সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া৷ সোমবারই এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ তিনি জানান, সিরিয়ায় সৈন্য পাঠানোর লক্ষ্য পূরণ হওয়ার কারণেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
এখনি অবশ্য সিরিয়া থেকে সব সৈন্য ফিরিয়ে নেবে না রাশিয়া৷ যে দু'টি ঘাঁটি থেকে রাশিয়ার সৈন্যরা ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে বিমান হামলা পরিচালনা করছে, সেই দু'টি ঘাঁটির সৈন্যরা থাকবে৷ তবে তারপরও ভ্লাদিমির পুটিনের বেশির ভাগ রুশ সৈন্য সিরিয়া থেকে ফিরিয়ে নেয়ার আকস্মিক এই সিদ্ধান্ত সিরিয়া যুদ্ধ অবসানের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
সোমবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শয়গু-কে পুটিন জানান যে, তিনি সিরিয়া থেকে অনতিবিলম্বে বেশির ভাগ সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি৷
সোমবার প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে পুটিন বলেন, ‘‘(সিরিয়ায়) আমাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সশস্ত্র বাহিনীর যে লক্ষ্য ছিল তা সার্বিকভাবে পূরণ হওয়ার কারণে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে আমি এ নির্দেশ দিয়েছি৷ সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার আগামী কাল থেকেই শুরু করতে বলেছি আমি৷''
পুটিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার, অর্থাৎ আজ খেকেই রুশ সৈন্যদের বড় একটা অংশ সিরিয়া ছাড়তে শুরু করলো৷
এদিকে এক বিবৃতির মাধ্যমে সিরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করলেও ‘সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে' রাশিয়া সিরিয়ার পাশে থাকবে৷ সৈন্য প্রত্যাহার শুরুর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রাশিয়া সরকার এ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়৷
সিরিয়ায় রুশ সৈন্য যাওয়ার পর তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস পিছু হঠতে বাধ্য হয়৷ রুশ সৈন্যদের সহায়তায় বেশ কয়েকটি এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনী৷
রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণার দিনেই সিরিয়া সংকটের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে৷ পাঁচ বছরে অনেক প্রাণহানির পাশাপাশি অন্তত ৪৮ লাখ সিরীয় নাগরিক দেশছাড়া হলেও এখনো সংকট নিরসন হয়নি৷
সোমবার থেকে শুরু হয়েছে শান্তি স্থাপনের আরেকটি উদ্যোগ৷ জেনেভায় শুরু হয়েছে শান্তি আলোচনা৷ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তাঁর সরকারবিরোধী জোটের প্রতিনিধিরা এ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন৷
ভালোবাসার জয় দেখালো সিরীয় যুগল
তাদের শহরে চলছে অনবরত বোমা বর্ষণ৷ তা সত্ত্বেও হোমসের এক জুটি হারতে মানতে রাজি হয়নি৷ বার্তা সংস্থা এএফপি-র আলোকচিত্রির তোলা তাদের কিছু দুর্লভ ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
‘সিরিয়াকে পুর্ননির্মাণ করছে ভালোবাসা’
জাফর মেরাই তোলা ছবিগুলোর চারপাশে চমৎকার কোনো স্থাপনা নেই, নেই সবুজ প্রকৃতির ছোয়া৷ বরং সেগুলো ঘিরে আছে যুদ্ধের বিভীষিকা৷ এসব ছবি মাসখানেক আগে তোলা৷ কিছু ছবি তিনি নিজেই ফেসবুকে দিয়েছেন, কিছু প্রকাশ করেছে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি৷ শিরোনাম, ‘সিরিয়াকে পুর্ননির্মাণ করছে ভালোবাসা’৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
ধ্বংসাবশেষের মধ্যে জীবন এবং ভালোবাসা
১৮-বছর বয়সি নাদা মেহরি এবং ২৭ বছর বয়সি হাসান ইউসুফ তাঁদের বিয়ের ছবি তোলার জন্য বেছে নিয়েছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত হোমসের কিছু স্থান৷ আর মেরাই ছবির মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছেন ‘জীবন মৃত্যুর চেয়ে শক্তিশালী’৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
চারিদিকে যুদ্ধে বিভীষিকা
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে মৃতের সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি, তাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক৷ দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমস মূলত আক্রান্ত হয়েছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত সেনাদের দ্বারা৷ কেননা, ২০১২ সালে আসাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল যেসব শহরে, তার একটি হোমস৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
সাদা পোশাক, ধূসর পাথরকুঁচি
একসময়ের সমৃদ্ধ শহরটির মাঝখানে বিয়ের সাদা পোশাকে দাঁড়িয়ে আছেন নাদা, তাঁর হবু স্বামী যুদ্ধের পোশাকে৷ যুদ্ধবিগ্রহের মাঝের সিরিয়ার তরুণ জুটিদের অবস্থা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ছবিতে৷ পেছনে দেখা যাচ্ছে গোলার আঘাতে জর্জরিত বিভিন্ন ভবন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
অনবরত হামলা
হোমসে এখনো নিয়মিত হামলা চালানো হচ্ছে৷ গত ২৬ জানুয়ারি এক আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ২২ জন, আহত শতাধিক৷ সেই হামলার দায় অবশ্য স্বীকার করেছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
হোমস একা নয়
গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো আসাদের বাহিনীর পক্ষ নিয়ে সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে বিমান হামলা চালাচ্ছে৷ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশটির রাজধানী দামেস্ক থেকে ১৭০ মাইল দূরে একটি হাসপাতালে রাশিয়ার বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে নয় ব্যক্তি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
আন্তর্জাতিক সমালোচনা
ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আসাদ জানিয়েছেন যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন৷ তবে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আডেল আল-জুবের এক জার্মান পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ‘‘ভবিষ্যতে বাশার আল-আসাদ বলে কেউ থাকবে না৷....সিরিয়ার দায়িত্ব আর তাঁর কাঁধে থাকবে না৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের মূল বিষয়
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ছিল সদ্য সমাপ্ত মিউনিখ সম্মেলনে অন্যতম আলোচনার বিষয়৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সেই সম্মেলনে বলেন, আমাদের মতে, রাশিয়া অধিকাংশ হামলা চালাচ্ছে সিরিয়ার আইনসম্মত বিরোধী গোষ্ঠীর উপরে৷ রাশিয়া অবশ্য দাবি করছে, জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে দমনে বিমান হামলা চালাচ্ছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
যুদ্ধের সময় ভালোবাসা
কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী মেরাই-এর ছবিতে আবেগপূর্ণ মন্তব্য করেছেন৷ একজন লিখেছেন, ‘নিজেকে ছবির বরের মতো মনে হচ্ছে৷’ আরেকজন লিখেছেন, ‘সৃষ্টিকর্তা আপনার এবং সিরিয়ার সব মানুষের সহায় হোন৷ এ সব ছবি গোটা বিশ্বের সঙ্গে শেয়ার করায় ধন্যবাদ৷’
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
জীবন বয়ে যাওয়ার প্রমাণ
মেরাই-এর ছবিগুলো ফেসবুকে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে৷ অনেকে সেসব ছবি দিয়ে গ্যালারি, এমনকি ভিডিও তৈরি করেছেন৷ একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘‘মেরাই-এর ছবিগুলো প্রমাণ করছে যুদ্ধের মাঝেও মানুষের জীবন থেমে নেই, একরকম কেটে যাচ্ছে৷’’