সিরিয়া সংকটে এখনকার আলোচিত শব্দ ‘আজাজ'৷ তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী শহরটি এখন সিরীয় বিদ্রোহীদের দখলে৷ সিরিয়ার সেনারা এর নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়৷ ওদিকে, তুরস্ক চায় না শহরটি কুর্দি সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাক৷
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি একটু জটিল৷ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্ক সীমান্ত শুরুর আগে একমাত্র আজাজ শহরটিই এখন বিদ্রোহীদের দখলে আছে৷ ফলে সিরিয়ার সেনাদের হামলা থেকে বাঁচতে অনেক সাধারণ জনগণ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে৷
এদিকে বিদ্রোহীদের হাতে থাকা এই শহরটির নিয়ন্ত্রণ পেতে আগ্রহী সিরীয় সেনাবাহিনী৷ সেই লক্ষ্যে রাশিয়ার সহায়তা নিয়ে সেখানে হামলা চালানো হচ্ছে৷ সোমবার সকালে শিশুদের একটি হাসপাতাল ও স্কুল সহ কয়েকটি স্থানে আকাশ থেকে বোমা ফেলা হয়েছে৷ প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার জেট বিমান থেকেই বোমাগুলো ফেলা হয়েছে৷ এতে ১৪ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন৷
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় কুর্দি সংগঠন ওয়াইপিজি-র সদস্যরাও আজাজ শহরের নিয়ন্ত্রণ পেতে চাইছে৷ কিন্তু তুরস্ক সেটা চাইছে না৷ কারণ ওয়াইপিজি সংগঠনটিতে তারা তাদের দ্বারা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা পিকেকে সংগঠনের সমর্থক মনে করে৷ পিকেকে গত তিন দশক ধরে তুরস্কের দক্ষিণপূর্বে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম চালাচ্ছে৷ তাই নিজেদের সীমান্তে ওয়াইপিজি শক্তিশালী হোক তুরস্ক সেটা চাইছে না৷ সেটা নিশ্চিত করতে গত তিনদিন ধরে সিরিয়ার কুর্দিদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে৷
তবে তুরস্ককে এই ধরণের হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি৷ এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জন কিরবির একটি মন্তব্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তুরস্ক৷ তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়তে তুরস্ক ও সিরিয়ার কুর্দিদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু তুরস্কের সেটি পছন্দ হয়নি৷ তুরস্ক আর সিরিয়ার কুর্দিদের একসঙ্গে ‘তুলনা' করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে৷ তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তানজু বিলজিচ সোমবার এ কথা জানান৷ এছাড়া ‘কোনো জঙ্গি সংগঠন'-এর বিরুদ্ধে লড়তে তুরস্ক কারও অনুমতি চাইবে না বলেও জানান তিনি৷
জেডএইচ/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)
তুরস্ক-রাশিয়া সংঘাত কোন পথে?
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংগ্রামের উপর কালো ছায়া ফেলেছে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান বিবাদ৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা দুই পক্ষের উদ্দেশ্যে উত্তেজনা মিটিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Kudryavtsev
তুরস্ক আইএস-এর কাছে তেল কিনছে?
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন দাবি করেছেন, তুরস্ক সরাসরি তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর কাছ থেকে চোরাই পেট্রোলিয়াম কিনছে৷ জবাবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান পুটিন-এর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, এই অভিযোগ প্রমাণ হলে তিনি পদত্যাগ করবেন, অন্যথায় পুটিনকে পদত্যাগ করতে হবে৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
সুদিন কি ফিরে আসবে?
তুরস্ক ও রাশিয়ার সম্পর্ক নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্তও মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল৷ আন্টালিয়া শহরে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে এর্দোয়ান ও পুটিন সহাস্যে করমর্দন করেছেন৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
রাশিয়া-তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনার সূত্রপাত
২৪শে নভেম্বর (২০১৫) তুরস্কের সেনাবাহিনী সিরিয়া সীমান্তের কাছে রুশ বিমানবাহিনীর একটি বিমান ভূপতিত করে৷ তুরস্কের দাবি, বিমানটি আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল এবং একাধিক বার সতর্ক করা সত্ত্বেও গতিপথ বদলায়নি৷ রাশিয়া অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে৷
ছবি: Reuters/S. Zhumatov
রাশিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া
২৫শে নভেম্বর (২০১৫) মস্কোয় তুরস্কের দূতাবাসের সামনে বিশাল প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা যায়৷ রাশিয়া তুরস্কের উপর একাধিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তুর্কি নাগরিকদের আবার রাশিয়ায় প্রবেশ করতে ভিসা লাগবে৷ তুরস্কে রুশ পর্যটকদের ঢলও আর নামবে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Kudryavtsev
ন্তির প্রচেষ্টা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তুরস্ক ও রাশিয়ার উদ্দেশ্যে কূটনৈতিক বিবাদ মিটিয়ে আইএস বা আইসিস দমন অভিযানে মনোযোগ দেবার আহ্বান জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Watson
পিছু হঠছেন এর্দোয়ান?
এর্দোয়ান-ও বলেছেন, তিনি রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা এড়িয়ে চলতে চান৷ সিরিয়া সংকট সমাধানে তিনি রাজনৈতিক সমাধানসূত্রের উপর জোর দিয়েছেন৷ তবে তুরস্ক ক্ষমা না চাইলে পুটিন-এর মন গলবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷