সিরিয়া থেকে ফেরা এক সন্দেহভাজন আইএস যোদ্ধাকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশের পুলিশ৷ বুধবার এই খবর জানিয়েছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
মুতাজ আব্দুল মজিদ কফিলুদ্দিন ব্যাপারি নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট৷ সৌদি আরবে জন্ম নেয়া ৩৩ বছর বয়সি এই ব্যক্তি সিরিয়ায় আইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করেছেন বলে জানিয়েছে তারা৷
গত ফেব্রয়ারিতে মুতাজ বাংলাদেশে আসেন৷ এ সময় তিনি জামাআতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন বলে এএফপিকে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান নূর৷
তিনি বলেন, ৫ মে তাকে ঢাকার উত্তরার কাছের একটি মসজিদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ ‘‘২০১৮ সালে তিনি সিরিয়ায় যান এবং আইএস-এর হয়ে যুদ্ধে অংশ নেন,'' বলেন ওয়াহিদুজ্জামান৷
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
ঘটনাটি কাঁপিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়, আলোড়ন উঠেছিল দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে৷
ছবি: bdnews24.com
গুলশানে হামলা
বিশ্ব মানচিত্রে পরস্পরের সঙ্গে লাগোয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ অর্ধ শতাব্দী পূর্বে স্বাধীন হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষতার চেতনায়৷ দেড় দশক ধরে নানা জায়গায় মুসলিম জঙ্গিবাদ ছড়ালেও খানিকটা যেন নিরাপদেই ছিল দেশটি৷ রাজনৈতিক সহিংসতা ছিল৷ তার অনেকগুলোতে জঙ্গিদের ব্যবহারের কথাও তদন্তে উঠে আসে৷ তবে ঘোষণা দিয়ে বড় ধরণের হামলা আর হয়নি৷ এই ঘটনায় স্তম্ভিত হয়েছে গোটা দেশ৷
ছবি: bdnews24.com
যেভাবে শুরু
তখন ছিল রমজান৷ ঘটনার দিন ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের একটি রেস্টুরেন্ট ঢুকে পড়ে৷ স্প্যানিশ ওই রেস্টুরেন্টটির নাম হোলি আর্টিজান৷ ঢোকার সময়ই তারা বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে৷
ছবি: bdnews24.com
জিম্মি দশা
অস্ত্রধারীরা রেস্টুরেন্টে ঢোকার পর সেখানে জিম্মি সংকট শুরু হয়৷ বাইরে চলে নানা গুজব৷ হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকজন রেস্টুরেন্টকর্মী বের হয়ে আসতে সক্ষম হন৷ বাংলাদেশে এর আগে ১৯৭৭ সালে ঢাকায় আরেকটি জিম্মি সংকট ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়েছিল৷ তখন মুম্বাই থেকে টোকিওগামী একটি জাপানি বিমানের যাত্রীদের জিম্মি করে বিমানটি ঢাকায় নামিয়েছিল দেশটির বামপন্থি বিদ্রোহী দল ‘ইউনাইটেড রেড আর্মি’৷
ছবি: picture-alliance/abaca
কোথায়
অবস্থানগত কারণেও এই ঘটনা আলোচনায় ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে৷ কারণ, রেস্তোরাঁটি ঢাকার গুলশান এলাকায়৷ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস রয়েছে এই এলাকায়৷ কয়েকটি দূতাবাস তো রেস্টুরেন্টের একেবারেই কাছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press Agency/M. Hasan
টার্গেট বিদেশি, টার্গেট হোলি আর্টিজান
ঢাকার অভিজাত এই এলাকার রেস্টুরেন্টটিতে পোষা প্রাণী নিয়ে প্রবেশ করা যেতো৷ এর ভেতরে উন্মুক্ত লন ছিল, সেখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করতে পারতো৷ ওই এলাকায় থাকা বিদেশিদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিল রেস্টুরেন্টটি৷ বিদেশিদের টার্গেট করতেই এই রেস্টুরেন্টকে বেছে নেয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন৷
ছবি: bdnews24.com
প্রাণহানি পুলিশেরও
জিম্মি সংকট শুরুর পর ঘটনা সামলাতে এগিয়ে যায় পুলিশ বাহিনী৷ কিন্তু প্রথম দিকেই জঙ্গিদের হামলায় বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম প্রাণ হারান৷ এতে আতঙ্ক আরো বাড়ে৷
ছবি: bdnews24.com
ডাক পড়ে সেনাবাহিনীর
পুলিশ হতাহত হওয়ার পর অভিযান নিয়ে নতুন করে চিন্তা শুরু হয়৷ এক পর্যায়ে জঙ্গিদের কবল থেকে ওই রেস্টুরেন্টটি মুক্ত করার অভিযান রাতে কার্যত স্থগিত হয়ে যায়৷ শেষ পর্যন্ত ডাক পড়ে সেনাবাহিনীর৷ সাঁজোয়া যান নিয়ে সেনা সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করেন৷
ছবি: bdnews24.com
আইএস সংশ্লিষ্টতা
রাতে জিম্মি দশা চলাকালে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসতে থাকে৷ তবে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তা অস্বীকার করে৷
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
কিভাবে ঘটনার শেষ
ঘটনার অবসান হয় প্রায় ১২ ঘণ্টা পর সেনা অভিযানে৷ অবশ্য তার আগেই জঙ্গিরা সেখানে থাকা ২০ জনকে খুন করে৷ মরদেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারির জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে৷ জীবিত উদ্ধার করা হয় এক জাপানি ও দুই শ্রীলঙ্কানসহ মোট ১৩ জনকে৷
ছবি: bdnews24.com
আলোচিত সেই বাড়ি
ঘটনার পর রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় গুলশানের সেই বাড়ি৷ যে রেস্টুরেন্টে হামলা হয়েছিল, তার মালিক ঘটনার পর বাড়িটি ফিরিয়ে নেন৷
ছবি: bdnews24.com
নতুন ঠিকানায় হোলি আর্টিজান
গত বছরের ১ জুলাই রাতে যখন হামলা হয়, তখন হোলি আর্টিজান ছিল গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর বাড়িতে৷ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর জানুয়ারিতে এসে গুলশান এভিনিউর র্যাংগস আর্কেডের দ্বিতীয় তলায় নতুন করে চালু হয় রেস্টুরেন্টি৷
ছবি: bdnews24.com
জঙ্গিবাদ ও বিচার
এই ঘটনার পর আইএস দায় স্বীকার করলেও বাংলাদেশ সরকার এর জন্য স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবির পুনর্গঠিত একটি শাখাকে দায়ী মনে করে৷ ঘুরে ফিরে এর সঙ্গে জড়িত হিসাবে একই ব্যক্তিদের নাম আসতে থাকে৷ সরকার তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আগাম পদক্ষেপে তাদের বহু ঘাঁটি ও অবস্থানস্থল ধ্বং হয়ে গেছে৷ সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, এই ঘটনার তদন্ত শেষ করতে ৫ ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
12 ছবি1 | 12
স্থানীয় গণমাধ্যম মামলায় উল্লিখিত তথ্যের বরাত দিয়ে জানায়, উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের বায়তুল নূর জামে মসজিদ থেকে মুতাজকে গ্রেপ্তারের সময় তার অন্য সঙ্গীরা পালিয়ে যায়৷ বাংলাদেশের আসার পর তিনি প্রায় শতাধিক বিদেশি জঙ্গির সঙ্গে যোগযাযোগ করেছেন৷ তার মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে এমন তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা৷ সেখান থেকে আরো তথ্য উদ্ধার করতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে বলে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারকে জানান এক কর্মকর্তা৷
মামলার বিবরণী অনুযায়ী, মুতাজের বাবা আব্দুল মজিদ ব্যাপারি দশ বছর বয়সে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব গিয়েছিলেন৷ মুতাজের মা একজন পাকিস্তানী৷ ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টুয়েন্টি ফোরডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুতাজের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সৌদি আরবে৷ বাবা কফিল উদ্দিন ব্যাপারির বাড়ি বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার সখীপুরে৷ তার ১১ সন্তানের একজন মুতাজ বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেন সৌদি আরব থেকেই৷
কয়েকবার প্রচেষ্টার পর মুতাজ গত বছরের মে মাসে সিরিয়া যেতে সক্ষম হন৷ সেখানে প্রায় ছয় মাস থাকার পর তুরস্কে চলে যান৷ দেশটিতে গত বছর অভিযান শুরু হলে তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
এর আগে আইএস-এর হয়ে সিরিয়ায় লড়তে যাওয়া বাংলাদেশি জঙ্গিরা দেশে ফিরতে পারেন এমন আশঙ্কায় গত মাসে বিমানবন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়৷ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ৫০ জন আইএস জঙ্গির একটি তালিকাও পাঠিয়েছিল কাউন্টার টেররিজম পুলিশ ৷
এফএস/এসিবি (এএফপি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, দ্য ডেইলি স্টার)
নরসিংদীতে আটক দুই নারী ‘জঙ্গির’ সূত্র ধরে এগোচ্ছে পুলিশ
কয়েক দিন আগে নরসিংদীর মাধবদীতে সন্দেহভাজন দুই নারী জঙ্গি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন৷ কয়েক মাস জেল খাটার পর বেরিয়ে এসে তারা আবার জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন বলে জানায় পুলিশ৷
ছবি: bdnews24.com.
নরসিংদীর সূত্র ধরে আরো সতেরো জন
সম্প্রতি নরসিংদীতে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সূত্র ধরে আরো ১৭ জন সন্দেহভাজনকে খুঁজছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম কর্মকর্তারা৷ এর মধ্যে একজন আটককৃত দুই নারীর একজন খাদিজা পারভীন মেঘনার স্বামী রাকিবুল হাসান৷ স্থানীয় গণমাধ্যম এমন প্রতিবেদন করেছে৷
ছবি: bdnews24.com.
নিলুফা ভিলা
গত সোমবার রাত ৯টা থেকে নরসিংদীর মাধবদীতে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা হিসেবে দুটি বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশ৷ ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখার সদস্যরা এ অভিযান পরিচালনা করেন৷ দুদিন ধরে ঘিরে রাখা হয় বাড়ি দুটো৷
ছবি: bdnews24.com.
সোয়াতের অভিযান
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে মেহেরপাড়া ইউনিয়নের ভগীরথপুরে পাঁচ তলা একটি বাড়িতে মঙ্গলবার অভিযান চালায় সোয়াত৷ অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন গার্ডিয়ান নট’৷ অভিযানে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের মধ্যে দুইজন নিহত হন৷ তাদের নাম আবদুল্লাহ আল বাঙ্গালী ও আকলিমা আকতার মনি৷
ছবি: bdnews24.com.
দ্বিতীয় বাড়ি
ভগীরথপুরের পাঁচ তলা ওই বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে সাত তলা আরেকটি বাড়িতে জঙ্গিদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ৷ ৪১ ঘণ্টা ধরে বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়৷
ছবি: bdnews24.com.
অভিযানের হুমকি
অভিযানের প্রস্তুতি নিলেও এর আগে তাঁদের আত্মসমর্পণের চেষ্টা চালায় পুলিশ৷ যদি তাদের রাজি করানো না যায়, কেবল তখনই সোয়াত অভিযান শুরু করবে বলে জানান কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম৷ তবে এর আগে বাড়িটির ভেতরে বিস্ফোরণও হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com.
অবশেষে আত্মসমর্পণ
বুধবার বিকেলে সাত তলা ওই ভবনের পঞ্চম তলায় একটি কক্ষের দেয়াল ভেঙে পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করে৷ পরে সেখানে দুই নারী আত্মসমর্পণে রাজি হন৷ এর আগে বেলা দেড়টার দিকে ওই ভবনের বারান্দা থেকে দুজন নারীকে সাদা কাপড় বের করে নাড়তে দেখা যায়৷ পৌনে ৩টার দিকে কালো বোরখা পরা ওই দুই নারীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঘেরাওয়ের মধ্যে পুলিশের একটি বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়৷ সেই সময় তাদের মাথায় হেলমেট পরানো ছিল৷
ছবি: bdnews24.com.
‘নব্য জেএমবি’
দুই বাড়িতে অবস্থান করা সন্দেহভাজন জঙ্গিরা নব্য জেএমবির সদস্য বলে প্রাথমিক ধারণা পুলিশের৷ বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি তাদের ছিল বলেও মনে করে পুলিশ৷