সিরিয়ার বারোয়ারি যুদ্ধের ময়দানে প্রতিনিয়ত উত্তেজনা বাড়ছে৷ সিরিয়ায় বিবাদমান বিভিন্ন পক্ষ একে অপরের অবস্থান নিয়ে উত্তপ্ত হুঁশিয়ারি বিনিময় করলেও, সরাসরি কেউ কারো প্রতি সামরিক আক্রমণে যায়নি!
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ায় অ্যামেরিকার আক্রমণ নিয়ে যত কথাই বলুক না কেন রাশিয়া, শেষ পর্যন্ত কিন্তু সরাসরি সংঘাতে জড়ায়নি এই দু'টি দেশ৷ বরং এই সপ্তাহে হাওয়া উল্টোদিকেই বইছে৷ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে শুক্রবারই জানিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ৷
তবে তিনি বলেছেন, এর জন্য অ্যামেরিকার পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানার জন্য অপেক্ষা করছে রাশিয়া৷ আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুটিনকে হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ করেছিলেন মার্চ মাসে৷
গত ৭ এপ্রিল সিরিয়ায় পূর্ব গুটার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ শহর দুমায় রাসায়নিক হামলার অভিযোগ ওঠে৷ সেখানে প্রায় ৭০ জন শ্বাসকষ্টে মারা যায়৷ অসুস্থ হয় আরও পাঁচশ'র বেশি মানুষ৷
এর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সিরিয়ার তিনটি রাসায়নিক অস্ত্রভান্ডার লক্ষ্য করে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স৷ জার্মানি ও তুরস্ক এ হামলা সমর্থন করলেও চীন, ইরান, জর্ডান ও ইরাক বিপক্ষে অবস্থান নেয়৷
রাশিয়া ১৪ এপ্রিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকে এ হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব তোলে৷ বলিভিয়া ও চীন ছাড়া ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে আর কেউ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি৷
পালাবার পথ নেই
গত মার্চে আফরিনে ঢুকে পড়েছিল তুরস্কের সেনা৷ মহল্লায় মহল্লায় চালিয়েছে হামলা৷ সামান্য সম্বলটুকু নিয়ে ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন সাধারণ মানুষ৷ তেমনই কিছু ভয়াবহ ছবি আজকের ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
গৃহহীন
গত মার্চে দু’দিক থেকে যুদ্ধ চলেছে সিরিয়ায়৷ একদিকে বিদ্রোহ দমনের নামে নিজের দেশের সরকার হামলা চালিয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর৷ অন্যদিকে তুরস্ক ঢুকে পড়ে আফরিনে৷ বাড়ি ঘর ছেড়ে সকলেই পালাতে শুরু করে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
অজানা যাত্রা
সে সময় আফরিনে ঢুকে পড়ে তুরস্কের সৈন্যরা৷ পাড়ায় পাড়ায় ঢুকে হামলা চালায়৷ বাধ্য হয়েই সব ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় সাধারণ মানুষ৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
ইতিহাস ফিরে আসে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্বে স্বনামধন্য চিত্রগ্রাহকদের ক্যামেরায়ধরা পড়েছিল এমনই বহু ছবি৷ শরণার্থীদের মিছিল৷ সিরিয়ায় সেই ছবিই ফিরে এসেছে একুশ শতকে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
ঠিকানাহীন
বন্দুকের নল, বারুদবাহী ট্যাংক উপেক্ষা করেই সন্তানদের নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাবা-মা৷ কিন্তু তাঁরা জানেন না কোথায় যাবেন৷ কোথায় একটু আশ্রয় পাবেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
ভাঙা স্বপ্ন
ক্রমাগত বোমার আঘাতে ভেঙে যায় ট্রাক, জিপ৷ সেই ভেঙে যাওয়া যানবাহনেই ঘর ছেড়ে পালান সাধারণ মানুষ৷ অনেকেই চেষ্টা করেন দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী ইউরোপে আশ্রয় নিতে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
তবু বেঁচে থাকা
কিছুদিন আগে এক সাংবাদিককে এক সিরিয়ার শরণার্থী বলেছিলেন, দেশে ফিরতে চান তিনি৷ কিন্তু যাওয়ার রাস্তা বন্ধ৷ যাঁরা তখন পালাচ্ছিলেন, তাঁদের জন্য ইউরোপের রাস্তাও কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ আফরিনের মানুষের মুখেও সেই একই কথা৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
6 ছবি1 | 6
এদিকে ওই হামলায় অ্যামেরিকার নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায় ফ্রান্সের অংশগ্রহণের প্রতিবাদে ফ্রান্স সরকারের দেওয়া মর্যাদাপূর্ণ লেজিওঁ দ'নর খেতাব ফিরিয়ে দেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ৷
সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার সময় আসাদ বলেন, তিনি এমন কোনো দেশের পুরস্কার পরবেন না, যারা আমেরিকার ‘দাস'৷
অবশ্য আসাদকে দেওয়া এ খেতাব প্রত্যাহারে ‘আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম' শুরু হয়েছে, ফরাসি সরকারের এমন ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট নিজেই তাঁর সম্মাননা ফেরত দিলেন৷
বাবার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেই ফ্রেঞ্চ সরকারের কাছ থেকে লেজিওঁ দ'নরের সর্বোচ্চ পদক ‘গ্র্যান্ড ক্রসে' ভূষিত হয়েছিলেন আসাদ৷
২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে সিরিয়া নিয়ে ইরান এবং অ্যামেরিকা সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনাও এখন চরমে৷ দু'টি দেশই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে একে অপরের উপস্থিতি নিয়ে হুমকি-ধামকি বিনিময় করলেও এখন পর্যন্ত সেটি সামরিক তৎপরতায় গড়ায়নি৷
সিরিয়ার ময়দানে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষের সেনারা মার্কিন মদদপুষ্ট কুর্দি বাহিনী এবং তাদের বিমান ঘাঁটিতে হামলা করছে৷ আসাদের পক্ষের সেই সেনাদেরই লক্ষ্য করে আক্রমণ করছে অ্যামেরিকা৷ যদিও এখন পর্যন্ত তারা ইরানিয়ান রেভুলশনারি গার্ডের ওপর হামলা চালায়নি৷ ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড আসাদের পক্ষের যোদ্ধাদের এবং সিরিয়ার পক্ষের সামরিক বাহিনীকে সরাসরি সহযোগিতা করছে৷
শীতল যুদ্ধ কি ফিরে আসছে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বার্লিন প্রাচীর পতনের সময় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল যুদ্ধ চলেছে৷ সিরিয়াসহ আরও কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও অ্যামেরিকার মধ্যে সংঘাত বেড়ে চলেছে৷
ছবি: AP
শীতল যুদ্ধের চরিত্র
শুধু দুটি পরাশক্তি নয়, পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত দুই শিবির যে কোনো সময়ে একে অপরের উপর হামলা চালাতে পারে৷ অথচ বাস্তবে সেরকম হামলা অথবা ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে একটি কাঠামো সফলভাবে কাজ করেছে৷ ‘শান্তিপূর্ণ’ সেই সহাবস্থানে আঁচ পড়ার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Wieseler
উত্তেজনা সত্ত্বেও ‘স্থিতিশীলতা
অ্যামেরিকার নেতৃত্বে সামরিক জোট ন্যাটো ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ওয়ারশ জোট আজকের দৃষ্টিভঙ্গিতে যথেষ্ট স্থিতিশীল ছিল৷ রাতারাতি কোনো আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনাও ছিল অকল্পনীয়৷ এমনকি জোটের বাইরেও ওয়াশিংটন ও মস্কোপন্থি দেশগুলির অবস্থান সহজে বদলায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শান্তির ‘অলীক’ প্রত্যাশা
বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর রাশিয়া তথা পূর্ব ইউরোপে প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তনের ফলে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বৈরি মনোভাবের চূড়ান্ত অবসান ঘটবে, এমন আশা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো প্রায় রাশিয়ার দোরগোড়ায় গিয়ে পৌঁছে যায়৷ খোদ রাশিয়াকেও পশ্চিমা বিশ্বের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে গণ্য করা হতে থাকে৷
ছবি: Reuters/Axel Schmidt
‘দুর্বল রাশিয়া’
মিখাইল গর্বাচভ ও বরিস ইয়েলৎসিন শীর্ষ নেতা হিসেবে রাশিয়ার গৌরব খর্ব করে সে দেশের পতন তরান্বিত করেছেন, অনেক মানুষের মনে এমন অভিযোগ রয়েছে৷ ভ্লাদিমির পুটিন সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট সফল হয়েছেন বলে মনে করেন তাঁরা৷ রাশিয়ার স্বার্থ জোরদার করতে তিনি পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতেও ভয় পান না, এমন ধারণা তাঁকে ক্রমশ আরও শক্তিশালী করে তুলছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP/SZ Photo
স্বার্থের সংঘাত
ইউক্রেন, ইরান, সিরিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকটের ক্ষেত্রে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থের সংঘাত তীব্র হয়ে উঠছে৷ নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও রাশিয়া প্রয়োজনে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে তার ঘোষিত স্বার্থ কায়েম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ প্রশাসনের প্রতি সমর্থন ও সাহায্য তারই অন্যতম দৃষ্টান্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass/M. Metzel
অস্থায়ী আনুগত্য
শীতল যুদ্ধের সময়ে দুই পরাশক্তির কোনো একটির প্রতি বাকি দেশগুলির স্থায়ী আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি৷ আজ পরিস্থিতি বদলে গেছে৷ তুরস্কের মতো ন্যাটো সদস্য দেশ জোটসঙ্গীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে৷ পূর্ব ইউরোপের কিছু ইইউ সদস্য দেশও পুটিন প্রশাসনের প্রতি বেশি ঝুঁকতে শুরু করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Saribas
সিরিয়াকে ঘিরে আবার বিশ্বযুদ্ধ?
আসাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে এর আগেও রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে রাশিয়াকে সতর্ক করে সিরিয়ার উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন, তার ফলে দুই শক্তির মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা বাস্তব হয়ে উঠেছে৷ শেষ পর্যন্ত এমন সংঘাত এড়ানো সম্ভব হলেও এমন যুদ্ধ এড়ানোর কাঠামো দুর্বল হয়ে উঠেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. George
7 ছবি1 | 7
অন্যদিকে সিরিয়ায় নাক গলানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বারবার সতর্ক করে আসলেও এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে ইরানের মদদপুষ্ট যোদ্ধাদের অ্যামেরিকার সৈন্য বা দেশটির সমর্থনে থাকা সেনাদের সরাসরি আক্রমণের কোনও নির্দেশ বা ইঙ্গিত দেয়নি৷
অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে ইরানের কট্টর সমালোচক জন বল্টনকে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করেছেন৷
জাতিসংঘে অ্যামেরিকার দূত নিকি হ্যালি আগুনে ঘি ঢেলেছেন আরও বেশি৷ তিনি বলেছেন, সিরিয়ার যুদ্ধে ইরানের অনুপ্রবেশ ঠেকানো ট্রাম্প প্রশাসনের মূল লক্ষ্যের একটি৷
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মূল শত্রু দেশগুলোর একটি হচ্ছে ইসরায়েল৷ ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানাচ্ছে, সিরিয়ার মাটিতে ইরানের বাহিনীকে আক্রমণের আগে ইসরায়েলকে মার্কিন গোয়েন্দারা তাদের সাথে পরামর্শ করে নেয়ার ব্যাপারে বলেছে৷
আফরিনে তুর্কি অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
দিয়ারবাকির হলো তুরস্কের বৃহত্তম কুর্দি অধ্যুষিত শহর৷ সেখানে এ বছরের নওরোজ উৎসবে আফরিনে আংকারার সামরিক অভিযানে রোষ ও যুগপৎ আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশা ব্যক্ত হয়েছে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের নওরোজ
কুর্দি তথা ইরানিদের নববর্ষ নওরোজ সাধারণত আনন্দোচ্ছ্বল একটি উৎসব৷ কিন্তু এ বছর সীমান্তের অপর পারে সিরিয়ার আফরিনে তুর্কি সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে নওরোজে তুরস্কের কুর্দি অধিবাসীদের রোষ আর হতাশাই প্রতিফলিত হয়েছে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
একদিকে গর্ব, অন্যদিকে হতাশা
২০শে জানুয়ারির পর থেকে আংকারার সমর্থনপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীরা আফরিনে ওয়াইপিজি ও ওয়াইপিজে প্রমুখ কুর্দি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে৷ নওরোজের মাত্র ক’দিন আগে খবর আসে যে, তারা শহরটি দখল করেছে, অর্থাৎ কুর্দি জঙ্গিরা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়া থেকে মোটামুটি বিতাড়িত হয়েছে৷ ঘটনাবলীতে তুরস্কের কুর্দিরা বিমর্ষ হলেও, নওরোজে দিয়ারবাকিরে ধ্বনি তোলেন, ‘‘আফরিনের প্রতিরোধ চলছে-চলবে’’৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘শুধু উৎসব নয়, বরং প্রতিরোধ’
তুরস্কের কুর্দি নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক দল বা এইচডিপি-র পরিষদের সদস্য আইনুর হাসান বলেন, এই নওরোজ অনুষ্ঠানে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা একটি বার্তা পাঠাতে চাইছেন৷ তাদের উপস্থিতি ‘‘মুক্ত কুর্দি এলাকাগুলির প্রতি অভিবাদনও বটে, আবার যারা কুর্দিদের জন্য আশা পরিত্যাগ করেছেন, তাদের প্রতি একটি বার্তাও বটে৷ এটা শুধু উৎসব নয়, এ প্রতিরোধ৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
‘বর্বরতা ও লুটতরাজ’
এইচডিপি দলের নতুন যুগ্ম সভাপতি পরভিন বুলদান দিয়ারবাকিরে জনতার প্রতি তাঁর ভাষণে আফরিনে তুর্কি অভিযানের সমালোচনা করেন৷ ‘‘ওরা আফরিনে বর্বরতা আর লুটতরাজ ছাড়া আর কিছু আনেনি,’’ বলেন তিনি৷ ‘‘কুর্দিদের রাজ্যাঞ্চল জয় বরদাস্ত করতে না পেরে, ওরা আফরিন আক্রমণ করেছে৷’’ বুলদান আরো বলেন যে, আংকারা তুরস্ক ও সিরিয়ার কুর্দিদের মধ্যে বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না৷
ছবি: DW/D. Cupolo
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা
যেসব মহিলা চলতি সংঘাতে সন্তান হারিয়েছেন, তাঁরা ‘শান্তির মা’ নামের একটি গোষ্ঠী গঠন করেছেন৷ নওরোজের স্বল্প আগে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মিলিত হন ও প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমরা যখন পশ্চিমে যাই, তখন আমরা স্কুল-কলেজ আর কলকারখানা দেখি৷ আর আপনারা এখানে এলে কারাগার, পুলিশ আর সাঁজোয়া গাড়ি ছাড়া আর কিছু দেখেন কি? আপনারা এর্দোয়ানকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাননি৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
জরুরি অবস্থা চলেছে...
...কাজেই তুরস্কে রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ৷ এছাড়া আফরিনে সামরিক অভিযান চলাকালীন দিয়ারবাকিরে ২৪ ঘণ্টার কারফিউ জারি রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও বুধবারের নওরোজ উৎসব প্রতিবাদের রূপ ধারণ করে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
মানুষজন ভীত, শঙ্কিত
২০১৫-১৬ সালে দিয়ারবাকিরে প্রায় যুদ্ধের পরিস্থিতি বিরাজ করছিল৷ সেই থেকে বাসিন্দারা নওরোজের মতো গণউৎসবে যোগ দিতে দ্বিধা করেন৷ তাই এবার শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্রে স্থানীয় কুর্দ গোষ্ঠীগুলির সদস্যরা রীতিমতো নওরোজের আমন্ত্রণপত্র বিলি করেছেন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘চাপ যতই বাড়ুক না কেন’
স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা কর্মীদের শ্রমিক সংগঠনের সদস্য সেলমা আটাবাই জানিয়েছেন যে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর যে দমন অভিযান শুরু হয়, তাতে তাঁর সংগঠনের ৪,৩০০ সদস্য চাকুরি হারিয়েছেন৷ তা সত্ত্বেও তাদের অনেকে নওরোজে এসেছেন বলে সেলমা জানান৷ ‘‘নওরোজে এখানকার কুর্দিরা তাদের অস্তিত্ব জানান দিতে পারেন৷ চাপ যতই বাড়ুক না কেন তারা নওরোজ উদযাপন করবেন৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
অকালে উৎসবের সমাপ্তি
দিয়ারবাকিরের নওরোজ অকালে শেষ হয়, কেননা, কিছু তরুণ অতিথি নিরাপত্তার বেড়া টপকে মঞ্চে গিয়ে ওঠেন৷ অতঃপর পুলিশ উৎসব বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও, আরো কিছু সময় ধরে গানবাজনা ও নাচ চলে৷ ‘‘ওরা সবসময়ই আগে বন্ধ করে দেয়, কিন্তু আমরা যতটা পারি উপভোগ করে নিই,’’ বললেন নুরেত্তিন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
9 ছবি1 | 9
ওয়াশিংটনে আরব সেন্টারের প্রধান জো ম্যাকারন বলেছেন, ‘‘আমরা এখন দেখছি আগ্রাসী এবং রক্ষণশীল উপদেষ্টাদের পরামর্শে অ্যামেরিকা সিরিয়ার ময়দানে নামছে৷ ইসরায়েলের ইন্ধনে অ্যামেরিকার ঐ যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার, যা সম্পূর্ণ বিপরীত৷
‘‘তবে ট্রাম্প নিজে পেন্টাগনকে নিয়ে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করছেন৷ ভবিষ্যতে হয়তো ইসরায়েলের লড়াই তাদের নিজেদেরই করতে হবে,'' বলেন তিনি৷
এদিকে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন এটা অতিরঞ্জিত৷
ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের প্রফেসর স্কট লুকাস বলেন, ‘‘দু'পক্ষের (ইরান ও অ্যামেরিকা) মধ্যে চূড়ান্ত সংঘাতের কোনো সুযোগ নেই৷ কেননা দুপক্ষই যা পাবে, তার চেয়ে অনেক বেশি দিতে হবে৷
‘‘আপনাকে এর জন্য প্রচুর সম্পদ নিয়োগ করতে হবে৷ এবং কেউই জানেনা এটা কতোদূর গড়াবে!'' বলেন লুকাস৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তেজনা টানটান থাকলেও সিরিয়া নিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে সামরিক কোনও পদক্ষেপ নেবেনা অ্যামেরিকা, ইরান এবং রাশিয়ার মতো পরাশক্তিগুলো৷