ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সিরিয়া সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে তাঁর দেশ প্রস্তুত৷ কিন্তু আসাদবিরোধীদের মধ্যেই শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব৷ সবচেয়ে বড় আসাদবিরোধী অংশ জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদা সমর্থিত বিদ্রোহীদের সমালোচনায় মুখর৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশন (এসএনসি) এক বিবৃতিতে আল-কায়েদা সমর্থিত বিদ্রোহীদের কঠোর সমালোচনা করেছে৷ এর আগে আল-কায়েদা সমর্থিত বিদ্রোহীরা উত্তরাঞ্চলীয় শহর আজাজ দখল করে নেয়৷ শহরটি মূলত এনএসসি সমর্থিত বিদ্রোহীদের দখলে ছিল৷ বিবৃতিতে বলা হয়, আল-কায়েদার মদতে বিদ্রোহীদের একটা অংশ সিরিয়ায় ইসলামি শাসন কায়েম করতে চায়৷ ওই বিদ্রোহীরা ‘সিরিয়া বিপ্লবের মূল নীতির পরিপন্থি কাজ করছে' বলেও বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে৷ আসাদ বিরোধীদের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে সংগ্রামকে কঠিন এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে প্রকারান্তরে সহায়তা করছে জানিয়ে এসএনসি আরো বলেছে, ওই বিদ্রোহীদের প্রভাব দ্রুত বেড়ে চলেছে৷
সিরিয়া যুদ্ধের ঘটনাপঞ্জি
সিরিয়ায় উপর খুব শীঘ্রই সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে পারে কয়েকটি পশ্চিমা দেশ৷ গত প্রায় আড়াই বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে সেদেশে৷ অথচ এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুদ্ধ এবং বিশৃঙ্খলা
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে এক লাখের মতো মানুষ৷ সম্প্রতি সেদেশে কথিত রাসায়নিক হামলায় কয়েকশত মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ৷ সিরিয়ায় সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা৷ প্রশ্ন হচ্ছে, সম্ভাব্য হামলা কি সেদেশে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে?
ছবি: Reuters/Goran Tomasevic
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ
২০১১ সালের মার্চ মাসে সিরিয়ায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ শুরু হয়৷ আরব বসন্তে অনুপ্রাণিত হয়ে সেদেশের বিরোধী দল প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দেয়৷ দারা এবং দামেস্কে জনগণ রাস্তায় নেমে আসেন৷ তাঁরা সিরিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানান, মুক্তির দাবি করেন রাজনৈতিক বন্দিদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রতিবাদকারীদের হটাতে ট্যাংক
এক পর্যায়ে প্রতিবাদকারীদের হটাতে রাস্তায় ট্যাংক নামায় আসাদ প্রশাসন৷ ফলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ মৃত্যুর মিছিলের সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রতিবাদীদের ক্ষোভও৷ ফলে সিরিয়ার উপর নিষিধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ পাশাপাশি সিরিয়া সরকারের বিরোধী বিভিন্ন পক্ষ তুরস্কে একটি জোট গঠন করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পর্যবেক্ষক দল, বিদ্রোহী এবং ইসলামপন্থিরা
জুলাই নাগাদ সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা ১৪০০ ছাড়িয়ে যায়৷ তাসত্ত্বেও রাস্তায় অবস্থান নেয় অসংখ্য মানুষ৷ সেসময় সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য দলত্যাগ করে বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেন৷ বিদ্রোহী বিভিন্ন মিলিশিয়া দলের সঙ্গে মিলে ২০১১ সালের অক্টোবরে তাঁরা তৈরি করেন ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি৷’ বিদ্রোহীদের সঙ্গে উগ্র ইসলামপন্থী আল-কায়দা গোষ্ঠীর কিছু অনুসারীও আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে৷
ছবি: Reuters
গৃহযুদ্ধ
২০১১ সালের শেষের দিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের পরিধি বাড়তে থাকে৷ সেবছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক পাঠায় আরব লিগ৷ কিন্তু পরিস্থিতি শান্ত হয় না৷ একের পর এক বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে রাজধানী দামেস্ক৷ পর্যবেক্ষকরাও বাধ্য হয়ে সরে যান৷ সরকারি বাহিনী হোমসসহ বিভিন্ন শহরে বিদ্রোহীদের দমনে কঠোর অভিযান শুরু করে৷
ছবি: Salah Al-Ashkar/AFP/Getty Images
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
২০১২ সালের মে মাসে হোমসে সরকারি বাহিনীর হামলায় কয়েকশত বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারান৷ সেসময় প্রথমবারের মতো উদ্যোগী হয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ৷ জাতসিংঘের পক্ষ থেকে বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বলা হয়, একইসঙ্গে সিরিয়ায় সরকার বাহিনীর নিপীড়নের নিন্দা জানানো হয়৷ আর বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে আসাদকে সতর্ক করে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷
ছবি: Getty Images
বিদ্রোহীদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা
আসাদের অনুগত বাহিনী বিদ্রোহীদের বিভিন্ন আস্তানায় বোমা বর্ষণ করে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন তখন বিদ্রোহীদের সহায়তা করতে শুরু করে৷ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ করে দেশ দু’টো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শরণার্থী
২০১২ সালের নভেম্বরে সিরিয়া সরকারের বিরোধীদের নিয়ে গঠিত ‘‘জাতীয় পরিষদ’’-কে সেদেশের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কয়েকটি দেশ৷ তবে উগ্রপন্থী আল-নুসরা গোষ্ঠী এই পরিষদের মধ্যে নেই৷ সিরিয়ার কয়েক মিলিয়ন মানুষ এখন যুদ্ধ থেকে বাঁচতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক সিরীয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
কথিত গ্যাস হামলা
২০১৩ সালের জুনে লেবাননের হিজবুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর কুশিয়ার পুর্নদখল করে সিরিয়ার সেনাবাহিনী৷ আগস্টে কথিত গ্যাস হামলায় ঘুতা শহরে কয়েকশত মানুষ নিহতের খবর প্রকাশ হয়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ মনে করে, এই গ্যাস হামলার জন্য দায়ী বাশার আল-আসাদ৷ আর এ ধরনের হামলা ওবামার ঠিক করে দেওয়া ‘রেড লাইন’-এর লঙ্ঘন৷
ছবি: Reuters
শুধুই ধ্বংস
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সামরিক উপায়ে কোনো পক্ষই জিততে পারবে না৷ পশ্চিমাদের হামলার আশঙ্কা সত্ত্বেও ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নন বাশার আল-আসাদ৷ অন্যদিকে, শান্তিপূর্ণ কোনো সমাধানে বিশ্বাসী নয় বিরোধী পক্ষ৷ আন্তর্জাতিক সমাজও তেমন কিছু করতে পারছে না৷ ফলে সিরিয়ায় চলমান সংঘাত থামার আশু কোনো লক্ষণ চোখে পড়ছে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
এদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র আপাতত সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখলেও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি৷ গত সপ্তাহান্তে স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, সিরিয়া শিগগিরই রাসায়নিক অস্ত্র নিরোধের কাজ শুরু করবে৷ যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের কাছে প্রেসিডেন্ট আসাদের গৃহীত পদক্ষেপ ইতিবাচক মনে না হলে আবার উত্তেজনা দেখা দিতে পারে৷ তবে আশার কথা হলো, সিরিয়া সংকট নিরসনে ইরানও ভূমিকা রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ শুক্রবার ওয়াশিংটন পোস্ট-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি বলেছেন, ‘‘এ অঞ্চলের মানুষ যেন নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে সেরকম পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে আমাদের৷ এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আমি জানিয়ে রাখতে চাই যে, আমাদের সরকার সিরিয়া সরকার এবং বিরোধীদের মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত৷''
গত আগস্টে ইরানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে রোহানি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁর দেশের দীর্ঘ বৈরিতার অবসানের জন্যও সংলাপ শুরুর আগ্রহ দেখিয়ে আসছেন৷ আগামী মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন তিনি৷ ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক এবং সিরিয়া সংকটের বিষয়ও গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷