সিরিয়ায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে৷ সেখানকার সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নীতির পরিবর্তন চান মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৫১ জন কর্মকর্তা৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন দৈনিক ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল' বলছে, মার্কিন ঐ কর্মকর্তারা একটি স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন৷ তাঁরা সিরিয়ায় সামরিক হামলা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন৷ মার্কিন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে সিরিয়ায় যে যুদ্ধবিরতি চলছে তা বারবার লঙ্ঘন করছে সিরিয়ার সরকার৷
নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করা কর্মকর্তারা প্রায় সবাই মধ্যম স্তরের এবং তাঁরা সিরিয়া নীতি নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে কাজ করছেন৷
স্মারকলিপির বিষয়ে মার্কিন এক কর্মকর্তা, যিনি সেটিতে স্বাক্ষর করেননি, রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক অভিযানের বিরোধী হোয়াইট হাউস৷ এই স্মারকলিপি সেই সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আনবে বলে তিনি মনে করেন না৷
মেয়ের ক্যানভাসে যুদ্ধের বিভীষিকা
প্রতিদিন সিরিয়া ছাড়ছে অসখ্য মানুষ৷ আশ্রয় খোঁজা মানুষদের মধ্যে আছে শিশুরা, যারা যুদ্ধের বিভীষিকা নিজের চোখে দেখেছে৷ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা করা তেমনই এক মেয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
বাড়িটা যেমন ছিল
সিরিয়ার এক শরণার্থী মেয়ে কলম আর কাগজ বেছে নিয়েছে তার জীবনের গল্প বলতে৷ এই ছবির ক্যাপশনে সে লিখেছে, ‘‘এটা সিরিয়া, মৃত্যু দূত৷ সিরিয়ার রক্ত ঝড়ছে৷’’ মেয়েটির আঁকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে ট্যাঙ্ক থেকে একটি শহরের দিকে গোলা ছোড়া হচ্ছে৷ একইসঙ্গে আকাশ পথে চলছে হামলা৷ ফলে বাড়িগুলো আগুনে পুড়ে যাচ্ছে আর একটি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে একজন তা দেখছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
মৃত্যু এবং হতাশা
‘‘এটা আমার বাবা, মা এবং পরিবারের - এবং সিরিয়ার সকল পরিবারের কবর,’’ মেয়েটা লিখেছে৷ তার কথায়, ‘‘সিরিয়ার শিশুদের অবস্থা এমন৷’’ তার হাতে থাকা ছবিটিতে তিনটি কবর এবং শুয়ে থাকা কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
শিশুরা মারা যাচ্ছে
এখানে এজিয়ান সাগরে ডুবে প্রাণ হারানো আয়লান কুর্দির মরদেহ আঁকার চেষ্টা করেছে মেয়েটি৷ তার মৃত্যু গোটা ইউরোপকে নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে শিশুদের চরম দুর্দশা ফুটে উঠেছিল কুর্দির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘এটা সিরিয়ার মানুষের আসল ট্রাজেডি’
যুদ্ধ থেকে বাঁচতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে৷ অনেক শিশু হারিয়েছে তাদের অভিভাবক৷ অবৈধ পথে সিরিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা খুবই বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
থমকে যাওয়া জীবন
গ্রিসের ইডোমেনি শরণার্থী শিবিরে কিছু শিশু ছিল যারা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার আশায় ছিল৷ তাদের বাবা-মা সীমান্ত বন্ধ হওয়ার আগেই ইউরোপে প্রবেশে সক্ষম হয়েছিল৷ কিন্তু বাকিদের আশা ধীরে ধীরে ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর হচ্ছে৷ ছবির ক্যাপশন, ‘‘শিশুদের সব আশা, স্বপ্ন এখন ময়লার বাক্সের মধ্যে আছে৷’’
ছবি: DW/M.Karakoulaki
হারানো স্বপ্ন
‘‘শিশুদের ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন হারিয়ে গেছে-’’ লিখেছে মেয়েটি৷ তার কথায়, শরণার্থী শিবিরে থাকা অনেক শিশু ইউরোপে শান্তিতে থাকার স্বপ্ন দেখেছিল৷ কিন্তু তারা বুঝতে পেরেছে, সেই স্বপ্ন শীঘ্রই বাস্তব হওয়ার আশা নেই৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘তাদের বুঝতে হবে যে তারা শিশু’
দশ বছর বয়সি এই শিশুটির মতো আরো অনেক শিশু ইডোমেনি ক্যাম্পে রয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, শরণার্থী শিবিরে শিশুদের দিকে আলাদাভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে না৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
7 ছবি1 | 7
ভিন্নমত জানিয়ে এমন স্মারকলিপি দেয়ার বিষয়টি আগেও হয়েছে৷ তবে এবার তাতে যে সংখ্যক কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেছেন সেটি অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন রবার্ট ফোর্ড৷ মার্কিন প্রশাসনের সিরিয়া নীতির বিরোধিতা করে ২০১৪ সালে তিনি সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের পদ থেকে পদত্যাগ করেন৷
মার্কিন সমর্থিত বিদ্রোহীদের উপর রাশিয়ার হামলা
সিরিয়ার আল-তানফ শহরে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইরত সিরীয় বিদ্রোহীদের উপর রাশিয়া আকাশ থেকে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা৷ এই বিদ্রোহীদের নানাভাবে সাহায্য করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে কতজন বিদ্রোহী হামলার শিকার হয়েছেন, হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা তা বিস্তারিত জানাননি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ কর্মকর্তা৷
রুশ সৈন্যের মৃত্যু
সিরিয়ার কর্মরত রুশ এক সেনা প্রাণ হারিয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়৷ গত মাসে সিরিয়ায় অভিযান চলার সময় নিহত ঐ সেনা যে গাড়িতে ছিলেন সেটিতে গুলি চালানো হলে তিনি আহত হন৷ এরপর তাঁকে মস্কোয় ফিরিয়ে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল৷ কিন্তু বাঁচানো যায়নি৷ এ নিয়ে সিরিয়ার অভিযানে অংশ নেয়া মোট ১০ জন রুশ সৈন্য প্রাণ হারালেন৷ এর মধ্যে নয়জন যুদ্ধে নিহত হন৷ বাকি একজন আত্মহত্যা করেন৷
উল্লেখ্য, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় দুই লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ৷ আর গৃহহীন হয়েছেন লক্ষ লক্ষ জন৷
জেডএইচ/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)
যুদ্ধে নারী, নারী যোদ্ধা
২০১৪ সালের গ্রীষ্মে ইসলামিক স্টেট উত্তর ইরাকের ইয়াজিদি এলাকাগুলি দখল করে৷ হাজার হাজার ইয়াজিদি মহিলা ও কিশোরীকে ধরে নিয়ে গিয়ে দাসী হিসেবে রাখা হয় ও ধর্ষণ করা হয়৷ আজ সেই ইয়াজিদি নারীরাই সন্ত্রাসবাদিদের বিরুদ্ধে লড়ছেন৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
শত্রুর খোঁজ
শত্রু বাইরে কোথাও - কুর্দি নারী যোদ্ধা হাসেবা নৌজাদ ইরাকের মোসুল শহরের কাছে চোখে দুরবিন লাগিয়ে ‘ফ্রন্ট লাইন’ পরখ করে দেখছেন৷ কুর্দ এলাকা ও আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার মধ্যে সীমারেখা হলো এই ফ্রন্ট৷ কুর্দিরা ইরাকি সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় ক্রমেই আরো এগিয়ে যাচ্ছে, পিছু হটছে ইসলামিক স্টেট৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
গুপ্তপ্রতিরোধের ভ্যানগার্ড
শত্রু নজরে পড়েছে, এবার তাদের দিকে গুলি চালানো হবে৷ হাসেবা নৌজাদ দেখাচ্ছেন কোনদিকে; আসেমা দাহির (ডান দিক থেকে তৃতীয়) ও অন্যান্য ইয়াজিদি নারী যোদ্ধারা নিশানা ঠিক করছেন৷ শুধুমাত্র বিমান থেকে আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে লাভ নেই৷ তাই ইয়াজিদি আর কুর্দ মহিলাদের নিয়ে রণক্ষেত্রে এই ভ্যানগার্ড তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
সুন্দর দেখানোর জন্য নয়
বন্দুক নিয়ে ঠিকমতো নিশানা করার জন্য মাথার চুল কপালে বা চোখে পড়লে চলবে না৷ তাই চুল টান টান করে বেঁধে নেন হাসেবা নৌজাদ, ‘মিলিটারি লুক’ ফ্যাশনের জন্য নয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
লাকি চার্ম
যুদ্ধের ফাঁকে আসেমা দাহির৷ হাতে যে লাল রঙের টেডি বেয়ারটি রয়েছে, সেটা হয়তো অতীতের সেই সুন্দর, শান্তিপূর্ণ দিনগুলির প্রতীক, যখন আইএস ইয়াজিদিদের স্বদেশকে দখল করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে সেই শান্তি শেষ হয়ে যায়, শুরু হয় আইএস-এর সন্ত্রাস৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
পালানো ছাড়া পথ ছিল না
শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ, আইএস কাউকে ক্ষমা করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে লক্ষ লক্ষ ইয়াজিদি বাস্তু ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন, তাদের পিছনে আইএস৷ এক বৃদ্ধ ও দুই তরুণীর এই ছবিটি যেন বিশ্বের সামনে ইয়াজিদিদের যন্ত্রণাকে তুলে ধরে৷
ছবি: Reuters
বিভীষিকা
এই ইয়াজিদি কিশোরী ক্যামেরার সামনে তার মুখ দেখাতে চায় না৷ ২০১৪ সালে এই ১৫ বছর বয়সের মেয়েটিকে ধরে নিয়ে গিয়ে একজন আইএস যোদ্ধার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ তার দু’মাস পরে মেয়েটি পালাতে সমর্থ হয়৷ আজ সে আবার নিজের পরিবারের সঙ্গেই বাস করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Bennett
ধ্বংসস্তূপ
উত্তর সিরিয়ার কোবানি শহরটি তুর্কি সীমান্তের অদূরে৷ আইএস যোদ্ধারা মাসের পর মাস শহরটি অবরুদ্ধ করে রেখেছিল৷ কুর্দিরা সব কিছুর পরও প্রতিরোধ চালিয়ে যায় ও শেষমেশ মার্কিন বিমানবাহিনীর সাহায্যে সন্ত্রাসবাদীদের পরাজিত করতে সমর্থ হয়৷ পড়ে থাকে একটি শহর নয়, যেন শহরের ধ্বংসস্তূপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Akgul
সবে মিলে করি কাজ
যারা আইএস-এর আদর্শে বিশ্বাস করে না, আইএস-এর দৃষ্টিতে তারা সবাই শত্রু৷ বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করাই হলো আইএস-এর উদ্দেশ্য৷ সে উদ্দেশ্য সর্বক্ষেত্রে সফল হয় না৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, এক অর্থে তা আইএস-এর প্রতীকী পরাজয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
স্বাধীনতার সড়ক
শুধু অস্ত্র দিয়ে আইএস-কে হারানো যাবে না৷ সিরিয়া আর ইরাকের অনেক এলাকা এখনও আইএস-এর নিয়ন্ত্রণে৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েরাও তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবে৷ তাদের প্রতিরোধের আর একটি শিক্ষা হলো, মেয়েরা পুরুষের দাস নয় - সন্ত্রাসবাদিদের যা কাজে লাগার কথা!