লেবানন থেকে সিরিয়ায় ঢোকার সময় এক সিরীয় পরিবারকে এই কথা বলেছিলেন সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা৷ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে এই তথ্য জানিয়েছেন ঐ পরিবারের এক সদস্য৷
ছবি: Depo/ZUMA/picture alliance
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিদের অনেককে সিরিয়ায় ফিরতে বাধ্য করা হচ্ছে৷ সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ও তার আশেপাশের এলাকায় বাস করা এখন নিরাপদ আখ্যা দিয়ে ডেনমার্ক ও সুইডেন সে দেশে আশ্রয় নেয়া সিরীয় শরণার্থীদের থাকার অনুমতি বাতিল করা শুরু করেছিল৷ লেবানন ও তুরস্ক সিরীয় শরণার্থীদের দেশে ফিরতে চাপ দিচ্ছে৷ এমনকি তুরস্কের বিরুদ্ধে সিরীয় শরণার্থীদের জোর করে ফেরত পাঠানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে৷
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বিভিন্ন দেশ যে সিরিয়াকে নিরাপদ বলে আখ্যা দিচ্ছে, তা ঠিক নয়৷ সিরিয়ায় ফেরত যাওয়া ৬৬ জনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি৷ এর মধ্যে ১৩ জন শিশু রয়েছে৷ অ্যামনেস্টি বলছে, ৬৬ জনের মধ্যে পাঁচজন ইতিমধ্যে কারাগারে মারা গেছেন৷ ১৭ জন কোথায় আছেন তা অজানা৷ ফিরে যাওয়া ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার, নির্যাতন, গুম ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
লেবানন, রুকবান (জর্ডান ও সিরিয়ার সীমান্তে একটি এলাকা), ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্ক, জর্ডান ও আরব আমিরাত থেকে ফেরা শরণার্থীদের অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করেছে অ্যামনেস্টি৷ এই শরণার্থীরা ২০১৭-র মাঝামাঝি থেকে ২০২১-র শুরুর মধ্যে সিরিয়ায় ফিরেছেন৷
সিরিয়ায় নির্বাচন : পশ্চিমাদের সমালোচনা, আসাদের তাচ্ছিল্য
নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইটালির মন্তব্য, ‘‘এ নির্বাচন স্বচ্ছ নয়, সবার জন্য উন্মুক্তও নয়৷’’ এর প্রতিক্রিয়ায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বলেন, ‘‘আপনাদের মতামতের সামান্য গুরুত্বও নেই৷’’ ছবিতে দুমার এক ভোটকেন্দ্রে আসাদ ও তার স্ত্রী আসমার ভোট দেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: SANA/REUTERS
বিরোধীদের বিক্ষোভ
শুধু প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এমন সব অঞ্চলে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণে আয়োজনের দাবি জানিয়েছিল জাতিসংঘ৷ আসাদ সরকার তা মানেনি৷ সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের বাইরে বুধবার আসাদ ও নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন বিরোধীরা৷ ওপরে ইডলিবের এক বিক্ষোভ সমাবেশের ছবি৷
ছবি: Khalil Ashawi/REUTERS
আসাদ আরো সাত বছর?
আসাদের বাবা হাফেজ-আল-আসাদ ৩০ বছর সিরিয়া শাসন করেন৷ ২০০০ সালে তিনি মারা গেলে শুরু হয় আসাদ-পর্ব৷ আগের তিন নির্বাচনের সর্বশেষটি হয়েছিল ২০১৪ সালে৷ অনেক প্রার্থী অংশ নিলেও সেবার ৮৮ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ আসাদ৷ এবারের নির্বাচনেও তার জয় অবশ্যম্ভাবী বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ছবিতে ড্রোনের সহায়তায় পতাকা উড়িয়ে আসাদ-বিরোধী প্রার্থীর অভিনব প্রচার৷
ছবি: Khalil Ashawi/REUTERS
ভোট গণনা
ভোটগ্রহণ শেষে গণনা শুরু করতে দেখা যাচ্ছে নির্বাচন-কর্মীদের৷ শুক্রবার সিরিয়ার সময় সন্ধ্যে নাগাদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করার কথা৷
ছবি: Omar Sanadiki/REUTERS
জার্মানিতে বিক্ষোভ
সিরিয়া যুদ্ধ শুরুর পর জার্মানিতে আশ্রয় নেয়া সিরীয়দের একটি অংশ বার্লিনে আসাদ এবং তার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানরত নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন৷ সমাবেশে তার নিখোঁজ বাবার ছবি নিয়ে অংশ নেন ওয়াফা মুস্তাফা৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘আসাদ যতদিন ক্ষমতায় আছেন, ততদিন আমার বাবাসহ এক লাখ ৩০ হাজার জনকে জোর করে কারাগারে রাখা হবে৷’’
ছবি: Annegret Hilse/REUTERS
প্রবাসী সিরীয়দের ভোট দেয়া-না দেয়া
‘বৈধভাবে’ যারা সিরিয়া ছেড়েছিলেন, তাদের বিদেশ থেকেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়েছে বাশার আল আসাদ সরকার৷ অনেক দেশে অবস্থানরত সিরীয়রা পাসপোর্টে সিরিয়া ছাড়ার সিল দেখিয়ে ভোট দিতে পারলেও জার্মানি, তুরস্কসহ বাশার আল আসাদ-বিরোধী সাতটি দেশ কাউকেই এ নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়নি৷ ছবিতে দামেস্কে বাসে চড়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দৃশ্য৷
ছবি: Yamam al Shaar/Reuters
তাদের কাছে নির্বাচন বড় আনন্দের
বুধবার ভোটারদের মাঝে স্বতস্ফূর্ত আনন্দও দেখা গেছে৷ ছবিতে ভোট দেয়ার পর দুই তরুণীর প্রাণখোলা হাসির সেল্ফি তোলার মুহূর্ত৷
ছবি: Yamam al Shaar/REUTERS
শ্লোগানমুখর ভোটকেন্দ্র
দামেস্কের এক ভোটকেন্দ্রের বাইরের ছবি৷ নিজেদের প্রার্থীর সমর্থনে শ্লোগান দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: Omar Sanadiki/REUTERS
সমর্থকদের মাঝে আাসাদ
দুমার ভোটকেন্দ্রের বাইর এক সমর্থকের সঙ্গে কথা বলছেন বাশার আল আসাদ৷ পাশে তার ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত স্ত্রী আসমা৷
ছবি: SANA/REUTERS
নিরাপত্তা
যুদ্ধের কারণে সিরিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষ দেশ ছেড়েছে৷ যুদ্ধে নিহত হয়েছে তিন লাখ ৮৮ হাজার মানুষ৷ নির্বাচনের দিনেও দেশজুড়ে ছিল কড়া নিরাপত্তা৷ দামেস্কের ছবি৷
ছবি: Omar Sanadiki/REUTERS
আসাদের প্রতিদ্বন্দ্বী
দামেস্কে ভোট দিচ্ছেন বিরোধী প্রার্থী মাহমুদ মারেই৷ এছাড়া সাবেক মন্ত্রী আব্দাল্লাহ সালুম আব্দাল্লাহ-ও ভোটের এ লড়াইয়ে অংশ নেন৷
ছবি: Omar Sanadiki/REUTERS
নারীদের অংশগ্রহণ
নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো৷ ছবিতে দামেস্কে এক নারীর ভোট দেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: Yamam al Shaar/REUTERS
12 ছবি1 | 12
অ্যামনেস্টির গবেষক মারি ফরেস্টিয়ার বলেন, ‘‘মানুষজন যে কারণে সিরিয়া ছেড়েছিলেন সেটাই কর্তৃপক্ষের টার্গেটে পরিণত হওয়ার জন্য যথেষ্ট৷''
নূর (ছদ্মনাম) নামের এক নারী তার দুই শিশুকে নিয়ে লেবানন থেকে সিরিয়ায় ফেরার সময়কার অভিজ্ঞতা অ্যামনেস্টিকে জানিয়েছে৷ সিরিয়া সীমান্তে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য ঐ নারীকে বলেন, ‘‘আপনারা সিরিয়া কেন ছেড়েছিলেন? কারণ আপনার বাশার আল-আসাদকে পছন্দ করেন না, সিরিয়া পছন্দ করেন না? আপনারা সন্ত্রাসী... সিরিয় হোটেল না যে আপনার খুশিমতো আসা-যাওয়া করবেন৷'' ঐ নারীকে আটক করা হয়েছিল৷ তিনি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন৷
অ্যামনেস্টির গবেষক ফরেস্টিয়ার বলেন, ‘‘বিশ্বের যে দেশের সরকার বলে যে সিরিয়া নিরাপদ, তারা আসলে ইচ্ছে করে ভয়াবহ বাস্তবতা উপেক্ষা করতে চায়৷''
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন৷ লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন৷
সিরিয়ার ফটোগ্রাফারদের চোখে এক দশকের গৃহযুদ্ধ
সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যে দৈনন্দিন জীবনের ছবি তোলেন স্থানীয় কিছু সাংবাদিক৷ সেসব ছবি সমকালীন ইতিহাসের নথি হিসেবে সংগ্রহ করছে জাতিসংঘ৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Omar Sanadiki/OCHA
রাকার ধ্বংসস্তূপে স্মৃতির খোঁজ
চারপাশে ধ্বংসস্তূপ, এর মাঝে একটি স্ট্রলার নিয়ে হাঁটছেন এক নারী৷ ২০১৯ সালে রাকায় তোলা ছবিটি৷ ফটোগ্রাফার আবুদ হামাম বললেন, ‘‘আমার শহরের এই অবস্থা আমাকে খুব কষ্ট দেয়৷ এর প্রতিটি রাস্তায় আমার স্মৃতি আছে৷ আমাদের অতীতের সব স্মৃতি, এই শহরের সাথে জড়িয়ে থাকা প্রতিটি মুহূর্ত তারা ধ্বংস করে দিয়েছে৷’’
ছবি: Abood Hamam/OCHA
অন্তহীন শোক
২০২০ সালে ইদলিবে তোলা এই ছবিতে মায়ের মৃত্যুর পর দুই ভাই একে অপরকে জড়িয়ে কাঁদছে৷ সিরিয়া যুদ্ধ যখন শুরু হয়, তখন ফটোগ্রাফার গাইথ আল সাঈদের বয়স ছিলো ১৭৷ সেসময় বোমা হামলায় তিনি তার ভাইকে হারান৷ সাঈদ বলেন, ‘‘আমি যখনই কোন বিমান হামলার ছবি তুলতে আসি, তখন আমার ভাইয়ের কথা মনে হয়৷ প্রতিদিনই এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে৷’’
ছবি: Ghaith Alsayed/OCHA
বোমা হামলায় সৃষ্ট পানির পুল
২০১৩ সালে বোমা হামলায় বিধ্বস্ত পাইপ থেকে পানি বের হয়ে ছোট্ট পুলের মত তৈরি হয়েছে৷ সেখান থেকে পানি খাচ্ছে আলেপ্পোর এই ছেলেটি৷ ফটোগ্রাফার মুজাফ্ফার সালমান বললেন, ‘‘অনেকেই আমার এই ছবিটির সমালোচনা করে বলেছেন, ফটোগ্রাফারের উচিত ছিলো ছেলেটিকে বিশুদ্ধ পানি খাওয়ানো৷ কিন্তু আমার মতে, যা বাস্তব সেটাই তুলে ধরা উচিত, যাতে মানুষ পরিস্থিতিটা উপলব্ধি করে তা পরিবর্তনের চেষ্টা করে৷’’
ছবি: Muzaffar Salman/OCHA
ঘৌলা ছেড়ে যাচ্ছে মানুষ
২০১৮ সালের মার্চ মাসে ঘৌলা ছেড়ে যাওয়ার সময় নিজের সন্তানকে একটা সুটকেসে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন এক বাবা৷ ফটোগ্রাফার ওমর সানাদিকি বলেন, ‘‘যুদ্ধ কেবল সিরিয়াকে বদলে দেয়নি, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে এবং বিশ্বের কাছে কীভাবে মানবিক আবেদন তুলে ধরতে হয় সেটাও আমাদের শিখিয়েছে এই যুদ্ধ৷ আমার স্বপ্ন, ৫০ বছর পর আমার দুই মেয়ে বিশ্বের কাছে এই ছবিগুলো তুলে ধরবে৷’’
ছবি: Omar Sanadiki/OCHA
দৌমায় এক কাপ কফি
দামেস্কের অদূরে দৌমায় নিজের বাড়িতে বসে কফি খাচ্ছেন এক দম্পতি৷ ২০১৭ সালে তোলা ছবিটি৷ ফটোগ্রাফার সামির আল দৌমি বলেন, ‘‘উম্মে মোহাম্মদ আমার দেখা বিশেষ একজন মানুষ৷ যুদ্ধে গুরুতর আহত হন, একটু সুস্থ হতেই স্বামী বিমান হামলায় আহত হয়ে চলার শক্তি হারান৷ স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসা অতুলনীয়৷’’
ছবি: Sameer Al-Doumy/OCHA/AFP
মর্টার হামলায় পা হারানো শিশুটি
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দামেস্কে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রাতের খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে পাঁচ বছরের আইয়া৷ স্কুলে যাওয়ার সময় মর্টার হামলায় পা হারায় সে৷ ফটোগ্রাফার ক্যারোল আলফারাহকে আইয়া বলে, ‘‘আমি তখন আমার বাদামি জুতাটা পড়েছিলাম, জুতার সাথে আমার পা-টাও উড়ে গেলো৷ চলে গেলো আমার পা৷’’
ছবি: Carole Alfarah/OCHA
পার্কুর প্রশিক্ষণ
আলেপ্পোর কাছে কাফর নৌরানে পার্কুর অ্যাথলেটরা বিধ্বস্ত ভবনে তাদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রেখেছেন৷ ছবিটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তোলা৷ ফটোগ্রাফার আনাস আলখারবোতিল দেখাতে চেয়েছেন ধ্বংসের মধ্যেও মানুষের জীবন থেমে থাকে না৷
ছবি: Anas Alkharboutli/OCHA/picture alliance/dpa
নতুন করে বাঁচা
‘‘অস্ত্রবিরতির পর ইদলিবের দক্ষিণে বালিউন শহরে এক পরিবারের বাড়িতে ফেরার এই ছবিটা তুলেছিলাম ২০২০ সালে৷ ছবিটি তুলতে গিয়ে আমার একই সাথে আনন্দ ও কষ্টের অনুভূতি হয়েছিল৷ ’’ জানালেন ফটোগ্রাফার আলি হাজ সুলেইমান৷ তিনি বললেন,‘‘ মানুষকে বাড়ি ফিরতে দেখে আমার আনন্দ হয়েছে, কিন্তু কষ্ট হয়েছে এই ভেবে আমি আমার গ্রামে যেতে পারছি না৷’’