সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে রাশ টানতে সে দেশের আকাশে ‘নো ফ্লাই জোন' ঘোষণার ডাক শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুকাল ধরে৷ এবার ওয়াশিংটন ও মস্কো সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা আনতে এমন কিছু সুস্পষ্ট উদ্যোগ নিতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে অভিযান শেষ পর্যায়ে পৌঁছনোর পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা আনতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন৷
বিশেষ করে যে সব এলাকা থেকে আইএস উৎখাত হয়েছে, সেই শূন্যতা পূরণ করতে বিভিন্ন বিবাদমান গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে৷ এমন প্রেক্ষাপটে নতুন করে উত্তেজনা এড়াতে চায় ওয়াশিংটন৷ অবশ্যই রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই সব পদক্ষেপ কার্যকর করা সম্ভব হতে পারে৷ টিলারসন বলেন, স্থিতিশীলতা আনতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করলে সিরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বোঝাপড়ার ভিত্তি তৈরি হবে৷ অন্যান্য প্রশ্নে মতবিরোধ সত্ত্বেও সিরিয়ার ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন টিলারসন৷ তবে ভবিষ্যতে বাশার আল আসাদ প্রশাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেন নি তিনি৷
প্রথমত সিরিয়ার আকাশসীমার মধ্যে ‘নো ফ্লাই জোন' ঘোষণা করার প্রস্তাব কার্যকর করতে চায় ওয়াশিংটন৷ মার্কিন নেতৃত্বে কোয়ালিশন বাহিনী ও রাশিয়ার মদতপুষ্ট আসাদ প্রশাসনের স্বার্থের সংঘাতে এ পর্যন্ত বিমান হামলায় অনেক নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে৷ হামলার জন্য পরস্পরকে দোষারোপের ঘটনাও বিরল নয়৷ এই পরিস্থিতিতে আকাশে কোনো সামরিক বিমান না উড়লে পরিস্থিতি শান্ত থাকতে পারে৷
সিরিয়ায় বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করতে পর্যবেক্ষক মোতায়েনের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন৷ এ ক্ষেত্রেও এতকাল বিভ্রান্তি ও প্রচারণার ফলে অনেক বোঝাপড়া শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা সম্ভব হয় নি৷
সিরিয়া সংকট শুরু হবার পর থেকে সে দেশের বেসামরিক জনগণের জীবনযাত্রা অনেক এলাকায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে৷ জাতিসংঘ ও অন্যান্য সাহায্যকারী সংগঠন ত্রাণ সাহায্য পাঠাতে গিয়ে বার বার বাধার মুখে পড়েছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানবিক ত্রাণ সাহায্যের ক্ষেত্রেও রাশিয়ার সঙ্গে সমন্বয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন৷
জার্মানির হামবুর্গ শহরে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন-এর মধ্যে প্রথম আলোচনায় সিরিয়ার বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্ব পেতে চলেছে৷ তবে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে, সিরিয়ার প্রশ্নে অতীতেও ওয়াশিংটন মস্কোর উপর নির্ভর করে হতাশ হয়েছে৷ রাশিয়া আসাদ প্রশাসনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে শেষ পর্যন্ত নিজস্ব পথে এগিয়েছে৷
সিরিয়ায় ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা বন্ধ
সিরিয়ার দামেস্ক শহরের শিশু হাসপাতালে ক্যানসার ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা ওষুধ ও প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে শিশুদের চিকিৎসা দিতে পারছেন না৷ তবে এটা যে শুধুমাত্র সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে হচ্ছে, তা নয়৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
যুদ্ধাবস্থায় হাসপাতালের পরিস্থিতি
চিকিৎসা সেবায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে একসময় বেশ সুনাম ছিল সিরিয়ার৷ কিন্তু ছয় বছরের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে৷ অর্ধেকেরও কম হাসপাতাল ঠিকমত কাজ করছে দেশটিতে৷ দামেস্কের হাসপাতালগুলোতে প্রতি সপ্তাহেই ভিড় করছে কমপক্ষে ২০০ শিশু, যাদের ৭০ ভাগই আসছে রাজধানীর বাইরে থেকে৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
নিষেধাজ্ঞার কারণে ওষুধপত্র অপ্রতুল
দামেস্কের শিশু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে রোগীরা৷ স্থানীয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অভাবের কারণ হিসেবে সিরিয়ার ওপর পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করছে৷ কেননা বেশিরভাগ ওষুধপত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকেই আসতো সিরিয়ায়, যেগুলো তারা আর আসতে দিচ্ছে না দেশটিতে৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
ব্যয় কমিয়েছে সরকার
যুদ্ধ মানেই তা ব্যয়বহুল৷ আর এই ব্যয়ের কারণে সরকার স্বাস্থ্য খাতে বাজেট কমিয়েছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থের দাম পড়ে গেছে সিরিয়ায়৷ আর বিদেশি ওষুধ না পেয়ে রোগীরা দিন কাটাচ্ছে অসহায় অবস্থার মধ্যে৷ যুদ্ধ শুরুর আগে দেশে ব্যবহৃত ৯০ ভাগ ওষুধ নিজেরাই উৎপাদন করত সিরিয়া৷ তবে ক্যানসারের ওষুধগুলো বরাবরই আমদানি করতে হতো৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কম
একটি অসুস্থ শিশুর দেখভাল করছেন এক নার্স৷ সিরিয়ার অবস্থানরত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ২০১১ সালে যুদ্ধ শুরুর পর সিরীয় সরকার স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কমানোর কারণে বিদেশ থেকে ওষুধ আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
সিরিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি এলিজাবেথ হফ জানান, দেশটির উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্যানসারবিরোধী বিশেষ কিছু ওষুধ আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
চিকিৎসার জন্য রোগীদের অপেক্ষা
ক্যানসারের রোগী ফাহাদ মোবাইল ফোন নিয়ে খেলছে আর তার মা বসে আছেন বিছানায়৷ চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছেন এরা৷ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে বিদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে সিরিয়ায়৷ তাই ওষুধপত্র না থাকায় ঠিকমত চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
চিকিৎসায় বিলম্ব
বেসরকারি সংস্থা ‘বাসমা’ দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য ক্যানসারের ওষুধ কিনতে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে৷ সংস্থাটির নির্বাহী ব্যবস্থাপক রিমা সালেম বললেন, ‘‘যুদ্ধ শুরুর পর সাহায্যপ্রার্থী পরিবারের সংখ্যা ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ বেড়েছে৷’’ কিন্তু চিকিৎসা শুরু হতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ সময়৷ তাই উদ্বিগ্ন সালেম জানান, ‘‘চিকিৎসা দিতে দেরি হলে যে কোনো দিন মারা যেতে পারে যে কোনো শিশু৷’’