সিরিয়ার বিদ্রোহীরা অস্ত্র সহায়তা চেয়ে আসছে অনেকদিন ধরে৷ এ দাবি পূরণের আশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রও দিয়েছে অবশেষে৷ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তাই মনে করেন যুদ্ধে জড়ালে পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
দু'বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়৷ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে অপসারণ করতে লড়ে যাচ্ছে বিদ্রোহীরা৷ আসাদের অনুগত বাহিনীর সঙ্গে তাদের এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে৷ প্রতিবেশি দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক সিরীয় নাগরিক৷ রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা চলছে৷ চলছে যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ করার চেষ্টাও৷ আধুনিক অস্ত্র পেলে বিদ্রোহীরা তাড়াতাড়ি আসাদের পতন নিশ্চিত করতে পারবে – এ ধারণা থেকে পশ্চিমা বিশ্বে বিদ্রোহীদের অস্ত্রসহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছিল৷ যুক্তরাষ্ট্রের তাতে আপত্তি ছিল৷ ওবামা সরকার মনে করে, বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিলে সে অস্ত্র ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাছে চলে যেতে পারে৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য সে আশঙ্কা দূরে ঠেলে অস্ত্র সহায়তা দেয়ার পথে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷
সিরিয়ার আন্দোলনের বার্ষিকী
সিরিয়ার সরকারবিরোধী আন্দোলনের দুই বছর পূর্ণ হলো৷ শুরুতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চললেও ক্রমেই তা সহিংস হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Gaia Anderson
টিনএজারদের দিয়ে শুরু
সিরিয়ার দারা শহরের একটি স্কুলের দেয়ালে স্লোগান লেখায় আটক করা হয়েছিল কয়েকজন টিনএজারকে৷ তারা লিখেছিল, টিউনিশিয়া আর মিশরের পর সিরিয়ার বাশার আল আসাদ হবেন পরবর্তী আরব নেতা যাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে৷ এই ঘটনার পরই শুরু হয় জোরদার আন্দোলন৷
ছবি: Gaia Anderson
দেশত্যাগীর সংখ্যা বাড়ছে
এখন পর্যন্ত প্রায় দশ লক্ষ সিরীয় ভয়ে দেশ ছেড়েছেন৷ আর প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ দেশের ভেতরেই গৃহহীন হয়ে পড়েছেন৷
ছবি: Gaia Anderson
অর্ধেকই শিশু
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, যারা দেশ ছেড়েছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু৷
ছবি: Gaia Anderson
শান্তিপূর্ণ থেকে সহিংস
শান্তিপূর্ণ থেকে সহিংস শান্তিপূর্ণভাবে যারা আন্দোলন শুরু করেছিলেন, ক্রমেই তারা দেখতে পান যে তাদের রাস্তাগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে৷ এছাড়া সশস্ত্র কিছু জনগণ ও সেনাবাহিনী ত্যাগ করাদের নিয়ে বিরোধী একটি জোটও গড়ে উঠেছে যারা সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে৷
ছবি: Gaia Anderson
শিশু শিক্ষা হুমকির মুখে
সরকারবিরোধী আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের শিক্ষা৷ জাতিসংঘ বলছে, প্রতি পাঁচটি স্কুলের একটি হয় যুদ্ধে ধ্বসে গেছে, না হয় আশ্রয় শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷
ছবি: Gaia Anderson
তুরস্ক আশ্রয় নিয়ে তিন লক্ষ সিরীয়
তুরস্কের আশ্রয় শিবিরগুলোতে থাকা প্রায় তিন লক্ষ সিরীয়র মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ থাকে সরকারি পরিচালনায় থাকা শিবিরে৷ যেখানে স্কুল ও চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে৷ বাকি শরণার্থীরা যেখানে থাকছেন সেখানে ন্যূনতম সুবিধা নেই৷
ছবি: Gaia Anderson
সাহায্য থেকে বঞ্চিত
সিরিয়ার বিরোধীরা বলছে জাতিসংঘের সাহায্যগুলো পাচ্ছে সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর বাসিন্দারা৷ বঞ্চিত হচ্ছেন বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উত্তরাঞ্চলের জনগণ৷
ছবি: Gaia Anderson
সহায়তা বিতরণ হচ্ছে না
গাল্ফ দেশগুলো থেকে যে অর্থ সহায়তা আসছে বিরোধী নেতারা সেগুলো আশ্রয়প্রার্থীদের না দিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়াতে কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: Gaia Anderson
ত্রাণ নিয়ে যেতে সমস্যা
‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বলছে যেসব এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে যাওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য৷ এমনকি কোনো জায়গায় যাওয়াও যাচ্ছে না৷ সিরীয় সরকারই ঐসব এলাকায় ত্রাণ সংস্থাগুলোকে যেতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: Gaia Anderson
সমাধান হচ্ছে না
সিরিয়ার বিরোধীরা এক হতে না পারায় এবং পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক উদ্যোগ না থাকায় সিরিয়ার সমস্যার সমাধান হচ্ছে না৷
ছবি: Gaia Anderson
10 ছবি1 | 10
কিন্তু বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্টিন ডেম্পসি এক চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া যুদ্ধে জড়ালে ‘‘আগে পরবর্তী পরিণামের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে৷'' ইরাক, আফগানিস্তান এবং লিবিয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি সামরিক হস্তক্ষেপের আর্থিক ক্ষতির দিকটাও তুলে ধরেছেন চিঠিতে৷ জেনারেল ডেম্পসির এ চিঠিরও একটা পটভূমি আছে৷ গত সপ্তাহে সিনেটর জন ম্যাককেইন সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে কিনা – এ বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছিলেন জেনারেল ডেম্পসির কাছে৷ জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের প্রধান জবাবে বলেছিলেন, কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধিরই উচিত এ সম্পর্কে কথা বলা৷ কিন্তু তারপরও তাঁর ওপর চাপ অব্যাহত থাকায় একটি চিঠির মাধ্যমে সরাসরিই নিজের মতামত জানালেন ডেম্পসি৷ তাঁর একটাই আশঙ্কা – ইরাক, আফগানিস্তান এবং লিবিয়ার মতো আরেক মুসলিম অধ্যুষিত দেশ সিরিয়ায় যু্দ্ধে জড়ানোর পরিণামও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খারাপ হতে পারে৷