সিরিয়ায় তিনশ'র বেশি কারখানা শ্রমিক নিখোঁজ৷ ইসলামিক স্টেট তাদের অপহরণ করেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের এক জেনারেল বলেছেন, লিবিয়ায় আইএস যোদ্ধা দ্বিগুন হয়েছে৷ জার্মানি ও ডেনমার্কে গ্রেপ্তার হয়েছে ৬ আইএস ‘জঙ্গি'৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়া, লিবিয়া, জার্মানি, ডেনমার্ক ও ক্যানাডার সংবাদমাধ্যমে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-কে নিয়ে পাঁচটি খবর এসেছে৷ সবচেয়ে বড় খবর, লিবিয়ার ডুনমেইরের একটি সিমেন্ট কারখানার তিনশ'রও বেশি শ্রমিকের একসঙ্গে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া৷ বৃহস্পতিবার থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানায়৷ আশঙ্কা করা হচ্ছে, সিমেন্ট কারখানাটির এই শ্রমিকদের হয়ত আইএস অপহরণ করেছে৷
গত কয়েকমাস ধরে সিরিয়ায় বেশ কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে আইএস৷ মার্চের শেষদিকে পালমিরা নগর থেকে আইএস-কে হঠিয়ে দেয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনী৷
জার্মানির মিউনিখে আইএস জঙ্গি সন্দেহে দু'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার শহরের ফ্যুরস্টেনফেল্ডব্রুক এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ গ্রেপ্তারকৃতদের একজন নাইজেরীয় এবং অন্যজন ইরাকি৷ মিউনিখে তারা বড় রকমের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিলেন বলে পুলিশের আশঙ্কা৷
ওদিকে ডেনমার্কের পুলিশও আইএস জঙ্গি সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে৷ রাজধানী কোপেনহেগেনের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ওই চারজন সে দেশের সন্ত্রাস দমন আইন লঙ্ঘনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন- এই সন্দেহে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গ্রেপ্তার অভিযানে কিছু অস্ত্রও উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
ক্যানাডাতে ১৬ বছর বয়সি এক কিশোরের আইএস-এ যোগ দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে দু বছরের কারাদণ্ড হয়েছে৷ কথিত এ কিশোরকে তার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ছেলের কাছে একটি ব্যাগে মুখোশ, ছুরিসহ বেশ কিছু সন্দেহজনক জিনিস দেখে বিষয়টি তিনি পুলিশকে জানান৷ কিশোরটি জানিয়েছে, সে একটি দোকানে ডাকাতি করতে চেয়েছিল৷ তবে ডাকাতির টাকা আইএস-কে দেয়া বা আইএস-এ যোগ দেয়ার পরিকল্পনার অভিযোগ সে অস্বীকার করেছে৷
লিবিয়ায় গত এক বছরে আইএস যোদ্ধার সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল ডেভিড রডরিগুয়েজ৷ বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, গত এক বছরে লিবিয়ায় আইএস যোদ্ধার সংখ্যা ৬ হাজার-এ পৌঁছেছে৷
এসিবি/ জেডএইচ (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷