সিরিয়ায় ‘মডারেট' হিসেবে পরিচিত এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ক্যামেরার সামনে এক শিশুকে জবাইয়ের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এই ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS
বিজ্ঞাপন
যে গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শিশু জবাইয়ের অভিযোগ উঠেছে তার নাম দ্য নুর আল-জিন্কি মুভমেন্ট৷ এই গোষ্ঠী বুধবার জানিয়েছে, তারা বিষয়টির তদন্ত করছে৷ এই গোষ্ঠীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে থাকে৷
তথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট' এর মতোই নৃশংসভাবে ক্যামেরার সামনে শিশুটিকে জবাই করা হয়৷ প্রথমে একটি ট্রাকের পেছনে তাকে নিয়ে গিয়ে উপহাস করা হয়৷ এরপর এক যোদ্ধা চাকু দিয়ে শিশুটির শিরচ্ছেদ করে৷
ভিডিওতে এক পর্যায়ে দেখা যায়, শিশুটিকে বন্দি করা যোদ্ধারা তাকে সিরিয়া সরকারের পক্ষে লড়ছে বলে দাবি করে৷ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর এক যোদ্ধাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কুডস ব্রিগেডের এক বন্দি এই শিশুটি৷ তাদের আর কোনো পুরুষ অবশিষ্ট নেই, তাই আজ শিশুদের পাঠিয়েছে৷''
এরপর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, ‘‘এগুলো তোমার কুকুর, বাশার, কুডস ব্রিগেডের শিশুরা৷''
পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, শিশুটিকে হত্যা করা যোদ্ধারা বিদ্রোহী গোষ্ঠী দ্য নুর আল-জিন্কি মুভমেন্টের সদস্য৷ মানবাধিকার সংস্থাটি হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে ‘ব্যক্তিগত ভুল' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এই ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করেছেনছবি: Reuters/J. Roberts
নিহত শিশুটির সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি৷ তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাক্টিভিস্টরা শিশুটির নাম মাহমুদ ইসা এবং বয়স ১২ বছর বলে দাবি করেছে৷ আর কুডস ব্রিগেড দাবি করেছে, শিশুটি তাদের গ্রুপের সদস্য ছিল না, বরং সে ‘অসুস্থ' ছিল৷
ইন্টারনেটে শিশুটিকে জবাই করার ভিডিও প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এটির নিন্দা জানায়৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ কয়েকটি সংগঠন জানিয়েছে, এই ভিডিও প্রমাণ করছে সিরিয়ার বিদ্রোহী বা বিরোধী দলগুলোও পাশবিক বিভিন্ন ঘটনা ঘটাচ্ছে৷
পিছু হটছে ‘ইসলামিক স্টেট'
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আলোচিত ভিডিওটিকে ‘আতঙ্কজনক' আখ্যা দিয়েছেন৷ বুধবার ইরাকে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেন তিনি৷ সেখানে কেরি জানান, ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর সহযোগীরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে, অনেক স্থান থেকে আইএসকে হটিয়ে দেয়া গেছে৷
তবে তিনি এটাও জানিয়েছেন যে, আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পর সম্প্রতি যেসব স্থান দখল করা গেছে, সেসব স্থানে শান্তি বজায় রাখতে যুদ্ধরত গোষ্ঠীগুলোর আরো সহায়তা প্রয়োজন৷
সিরিয়া যুদ্ধে বাস্তুহারাদের সহায়তায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷