বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সিরিয়া সেনার বোমারু হামলায় শতাধিক সাধারণ মানুষের প্রাণ গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ একদিকে তুরস্ক, অন্যদিকে বিদ্রোহী, বিভিন্ন দিকে যুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়৷ বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ৷
বিজ্ঞাপন
ক্রমশ এক জটিল পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে সিরিয়া৷ আফরিনে সৈন্য পাঠিয়েছে তুরস্ক৷ তাদের যুদ্ধ সিরিয়ায় বসবাসকারী কুর্দিদের বিরুদ্ধে৷ অন্যদিকে সিরিয়ার সৈন্য এবং সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লাগাতার লড়াই চলছে সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের৷ এর পরিণামে সোমবার রাজধানী দামেস্কের অনতিদূরে পূর্ব ঘোউতায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে সরকারি বাহিনী৷ এর জেরে ইতিমধ্যে একশ'রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সমাজকর্মীদের মতে যার অধিকাংশই সাধারণ মানুষ৷
জানা গিয়েছে, এর আগে ঘোউতার বিদ্রোহীরা দামেস্কের একটি অঞ্চলে মর্টার ছোড়ে৷ এর আঘাতে একটি শিশুর মৃত্যু হয় এবং আটজন আহত হয়৷ তারই প্রত্যুত্তরে দামেস্কের সেনাবাহিনী বিমান থেকে বোমা ফেলতে শুরু করে বিদ্রোহী অধ্যুষিত ঘোউতায়৷ যার জেরে মৃত্যু হয় অসংখ্য সাধারণ মানুষের৷ যদিও সিরিয়ার সেনার দাবি, কেবলমাত্র বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করেই বোমাবর্ষণ করা হয়েছে৷ সাধারণ মানুষকে কখনোই আঘাত করা হয়নি৷ শুধু তাই নয়, আগামী দিনে আক্রমণ আরো জোরদার হবে বলেও জানানো হয়েছে৷ যদিও সিরিয়া সেনার দাবি মানতে নারাজ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন৷
সিরিয়ায় তুর্কি-মার্কিন সংঘাতের বিভিন্ন দিক
সিরিয়ার জটিল সংকটে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তি নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে জড়িয়ে পড়েছে৷ বিশেষ করে তুরস্ক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাত সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে৷ রাশিয়া, ইরান ও আসাদ সরকার পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রাখছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Suna
গৃহযুদ্ধের জটিল সমীকরণ
বহু জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়ের দেশ সিরিয়ায় গ্রহযুদ্ধ শুধু বাশার আল আসাদ সরকার বনাম বিরোধীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়৷ আইএস-বিরোধী সংগ্রামেও ঐক্যের অভাব রয়েছে৷ প্রতিবেশী, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তি বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখাচ্ছে৷ তুরস্ক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাদের মধ্যে অন্যতম৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
তুরস্কের কুর্দি ‘জুজু’
সীমানার মধ্যে সংখ্যালঘু কুর্দি জনগোষ্ঠীকে কমবেশি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও প্রতিবেশী দেশগুলিতে কুর্দিদের তৎপরতা নিয়ে লাগাতার দুশ্চিন্তায় থাকে তুরস্কের সরকার৷ সিরিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়৷ সেখানে আফ্রিন অঞ্চলে আসাদ প্রশাসনের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে কুর্দি ওয়াইপিজি গোষ্ঠী জাঁকিয়ে বসেছে৷ কয়েক বছর ধরে কার্যত স্বাধীন হয়ে উঠেছে সিরিয়ার কুর্দি অঞ্চল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. George
তুর্কি-মার্কিন সংঘাত
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ওয়াইপিজি গোষ্ঠীকে সহযোগী হিসেবে দেখে মার্কিন প্রশাসন৷ তাই তাদের আর্থিক ও সামরিক মদত দিয়ে চলেছে ওয়াশিংটন৷ অন্যদিকে তুরস্কের এর্দোয়ান সরকার তাদের সন্ত্রাসবাদী হিসেবে গণ্য করে৷ কুর্দিদের দমন করতে সরাসরি সামরিক অভিযানও চালাচ্ছে তুরস্ক৷ দুই ন্যাটো সদস্য দেশের মধ্যে এমন স্বার্থের সংঘাত নতুন সংকট সৃষ্টি করছে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/E. Turkoglu
বিপজ্জনক পরিস্থিতি
ওয়াইপিজি যোদ্ধারা আইএস জঙ্গিদের বিতাড়ন করার পর মার্কিন প্রশাসন সিরিয়ার উত্তরে তাদের নিয়ে ৩০,০০০ সদস্যের এক সীমান্তরক্ষী বাহিনী সৃষ্টি করার উদ্যোগ নিয়েছে৷ কুর্দি গোষ্ঠীর এই শক্তিবৃদ্ধি প্রতিরোধ করতেই সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্ক৷ ফলে কুর্দি এলাকায় সক্রিয় মার্কিন সৈন্যরাও সেই হামলায় জড়িয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
রাশিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়া
সিরিয়ায় নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করতে তুরস্ক রাশিয়া ও ইরানকে তুষ্ট রাখার উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে৷ কুর্দিদের দমন করতে সিরিয়ার আকাশে নির্বিঘ্নে বোমারু বিমান চালাতে চায় তুরস্ক৷ ওয়াইপিজি গোষ্ঠীর দাবি, রাশিয়া পরোক্ষভাবে তুরস্কের আকাশ অভিযানে মদত দিচ্ছে৷ রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ আসাদ সরকার হুমকি সত্ত্বেও তুরস্কের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না৷
ছবি: Reuters/Sputnik/Mikhail Klimentyev/Kremlin
সম্ভাব্য পরিণতি
তুরস্কের চাপে ওয়াইপিজি গোষ্ঠী কোণঠাসা হয়ে পড়লে আংকারার মদতপুষ্ট ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’ নিয়ন্ত্রিত দুই বিচ্ছিন্ন এলাকা যুক্ত হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে আসাদবিরোধী এই গোষ্ঠীর শক্তিবৃ্দ্ধি হলেও কুর্দি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের নতুন সমীকরণের প্রয়োজন হবে৷ সেই অবস্থায় আসাদের স্বার্থরক্ষায় রাশিয়া ও ইরান কী করবে, তা-ও স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
ওয়াশিংটনের সঙ্গে বোঝাপড়া
যে কোনো মূল্যে ওয়াইপিজি গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করতে আংকারা সরকার বদ্ধপরিকর৷ ওয়াশিংটনের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে তারা কুর্দি যোদ্ধাদের ইউফ্রেটিস নদীর পূর্বে চলে যাবার প্রস্তাব দিয়েছে৷ মানবিজ এলাকায় তুর্কি ও মার্কিন সৈন্যদের যৌথভাবে মোতায়েনেরও প্রস্তাব দিয়েছে তুরস্ক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Anadolu
7 ছবি1 | 7
তাদের দাবি, এর আগেও বিদ্রোহী দমনের নামে বারংবার এভাবেই সিরিয়ার সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ চালিয়েছে সেনা৷ ব্যবহার করা হয়েছে বিষাক্ত গ্যাস৷ এ নিয়ে ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সিরিয়াকে সতর্ক করেছে৷ কিন্তু কিছুতেই কোনো লাভ হয়নি৷ সোমবারের ঘটনা তেমনই আরো একটি মর্মান্তিক আক্রমণ বলে জানিয়েছেন তারা৷
এদিকে তুরস্কের সঙ্গে কুর্দিদের লড়াইয়ে সিরিয়ার সরকার কুর্দিদের সাহায্য করার কথা জানিয়েছে৷ বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তুরস্ক৷ তাদের বক্তব্য, দামেস্ক বিদ্রোহীদের সাহায্য করছে৷ তা সংগত নয়৷ প্রয়োজনে নিজেদের শক্তি আরো বৃদ্ধি করে সিরিয়াকে শবক শেখানোর হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে৷ যদিও কোনো হুমকিকেই গুরুত্ব দিতে রাজি নয় দামেস্ক৷
সব মিলিয়ে এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে সিরিয়ায়৷ যার বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মিত্রশক্তির লাগাতার প্রচেষ্টায় সিরিয়ায় আইএস-এর শক্তি অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে৷ কিন্তু নতুন করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেখানে নতুন করে আইএস-এর শক্তিবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷
সিরিয়ার রাকায় প্রাণ ফিরছে
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর ‘রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত ছিল সিরিয়ার রাকা শহর৷ গত অক্টোবরে সেটি মু্ক্ত করা হয়৷ এখন সেখানে ফিরছেন বাসিন্দারা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ধ্বংসস্তূপ
ভাঙা ভবন, সড়ক, ইস্পাতে ঝুলে থাকা কংক্রিট – এ সবই এখন রাকা শহরের সাধারণ দৃশ্য৷ তবে মানুষজনের চলাফেরার জন্য সড়ক থেকে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
ঘরে তৈরি বাহন
রাকা তো আর সাধারণ শহর নেই৷ ফলে নেই কোনো পরিবহণ৷ তাই এই পরিবার একটি বাক্সর নীচে চাকা বসিয়ে চলাফেরার কাজ সারছেন৷
ছবি: DW/F. Warwick
আর উপায় কী!
ছবি দেখেই বুঝতে পারছেন, গণপরিবহন না থাকায় ছয় সদস্যের এই পরিবার ছোট্ট এক মোটর সাইকেলে গাদাগাদি করে বসেছে৷ পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্যটি কিন্তু পেছনের বাক্সে বসে আছে৷ দেখতে পাচ্ছেন?
ছবি: DW/F. Warwick
ভাঙা সেতু
ইউফ্রেটিস নদীর উপর থাকা সেতুটি আইএস ভেঙে ফেলেছিল যেন ‘সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস’ রাকায় আসতে না পারে৷ তাই বাধ্য হয়ে এখন এমন নৌকা করেই যাত্রী ও মোটর সাইকেল পারাপার চলছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
খুব চাহিদা
রাকায় বাসিন্দারা ফিরে ঘরবাড়ি ঠিক করছেন৷ তাই ছবির মতো এই শ্রমিকদের এখন বেশ চাহিদা৷ কাজ পেতে রাস্তার ধারে বসে আছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
দু’টি কিনলে একটি ফ্রি!
শ্রমিকদের যেমন চাহিদা তৈরি হয়েছে তেমনি কফি, এনার্জি ড্রিংকস ইত্যাদিরও চাহিদা বেড়েছে৷ তাই তো এ রকম দোকানের এখন রমরমা অবস্থা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যক্তিগত মালামাল
এই পরিবার রাকায় ফিরে ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে এই জাজিমটি খুঁজে পেয়েছেন৷ আরেক জায়গা থেকে ছেলের স্কুলের বইও পান তাঁরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
বিস্ফোরক
রাকার বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকা বিস্ফোরক দ্রব্য এখনও মানুষের হুমকির কারণ হয়ে আছে৷ ছবিতে এই দুই শিশুকে ব্যবহৃত শেল হাতে দেখা যাচ্ছে৷