সিরিয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পশ্চিম
১৯ মার্চ ২০১৮সদিচ্ছা থাকলে ঘটনা অন্যরকম হতে পারত৷ সিরিয়া আজকের চেহারায় পৌঁছাতো না৷ কিন্তু বাস্তব অন্যরকম হয়েছে৷ কারণ সিরিয়া নিয়ে পশ্চিম দুনিয়া যে অবস্থান নিয়েছে তা অনেকটা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি'-র মতো৷ যার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন৷
সাত বছর হয়ে গেল সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে৷ যদিও শুরুটা অন্যরকম ছিল৷ সে সময় সিরিয়ার আসাদ সরকারের পাশে অন্য কোনো দেশ ছিল না৷ এবং তখন থেকেই দেশের সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একের পর এক ভয়ংকর অস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করেছিল আসাদ সরকার৷ বিশ্ব দেখেছিল রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার৷ সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা৷ আসাদ সরকারকে সতর্ক করে তিনি বলেছিলেন, সিরিয়ার সরকার অবিলম্বে এ ধরনের অস্ত্রের প্রয়োগ বন্ধ না করলে অ্যামেরিকা কড়া ব্যবস্থা নেবে৷ বস্তুত ওবামা একটি বাক্য ব্যবহার করেছিলেন সে সময়৷ সিরিয়া ‘রেড লাইন' অতিক্রম করে ফেলছে৷ যার ফল তাদের ভুগতে হবে৷ কিন্তু ওবামার বক্তব্যকে কার্যত আমল দেয়নি আসাদ সরকার৷ একের পর এক রাসয়নিক অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে নিজের দেশের সাধারণ মানুষের ওপরেই৷ কিন্তু অ্যামেরিকা সে সময় কোনোই ব্যবস্থা নেয়নি৷ কেন নেয়নি?
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইরাকে এবং লিবিয়ায় ভুল স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিল অ্যামেরিকা৷ বস্তুত দু'জায়গাতেই তথাকথিত স্থায়ী সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা বিপ্লবে অ্যামেরিকা সহায়তা করেছিল৷ কিন্তু সেই বিপ্লব যে ‘মিস ফায়ার’ করবে এবং বুমেরাং হয়ে অ্যামেরিকার দিকেই ফিরে আসবে, মার্কিন কূটনীতিকেরা তা বুঝতে পারেননি৷ ইরাক এবং লিবিয়ায় বিপ্লবের পর উগ্র ইসলামিক শক্তির দাপট ক্রমশ বৃদ্ধি পায়৷ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আইএস জঙ্গিরা কার্যত মুক্তাঞ্চল তৈরি করে ফেলে৷ যা নিয়ে অ্যামেরিকাকে যথেষ্ট সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল৷ ফলে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে ভয় পেয়েছিলেন ওবামা৷ ভেবেছিলেন, সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে আবার তা ‘মিস ফায়ার’ হতে পারে৷
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ওবামা এবং ইউরোপের অন্যান্য রাজনীতিকেরা যদি সে সময় সিরিয়ার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতেন, তাহলে সিরিয়ার এই চেহারা হতো না৷ অন্যদিকে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে রাশিয়া এবং ইরান৷ আসাদ সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে তারা বিশ্বরাজনীতিতে মেরুকরণ করেছে৷ ফলে এখন আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করলে তা অন্য চেহারা নেবে৷ পৃথিবী আরো একটি বিশ্বযুদ্ধের দিকে অগ্রসর হবে৷
আসলে, অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি৷ একটা লম্বা সময় তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে৷ যে সময় যে পদক্ষেপ করা উচিত ছিল, তখন তারা কিছুই করেনি৷ এদিকে সিরিয়ার সমস্যা ক্রমশ জটিল হয়েছে৷ আইএস জঙ্গিরা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তুলেছে৷ আসাদের থেকে ফোকাস সরে গিয়ে সকলের ফোকাস চলে গিয়েছিল আইএসের দিকে৷ যে লড়াইয়ে পশ্চিম দুনিয়া সহ সকলেই জোটবদ্ধ হয়েছিল৷ আসাদ সরকারকে সাহায্য করেছিল অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ৷ আপাতত সিরিয়া আইএসমুক্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কূটনীতির চেহারা বদলে গিয়েছে৷ সকলেই নিজের আখেড় গোছানোর চেষ্টা করছে৷ এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে আসাদা সরকার এবং তুরস্ক৷ ফলে নতুন করে সিরিয়ার সাধারণ মানুষ আবার সমস্যার মুখোমুখি৷ এমন অবস্থায়, একটাই উপায়৷ অকারণ কথা না বলে সকলকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা৷ পশ্চিম বিশ্ব এখনই সে কাজ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ আরো ভয়ংকর হবে৷
কার্স্টেন নিপ/এসজি