আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিরিয়ার সীমান্তে নতুন করে শুরুর সময়ে অনেক সিরীয় শরণার্থীকে জোর করে যুদ্ধাঞ্চলে পাঠিয়েছে তুরস্ক৷তবে তুরস্কের দাবি, সবাই স্বেচ্ছায় ফিরে যাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
গত জুলাই থেকে চলতি মাস, অর্থাৎ অক্টোবর পর্যন্ত কয়েকশ' শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে অ্যামনেস্টি৷ তাদের মধ্যে এমন অন্তত ২০ জন সরাসরি বলেছেন, তুরস্কের পুলিশ তাদের জোর করে তুরস্ক ছাড়তে বাধ্য করেছে৷তুরস্কের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, সিরীয় শরণার্থীরা স্বেচ্ছায় নিজের দেশে ফিরেছেন৷অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের শরণার্থী ও অভিবাসীদের অধিকার বিষয়ের গবেষক আনা শিয়া বলেন, ‘‘ তুরস্ক যে বলছে সিরীয় শরণার্থীরা নিজের ইচ্ছায় ওই এলাকায় ফিরে যাচ্ছেন, এ বিষয়টা খুব বিপজ্জনক এবং অসৎ৷আমাদের গবেষণা বলছে, তাদের বরং কৌশলে অথবা জোর করে ফেরানো হচ্ছে৷''
আক্রমণের পর যা করছেন সিরীয়রা
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সামরিক অভিযানে দেশটির বহু সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে৷ মুত্যু আতঙ্কে তুরস্কের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে সরে গেছেন বেশিরভাগ মানুষ৷
ছবি: Karlos Zurutuza
নিরাপত্তার খোঁজ
গত ৯ অক্টোবর কুর্দি-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে তুরস্কের সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রায় দুই লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ অনেক কুর্দি ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে আশ্রয় নিতে সীমান্ত অতিক্রমনেরও চেষ্টা করেন৷
ছবি: Karlos Zurutuza
শুধু পুরুষ
তুরস্কের সামরিক অভিযান শুরুর পর সিরিয়ার উত্তর-পূর্বের অনেক গ্রাম প্রায় খালি হয়ে গেছে৷ তুরস্কের নিকটবর্তী শহরগুলো ছেড়ে নারী ও শিশুরা ভেতরের দিকে চলে গেছেন৷ ফলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে হাতেগোনা কিছু পুরুষের বসবাস৷
ছবি: Karlos Zurutuza
সবই ফাঁকা
আমুদার বাজারটি একসময় বেশ সরগরম থাকলেই এখন সেখানে মানুষেরই দেখা পাওয়া যায় না৷ তুরস্কের আক্রমণ শুরুর পর থেকেই অনেকগুলো দোকান বন্ধ হয়ে গেছে৷ সিরিয়ার মুদ্রার পতনের কারণে অনেক দোকানে সাশ্রয়ী অফারে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে৷
ছবি: Karlos Zurutuza
শহরে ফিরে এসো
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকেই দেশটির উত্তর-পূর্বের প্রধান শহর কামিশলি উত্তেজনাপূর্ণ ছিল৷ সার্বিক পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে কে থাকবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Karlos Zurutuza
লড়াই
তুর্কি সেনাবাহিনী এবং আঙ্কারা সমর্থিত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কুর্দির যুদ্ধবিরোধী ইউনিট লড়াই করছে৷ তবে আসাদের সমর্থন পাওয়ার পর কুর্দি যোদ্ধাদের অবস্থা কী হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়৷
ছবি: Karlos Zurutuza
অনিশ্চয়তা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিরিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করায় সিরিয়ান কুর্দিরা একে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখেছন৷ এরকমই একজন মাসুদ বলেন, আমরা জানি ট্রাম্প আমাদের সাথে কী করেছিলেন, তবে পুতিনের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও আমরা কিছুই জানি না৷
ছবি: Karlos Zurutuza
মন্তব্য নয়
আসাদের অধীনে কয়েক দশকের নৃশংস নির্যাতনের পর ডেরিকের অনেক বাসিন্দা বেশ কয়েক বছর ধরে কার্যত স্ব-শাসন উপভোগ করলেও এই অঞ্চলের সম্ভাব্য শাসনভার নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না৷
ছবি: Karlos Zurutuza
আরো মৃত্যু
সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিহতদের লাশ নিয়ে আসতে হচ্ছে৷ কারণ তুরস্ক সামরিক ও বেসামরিক উভয় লক্ষ্যেই বিমান হামলা চালিয়েছে৷
ছবি: Karlos Zurutuza
মৃত্যু উপত্যকা
সিরিয়ান কুর্দিরা দাবি করেছেন, তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রায় ১১ হাজার লোককে হারিয়েছেন তারা৷ আইএস উল্লেখযোগ্য অঞ্চলগুলোতে নিয়ন্ত্রণ হারালেও এখনো হত্যা বন্ধ হয়নি৷ তুরস্ক সিরিয়ার উত্তর-পূর্বে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে কয়েক ডজন বেসামরিক এবং শত শত যোদ্ধা নিহত হয়েছেন৷
ছবি: Karlos Zurutuza
কুর্দিরা একা
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর সিরিয়ার কুর্দিরা সরকার বা বিরোধী দলের পক্ষে যাওয়ার পক্ষে ছিল না৷ এখন অ্যামেরিকা সৈন্য প্রত্যাহার করার পর তারা একা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে, তবে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে তাদের পেছনে কেউ নেই৷
ছবি: Karlos Zurutuza
10 ছবি1 | 10
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কয়েকশ' জনের সঙ্গে কথা বললেও তুরস্ক থেকে চলে যেতে বাধ্য হওয়া সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি৷ তুরস্কের সরকারি হিসেব অনুযায়ী এ পর্যন্ত তিন লাখ ১৫ হাজার সিরীয় শরণার্থী নিজেদের দেশে ফিরে গেছে৷
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন অনুযায়ী, তুরস্কের পুলিশ শরণার্থীদের নাম তালিকাভুক্ত করা বা তুরস্কে থেকে যাওয়ার অনুমতিপত্রের কথা বলে স্বেচ্ছায় নিজের দেশে ফেরার কাগজে স্বাক্ষর করায়৷ যারা আপত্তি জানান, তাদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে সিরিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়৷
হানা শিয়া এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, তুরস্ক আর রাশিয়া সিরীয় শরণার্থীদের ‘নিরাপদ এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তনে' একমত হলেও নিরাপদ স্থান নির্ধারণের আগেই তাদের জোর করে পাঠিয়ে দেয়া খুব দুঃখজনক৷