আলেপ্পোয় বিমান হামলা বন্ধ করে সেখানে মানবিক সাহায্য পাঠাতে সহায়তা করার জন্য রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ছে৷ যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং তুরস্ক মনে করে সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতির প্রয়াস সফল করতে রাশিয়ার বিশেষভাবে উদ্যোগী হওযা উচিত৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, যুদ্ধবিরতি সম্ভব করার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে যে আলোচনাটা চলছে তা মূলত রাশিয়ার কারনেই সফল হচ্ছে না৷ কেরি মনে করেন, রাশিয়া যখন আলেপ্পোয় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা খুব একটা অর্থবহ হয় না৷ বৃহস্পতিবারই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভের সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁর৷ বৈঠক শেষে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কেরি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় আমরা এই আলোচনা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কাছাকাছি এসে গেছি, কেননা, এখন যে হারে বোমা হামলা চলছে, তারপর বসে বসে বিষয়টি নিয়ে গভীর মনযোগ দিয়ে আলোচনার চেষ্টা করা অনেকটা বিচারবুদ্ধিরহিত কাজ বলে মনে হয়৷ '' আলোচনায় রাশিয়াকে যথেষ্ট আন্তরিক বলে মনে হয়নি তাঁর৷
এদিকে বৃহস্পতিবার জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সিরিয়া প্রসঙ্গে বারাক ওবামা, রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান এবং ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ কথোপকথনে ম্যার্কেল এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা আলেপ্পোয় রাশিয়ার বিমান থেকে বোমা হামলাকে ‘বর্বরোচিত' আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছেন৷ জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ নেতা মনে করেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করায় রাশিয়া ও সিরিয়া সরকারের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে৷ তাঁরা আরো মনে করেন, দুই দেশ যথাযথ ভূমিকা পালন করলে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে জাতিসংঘের উদ্যোগে আলেপ্পোয় মানবিক সাহায্য পাঠানো সম্ভব হবে৷ এক যৌথ বিবৃতিতে ম্যার্কেল এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানও একই কথা বলেছেন৷
বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনের সঙ্গে কথা বলার সময়ও সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান হামলার বিষয়টি জোর দিয়েই উল্লেখ করেছেন ম্যার্কেল৷ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পুটিনকে আলেপ্পোয় মানবিক বিপর্যয় রোধে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷
এসিবি/ডিজি (রয়টার্স, ডিপিএ)
সিরিয়া থেকে যেভাবে জার্মানিতে এসেছে একটি পরিবার
জীবন বাঁচাতে সিরিয়া থেকে জার্মানিতে এসেছেন অনেক শরণার্থী৷ জার্মানির ইমিগ্রেশন সেন্টার সেসব মানুষের সংগ্রাম নিয়ে আয়োজন করেছে একটি প্রদর্শনীর৷ সেখানেই জানা গেলো কোটো পরিবারের বেঁচে থাকার গল্প৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
আলেপ্পোয় সুখি সংসার
২০১৬ সালে তোলা কোটা পরিবারের ছবি৷ খলিল, তাঁর স্ত্রী হামিদা, সন্তান মান্নান, ডোলোভান, আয়াজ এবং নের্ভানা৷ তখন সিরিয়ায় কোনো গৃহযুদ্ধ ছিল না, ছিল না ধ্বংসলীলা৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত
সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর সময় খলিল কোটো সেদেশের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি শাখার প্রধান ছিলেন৷ গৃহযুদ্ধ শুরুর পর চাকুরি হারান এই ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার৷ একসময় খাদ্য এবং পানির অভাব প্রকট হতে থাকে৷ ২০১৪ সালের এপ্রিলে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, তারা তুরস্ক চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে খলিলের মা বাস করতেন৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
ধাপে ধাপে আগানো
খলিল তুরস্কে কোনো কাজ খুঁজে পাননি৷ তাই ২০১৪ সালের জুলাইয়ে তাঁর পরিবার জার্মানিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন৷ খলিলের ভাই ইউরোপে বাস করেন৷ তিনিই পরিবারটিকে জার্মানিতে আসতে উৎসাহ যোগান৷ শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে আসার পথে বুলগেরিয়ায় একটি শরণার্থী শিবিরে ছয় মাস কাটান কোটো পরিবার৷ এই চামচটি সেই শিবিরের এক স্মৃতিচিহ্ন৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
জার্মানিতে স্বাগতম
অবশেষে জার্মানিতে কোটো পরিবার৷ জার্মানির উত্তরের শহর ব্রেমেনে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে৷ সেখানকার এক নারী খলিলকে এই জিন্সের প্যান্টটি দিয়েছেন, জার্মানিতে পাওয়া তাঁর প্রথম পোশাক এটি৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
অনিশ্চিত ভবিষ্যত
খলিলের সন্তানরা এখন জার্মান স্কুলে যাচ্ছেন৷ আর খলিল এবং তাঁর স্ত্রী হামিদা শিখছেন জার্মান৷ ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার জার্মানিতে একটি চাকরি পাবেন বলে আশা করছেন৷ সিরিয়ায় ফেলে আসা অতীত মাঝে মাঝে মনে করে আনন্দ খোঁজেন তারা৷ আয়াজের সিরিয়ার স্কুলের আইডি কার্ড এটি৷