সিরিয়া সরকারের কাছে যুদ্ধে নিহত, বন্দি ও নিখোঁজদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘ কর্মকর্তারা মনে করেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই এসব তথ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন, যুদ্ধ শেষে নয়৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক তদন্ত কমিশনের প্রধান পাওলো পিনহাইরো বুধবার বলেন, ‘‘সিরীয় সরকারের সচ্ছ্ব, বিস্তারিত এবং স্বতন্ত্র তথ্য আমাদের জানানোর এখনই উপযুক্ত সময়৷ কেবল বন্দিদেরই নয়, কারাবন্দি অবস্থায় যাঁদের মৃত্যু হয়েছে এবং বিচারবহির্ভূত সব হত্যাকাণ্ডের তথ্যও আমাদের দিতে হবে৷’’
দামেস্কে প্রাণ ফিরছে
গত মে মাসে সিরিয়ার দামেস্কে যুদ্ধের ঝনঝনানি বন্ধ হয়েছে৷ ফলে সেখানকার অধিবাসীরা এবার প্রায় সাত বছর পর প্রথমবারের মতো গোলাগুলিবিহীন গ্রীষ্ম কাটিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
জন্মদিন পালন
পুরনো দামেস্কে বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি চলছে৷ দামেস্ক থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত পূর্ব গুটা শহরটি একসময় বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল৷ সেখান থেকে সরকারি বাহিনীকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া মর্টার পুরনো দামেস্ক এলাকায় পড়তো৷ ফলে সেখানকার স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
ক্রেতাহীন দিন
২৪ বছরের ডানা জানালেন যুদ্ধের সময় যখন নিয়মিত বোমা পড়তো, তখন তাঁদের বার-এ অনেকদিন কোনো ক্রেতার আনাগোনা থাকতো না৷ কিন্তু এখন দিন বদলেছে৷ বার আর রেস্তোরাঁগুলো ব্যস্ত হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
ব্যস্ত সেলুন
শুধু খাবার দোকান কেন, সেলুন থেকে শুরু করে অন্যান্য দোকানেও ক্রেতার উপস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে৷ ২০১১ সালের পর এই প্রথম দামেস্কের বাসিন্দারা গুলি আর বোমার শব্দবিহীন দিন কাটাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
কেন্দ্রীয় দামেস্কে কম ক্ষতি
এই অংশটি সবসময় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ভবন আর রাস্তাঘাট প্রায় অক্ষতই আছে৷ কিন্তু কয়েক মাইল দূরের পূর্ব গুটা শহরে গেলে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
ভাঙা অবকাঠামো
পূর্ব গুটার এখনকার চিত্র৷ যুদ্ধ থেমেছে কয়েক মাস হলো, কিন্তু এখনো অবকাঠামো পুনরায় গড়ে তোলা যায়নি৷ কবে যে যাবে, তা-ও কেউ বলতে পারছেন না৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
অর্থাভাব
সম্প্রতি তোলা এই ছবিটি হোমস শহরের৷ ২০১৩ সালে এলাকাটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে৷ কিন্তু ভাঙা ঘরবাড়ি দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই কয়েক বছরেও আবার শহরটি গড়ে তোলা যায়নি৷ কারণ, অর্থাভাব৷ সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া আর ইরান এই অভাব দূর করতে সহায়তা করবে না৷ আর রাজনৈতিক পরিবর্তন ছাড়া পশ্চিমা বিশ্ব অর্থ সহায়তা দেবে না৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
অনিশ্চিত জীবন
একটি বারের মালিক ৩০ বছরের রাশা জানালেন, তিনি তাঁর কাজ ভালোবাসেন৷ কিন্তু সিরিয়ার অর্থনীতি কবে উঠে দাঁড়াবে, তা অনিশ্চিত৷ তাই দেশ ছাড়তে চান তিনি৷ ‘‘যখন যুদ্ধ ছিল, প্রতিদিন বোমা পড়তো, তখন আমি কখনোই দেশ ছাড়তে চাইনি৷ কিন্তু এখন আমি চাই,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
7 ছবি1 | 7
নিরাপত্তা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যকে বুঝতে হবে যে, শান্তি চুক্তি হওয়ার পর বন্দি ও নিখোঁজদের ভাগ্যে কী ঘটবে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়৷ তাই এখনই এসব তথ্য আমাদের কাছে দেয়া উচিত৷’’ পিনহাইরো বলেন, ‘‘আমরা বলছি যে, তাঁদের স্বজনদের সাথে কী ঘটেছে বা ঘটছে তা প্রত্যেকটি পরিবারের সদস্যদের জানার অধিকার আছে৷’’
৭ বছরের গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস৷
চলতি বছরের মে মাসে সিরিয়ার পুলিশ এবং সেনাবাহিনী জাতিসংঘকে এমন সব তথ্য সরবরাহ করেছে, যেখানে সরকারের সিভিল রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদেরও উল্লেখ রয়েছে৷
পিনহাইরো জানান, সেসব তথ্য নজিরবিহীন৷ তাই মৃত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করা উচিত বলে মনে করেন তিনি৷ জিজ্ঞাসাবাদের সময় যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের ঘটনা স্বতন্ত্রভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ পাশাপাশি তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আনার আহ্বানও জানিয়েছেন জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক তদন্ত কমিশনের প্রধান৷