সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবার জয়ী আসাদ। এই নিয়ে চতুর্থবার। তবে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন অ্যামেরিকা, ইইউ-র।
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকার বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিলেন, বাশার আল-আসাদ আবার জয়ী। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৭৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল। তার মধ্যে ৯৫ দশমিক এক শতাংশ ভোট আসাদ পেয়েছেন।
সিরিয়া সরকারের মুখপাত্র বলেছেন, সিরীয়রা তাদের প্রেসিডেন্টকে বেছে নিয়েছেন। আসাদ সিরিয়ান আরব রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।
এই বিপুল জয়ের ফলে আসাদ আরো সাত বছর সিরিয়া শাসনের অধিকার পেলেন। আসাদ সরকারের দাবি, এই নির্বাচনই দেখিয়ে দিল, এক দশক পুরনো সংঘাত সত্ত্বেও সিরিয়ার মানুষ স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছেন। এই সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছেন। দেশের অর্ধেক মানুষ তাদের বাসস্থান ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
অ্যামেরিকা, ইইউ-র প্রশ্ন
অ্যামেরিকা ও ইইউ এই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, জাতিসংঘের প্রস্তাব মানা হয়নি। নির্বাচনে আন্তর্জাতিক তদারকির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। যেখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সেখানেই মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন। কিন্তু সিরিয়ায় লড়াইয়ের ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে চলে গিয়েছেন, তারা ভোটে অংশ নেননি বা নিতে চাননি।
সিরিয়ায় নির্বাচন : পশ্চিমাদের সমালোচনা, আসাদের তাচ্ছিল্য
নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইটালির মন্তব্য, ‘‘এ নির্বাচন স্বচ্ছ নয়, সবার জন্য উন্মুক্তও নয়৷’’ এর প্রতিক্রিয়ায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বলেন, ‘‘আপনাদের মতামতের সামান্য গুরুত্বও নেই৷’’ ছবিতে দুমার এক ভোটকেন্দ্রে আসাদ ও তার স্ত্রী আসমার ভোট দেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: SANA/REUTERS
বিরোধীদের বিক্ষোভ
শুধু প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এমন সব অঞ্চলে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণে আয়োজনের দাবি জানিয়েছিল জাতিসংঘ৷ আসাদ সরকার তা মানেনি৷ সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের বাইরে বুধবার আসাদ ও নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন বিরোধীরা৷ ওপরে ইডলিবের এক বিক্ষোভ সমাবেশের ছবি৷
ছবি: Khalil Ashawi/REUTERS
আসাদ আরো সাত বছর?
আসাদের বাবা হাফেজ-আল-আসাদ ৩০ বছর সিরিয়া শাসন করেন৷ ২০০০ সালে তিনি মারা গেলে শুরু হয় আসাদ-পর্ব৷ আগের তিন নির্বাচনের সর্বশেষটি হয়েছিল ২০১৪ সালে৷ অনেক প্রার্থী অংশ নিলেও সেবার ৮৮ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ আসাদ৷ এবারের নির্বাচনেও তার জয় অবশ্যম্ভাবী বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ছবিতে ড্রোনের সহায়তায় পতাকা উড়িয়ে আসাদ-বিরোধী প্রার্থীর অভিনব প্রচার৷
ছবি: Khalil Ashawi/REUTERS
ভোট গণনা
ভোটগ্রহণ শেষে গণনা শুরু করতে দেখা যাচ্ছে নির্বাচন-কর্মীদের৷ শুক্রবার সিরিয়ার সময় সন্ধ্যে নাগাদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করার কথা৷
ছবি: Omar Sanadiki/REUTERS
জার্মানিতে বিক্ষোভ
সিরিয়া যুদ্ধ শুরুর পর জার্মানিতে আশ্রয় নেয়া সিরীয়দের একটি অংশ বার্লিনে আসাদ এবং তার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানরত নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন৷ সমাবেশে তার নিখোঁজ বাবার ছবি নিয়ে অংশ নেন ওয়াফা মুস্তাফা৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘আসাদ যতদিন ক্ষমতায় আছেন, ততদিন আমার বাবাসহ এক লাখ ৩০ হাজার জনকে জোর করে কারাগারে রাখা হবে৷’’
ছবি: Annegret Hilse/REUTERS
প্রবাসী সিরীয়দের ভোট দেয়া-না দেয়া
‘বৈধভাবে’ যারা সিরিয়া ছেড়েছিলেন, তাদের বিদেশ থেকেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়েছে বাশার আল আসাদ সরকার৷ অনেক দেশে অবস্থানরত সিরীয়রা পাসপোর্টে সিরিয়া ছাড়ার সিল দেখিয়ে ভোট দিতে পারলেও জার্মানি, তুরস্কসহ বাশার আল আসাদ-বিরোধী সাতটি দেশ কাউকেই এ নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়নি৷ ছবিতে দামেস্কে বাসে চড়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দৃশ্য৷
ছবি: Yamam al Shaar/Reuters
তাদের কাছে নির্বাচন বড় আনন্দের
বুধবার ভোটারদের মাঝে স্বতস্ফূর্ত আনন্দও দেখা গেছে৷ ছবিতে ভোট দেয়ার পর দুই তরুণীর প্রাণখোলা হাসির সেল্ফি তোলার মুহূর্ত৷
ছবি: Yamam al Shaar/REUTERS
শ্লোগানমুখর ভোটকেন্দ্র
দামেস্কের এক ভোটকেন্দ্রের বাইরের ছবি৷ নিজেদের প্রার্থীর সমর্থনে শ্লোগান দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: Omar Sanadiki/REUTERS
সমর্থকদের মাঝে আাসাদ
দুমার ভোটকেন্দ্রের বাইর এক সমর্থকের সঙ্গে কথা বলছেন বাশার আল আসাদ৷ পাশে তার ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত স্ত্রী আসমা৷
ছবি: SANA/REUTERS
নিরাপত্তা
যুদ্ধের কারণে সিরিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষ দেশ ছেড়েছে৷ যুদ্ধে নিহত হয়েছে তিন লাখ ৮৮ হাজার মানুষ৷ নির্বাচনের দিনেও দেশজুড়ে ছিল কড়া নিরাপত্তা৷ দামেস্কের ছবি৷
ছবি: Omar Sanadiki/REUTERS
আসাদের প্রতিদ্বন্দ্বী
দামেস্কে ভোট দিচ্ছেন বিরোধী প্রার্থী মাহমুদ মারেই৷ এছাড়া সাবেক মন্ত্রী আব্দাল্লাহ সালুম আব্দাল্লাহ-ও ভোটের এ লড়াইয়ে অংশ নেন৷
ছবি: Omar Sanadiki/REUTERS
নারীদের অংশগ্রহণ
নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো৷ ছবিতে দামেস্কে এক নারীর ভোট দেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: Yamam al Shaar/REUTERS
12 ছবি1 | 12
অ্যামেরিকা ও ইউ-র কর্মকর্তাদের মতে, মাত্র তিনজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পেরেছেন। প্রায় ৪৮ জন প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র পেশ করেছিলেন, কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। আসাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন তারই সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ সালুম আবদুল্লাহ এবং সরকার স্বীকৃত বিরোধী গোষ্ঠাীর নেতা মাহমুদ আহমেদ। ফলে এই বিরোধিতা ছিল অনেকটাই প্রতীকী।
আসাদ অবশ্য এই সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ''এই সব কথার কোনো গুরুত্ব নেই।''