ওয়াশিংটন দৃশ্যত আগের মতোই আসাদের অপসারণ চায়৷ রাশিয়া যাতে আসাদের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে, সেজন্য সচেষ্ট জার্মানি ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়া সিরিয়ায় কথিত রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের তদন্ত সমর্থন করবে বলে জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ৷ তিনি জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েলকে একটি ফোনালাপে এ কথা বলেন৷ তিনি আশা করবেন এই প্রস্তাব ‘‘আন্তরিক'' বলে গাব্রিয়েল জার্মান টেলিভিশন কেন্দ্র জেডডিএফ-এর সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন৷
‘‘উত্তরোত্তর সামরিক সংঘাত বৃদ্ধি'' অতি অবশ্য রোধ করতে হবে, বলেছেন গাব্রিয়েল৷ এবং শুধুমাত্র রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বললে চলবে না – ইরান, সৌদি আরব ও অপরাপর প্রতিবেশি দেশের সঙ্গেও কথা বলতে হবে৷ ‘‘এই ভীতিকর মুহূর্তের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষকে গোলটেবিলে বসানোর'' প্রচেষ্টা করতে হবে, গাব্রিয়েল ঘোষণা করেছেন৷ সবচেয়ে বড় কথা, রাশিয়াকে ‘‘আসাদের প্রতি অটল বিশ্বস্ততা'' থেকে সরে আসতে রাজি করাতে হবে, বলেছেন গাব্রিয়েল৷
দৃশ্যত ইরানের উদ্যোগে রবিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে ইরানের রাষ্ট্রপ্রধান হাসান রুহানির টেলিফোনে কথা হয়৷ দুই নেতা সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের খান শেইখুনে সম্ভাব্য রাসায়নিক আক্রমণের বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের ডাক দিয়েছেন৷
সিরিয়ায় আসলে কারা, কাদের বিরুদ্ধে লড়ছে?
মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার ২০১১ সালের সেই আরব বসন্তের জেরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়৷ গত ছয় বছরে সেই সংঘাতের বিস্তৃতি অনেক বেড়েছে, যোগ হয়েছে নতুন মিত্র, মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে পুরনো শত্রুতা৷
আসাদের প্রতি অনুগতরা
সিরিয়ার সেনাবাহিনী, যারা আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়ান আরব আর্মি (এসএএ) হিসেবে পরিচিত, ২০১১ সালের শরতে তারা বড় এক জটিলতার মধ্যে পড়ে যায়৷ সেনাবাহিনীর একটি অংশ বিদ্রোহ করে আসাদ বিরোধী ‘অ্যান্টি-আসাদ ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷ তবে এসএএকে ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সসহ আসাদপন্থি বিভিন্ন মিলিশিয়া গ্রুপ সমর্থন দিচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/V. Sharifulin
মডারেট দল
আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ সহিংস রূপ নিলে ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’ তৈরির পথ প্রশস্ত হয়৷ জিহাদি নয়, এমন বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে মিলে তারা আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে লড়াই করছে৷ উদ্দেশ্য হচ্ছে, সিরিয়ায় গণতান্ত্রিক পথে সরকার গঠন করা৷ তবে বেশ কয়েকটি লড়াইয়ে হারার পর সেই দলের অনেকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে চলে যায়৷
ছবি: Reuters
সন্ত্রাসের নতুন রূপ
সিরিয়ায় বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে সে দেশ এবং ইরাকের একটা বড় অংশ দখল করে নিজেদের তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠা করে তথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট (আইএস)’৷ নিজের কালো পতাকাতলে ইসলামের উগ্রতম রূপ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অসংখ্য মানুষকে অত্যাচর এবং হত্যা করেছে জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷ রাকা শহরে গোষ্ঠীটি শক্ত অবস্থান গড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এক পুরনো জিহাদ
তবে আইএসই সিরিয়ায় অবস্থান নেয়া একমাত্র জঙ্গি গোষ্ঠী নয়৷ আল-কায়দার সঙ্গে সম্পৃক্ত আল-নুসরা ফ্রন্টসহ আরো কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী সিরিয়ায় লড়ছে৷ আল-নুসরা ফ্রন্ট নিজেদের মধ্যে লড়াই ছাড়াও আসাদ এবং মডারেট বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও লড়ছে৷ সম্প্রতি জঙ্গি গোষ্ঠীটি সমমনা আরো কয়েকটি গোষ্ঠীকে নিয়ে জোট গড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Nusra Front on Twitter
আসাদের এক শক্তিশালী মিত্র
প্রেসিডেন্ট আসাদের শক্তিশালী মিত্র ক্রেমলিন৷ সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে কয়েকবছর ধরে রসদ সরবরাহের পর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়া সংঘাতে যোগ দেয় রাশিয়ার পদাতিক বাহিনী৷ তবে রাশিয়ার বিমান হামলায় অনেক বেসামরিক প্রাণহানির কারণে মাঝেমাঝেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে পড়ে মস্কো৷
ছবি: picture-alliance/AP/Russian Defense Ministry
অনাগ্রহী পশ্চিম
আসাদের সমালোচনা এবং নীরবে মডারেট বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন জানালেও তাদের হয়ে আসাদের বিরুদ্ধে লড়তে পদাতিক বাহিনী পাঠাতে আগ্রহী নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো ন্যাটোভুক্ত দেশ৷ তবে ২০১৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে প্রায় ষাটটি দেশের মার্কিন নেতৃত্বাধীন এক জোট সে দেশে ইসলামিক স্টেট এবং অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর আস্তানায় বিমান হামলা চালাচ্ছে৷
ছবি: AFP/Getty Images/John Macdougall
সীমান্তে নিরাপত্তা
সিরিয়ার প্রতিবেশি দেশগুলো নিজেদের সীমান্ত রক্ষার স্বার্থেই এই লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে৷ মার্কিন নেতৃত্বাধীন আইএসবিরোধী জোটে থাকা তুরস্কও আসাদবিরোধী জোটকে সহায়তা করছে৷ তবে কুর্দি যোদ্ধাদের মার্কিনিদের সহায়তা নিয়ে সে দেশের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে তুরস্কের, কেননা কুর্দরা নিজেদের রাষ্ট্র চায়, যা তুরস্ক সমর্থন করে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Suna
প্রক্সি ওয়ার
সিরিয়ার সংঘাতে কার্যত এক প্রক্সি লড়াইও চলছে, যেখানে একদিকে রয়েছে রাশিয়া এবং ইরান, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্ক৷ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় আসাদকে ক্ষমতায় রাখতে চায় ইরান৷ ফলে রাশিয়ার পাশাপাশি সে দেশও কৌশলগত সহায়তা, সামরিক প্রশিক্ষণ, এবং পদাতিক সেনা দিয়ে দামেস্ককে সহায়তা করছে৷
ছবি: Atta Kenare/AFP/Getty Images
যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই
ছয় বছর হয়ে গেলেও সিরিয়ায় বহুমুখী লড়াই বন্ধের কোনো সুস্পষ্ট ইঙ্গিত এখনো দেখা যাচ্ছে না৷ জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় তৈরি বিভিন্ন শান্তি চুক্তি করা হলেও তা তেমন একটা সফল হয়নি৷ ফলে প্রতিদিন সে দেশে নানা হামলায় মারা যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ, যাদের মধ্যে শিশু, নারীসহ অনেক বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন৷
9 ছবি1 | 9
মার্কিন সিরিয়া নীতি পাল্টাচ্ছে
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হেইলি সিএনএন সংবাদ সংস্থার একটি সাক্ষাৎকারে বলছেন যে, আসাদ ক্ষমতায় থাকাকালীন সিরিয়ায় শান্তি সম্ভব হবে না৷ দৃশ্যত সিরিয়ায় সরকার বদলাবে, বলে মার্কিন প্রশাসন মনে করে৷
বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন যুক্তরাষ্ট্র আসাদের অপসারণ দাবি করে এসেছে – কিন্তু ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে সেই দাবি যেন কিছুটা নরম হতে চলেছে, বলে মনে হচ্ছিল৷ এমনকি খান শেইখুনের রাসায়নিক আক্রমণের আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে বলতে শোনা গেছে যে, সিরিয়ার জনগণের আসাদের ভাগ্য নির্ধারণ করা উচিত – অর্থাৎ আসাদ যদি আবার নির্বাচনের জন্য দাঁড়ান, তাহলে ওয়াশিংটন তার বিরোধিতা করবে না৷
খান শেইখুনের আক্রমণের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার বিমানবাহিনীর শরিয়ৎ বিমানঘাঁটির উপর টোমাহক মিসাইল নিক্ষেপের নির্দেশ দেন – যা শুক্রবার ভোরবেলা ঘটে এবং সিরিয়ায় মার্কিন নীতির খেলনলচে পাল্টে দেয়৷
এবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টার তাঁর প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার প্রতি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে মস্কোর সমর্থনের পুনর্মূল্যায়ন করার ডাক দিয়েছেন৷ এছাড়া তিনি সিরিয়ার বিরুদ্ধে উত্তরোত্তর সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনাও বাতিল করেননি৷ সিরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দু'টি লক্ষ্যের কথা বলেন ম্যাকমাস্টার: ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীকে পরাজিত করা এবং আসাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা৷
এসি/ডিজি (এপি, রয়টার্স, এএফপি)
আলেপ্পো: তখন আর এখন
আলেপ্পো-ঝলমলে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর সিরিয়ার একটা শহর৷ সবসময় যেখানকার বাজার থাকতো সরগরম৷ আর এখন আলেপ্পো যেন এক ভুতূরে শহর৷ আলেপ্পোতে গৃহযুদ্ধের আগের ও পরের কিছু ছবি থাকছে ছবিঘরে৷
উমায়াদ মসজিদ, তখন
৭১৫ সালে নির্মিত উমায়াদ মসজিদকে সিরিয়ার ‘মর্যাদাপূর্ণ স্থাপনা’ বলা হতো৷ এমনকি জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাতেও এর নাম রয়েছে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
উমায়াদ মসজিদ, এখন
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর ২০১৩ সালে হামলায় এই মসজিদও রেহাই পায়নি৷ প্রার্থনায় জায়গায়ও গোলাগুলি হয়৷ ২০১৬ সালের মার্চে একটি মিনার ধসে পড়ে৷ এখন জায়গাটি দেখলে একটা ধ্বংসস্তূপ মনে হয়৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
নহাসিন হাম্মাম, তখন
পুরানো আলেপ্পোর এই হাম্মাম পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় স্থান বলে পরিচিত ছিল৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
নহাসিন হাম্মাম, এখন
গৃহযুদ্ধ শুরুর পর এই জায়গাটির চেহারা দেখে বোঝাই যায় না কতটা আরামের জায়গা ছিল এটি৷ এখানে এখন পানি আর গোসল করার জিনিসের বদলে যুদ্ধের ভয়ংকর ক্ষত চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
কেল্লা, তখন
আলেপ্পোর কেল্লা বিশ্বের অন্যতম বড় ও পুরানো কেল্লার তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ ১২শ’ শতাব্দীতে দুর্গটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়৷
ছবি: Reuters/S. Auger
কেল্লা, এখন
সময়ের সাথে লড়াই করে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা দুর্গটি নিজের অধিবাসীদের ঝগড়া-বিবাদ সহ্য করতে পারেনি৷ যুদ্ধের প্রভাবে দুর্গটি তার পুরোনো জৌলুস হারিয়েছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
পুরানো শহর, তখন
২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে তোলা এই ছবিটি৷ পুরানো শহর তার চাকচিক্যে ঐতিহ্যে ঝলমল করছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
পুরানো শহর, এখন
এই ছবিটি ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বরের৷ পুরানো শহরের চাকচিক্যের ছিটেফোটাও এখন আর নেই৷ যেন এক ভুতূরে নগরী৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
শাহাবা মল, তখন
২০০৯ সালের ডিসেম্বর, এই মল ক্রিসমাসের জন্য সাজানো হয়েছিল৷ ২০০৮ সালে নির্মিত এই শপিং মলের সাজ সজ্জা দেখতেই অনেক লোক এখানে যেতো৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
শাহাবা মল, এখন
গুগলে যদি এখন এই নামটি সার্চ করেন, তবে লেখা দেখবেন ‘চিরকালের জন্য বন্ধ’ ৷ ২০১৪ সালে হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় মলটি৷
ছবি: Reuters/A. Ismail
আল-জারাব বাজার, তখন
আল-জারাব বাজার এর প্রধান দরজা৷ পুরোনো আমলের এই বাজারে ছবিটি ২০০৮ সালে তোলা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
আল-জারাব বাজার, এখন
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে বাজারের এই ছবিটি তোলা হয়েছে৷ বাজারের বেশিরভাগ অংশই বিধ্বস্ত হয়েছে হামলায়৷