Agency
তুরস্ক, নাকি আইএস?
তুরস্কের দেয়া প্রাথমিক তথ্যে ধ্বংস হওয়া বিমানটি কোন দেশের সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি৷ পরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিমানটি সে দেশের বলে নিশ্চিত করলেও তা তুরস্কের হামলায় ধ্বংস হয়েছে কিনা তা জানায়নি৷ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বিমানটি সিরিয়ায় বোমা ফেলছিল, তখন মাটি থেকে গুলি করে সেটিকে ভূপতিত করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Anadolu Agency
তুরস্কের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান
তুরস্কের আদানা শহরের বিমানঘাঁটি থেকে আকাশে উড়েছে এফ-১৬ যু্দ্ধ বিমান৷ ছবিটি গত জুলাইয়ে তোলা৷ তুরস্কের দাবি ঠিক হলে এমন একটি বিমানই রাশিয়ার সু-২৪ যুদ্ধবিমান ভূপতিত করেছে৷ রুশ যুদ্ধ বিমানে দুজন পাইলট ছিলেন৷ সিএনএন তুরস্ক জানিয়েছে, তারা প্যারাশুট ব্যবহার করে বিমান থেকে নেমে গেছেন৷ তবে একজনকে সিরীয় বিদ্রোহীরা আটক করেছে৷ অন্যজন এখনো নিখোঁজ৷ তাঁকে খোঁজা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/M.Sezer
প্রথম নয়, দ্বিতীয়....
তুরস্ক সীমান্তের কাছে গুলির আঘাতে বিমান ভূপাতিত হওয়ার সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১৬ই অক্টোবর৷ সেবার কিলিস প্রদেশের আকাশ থেকে একটি ড্রোন বিমানকে গুলি করে নামানো হয়৷