1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী মুক্তিযোদ্ধা

২০ জুন ২০১২

একাত্তর সালে স্কুল ছাত্রী হলেও দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন রুমা চক্রবর্তী৷ এছাড়া আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য আগে থেকেই নিজেকে তৈরি করেন এই সাহসী নারী৷

Historisches Bangladesch Hospital mit alten Rettungswagen während der Freiheitskämpfe von Bangladesch, 1971; Copyright: Dr. Sitara Rahman
ছবি: Ruma Chakrabarty

১৯৫৬ সালের ৫ই মার্চ সিলেটে জন্ম রুমা রায় চৌধুরীর৷ তবে বিয়ের পর থেকে তিনি রুমা চক্রবর্তী হিসেবে পরিচিত৷ বাবা রবীন্দ্র রায় চৌধুরী এবং মা সরজ বালা চৌধুরী৷ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন রুমা রায়৷ তবে তিনি ঢাকায় বড় বোনের বাসায় থেকে পড়াশোনা করার কারণে তৎকালীন আন্দোলন-সংগ্রামের সাথে জড়িয়ে পড়েন৷

তিনি মিরপুর হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন৷ এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি স্বরূপ ঢাকা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়েও নার্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে সহকারী সেবিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন৷ পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কাঠের বন্দুক নিয়ে প্রশিক্ষণ নেন কিশোরী রুমা রায়৷ তবে ২৫শে মার্চ রাত্রেই যখন পাক হানাদার বাহিনীর নারকীয় তাণ্ডব শুরু হয় তখনই তিনি বুঝতে পারেন যে, এতোদিন ধরে তাঁর নার্সিং এবং অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ নেওয়া খুব যথার্থ হয়েছে৷

মুক্তির সংগ্রামে সামনের সারিতে নারীরাছবি: Archiv Rowshan Jahan Shathi

২৫শে মার্চ কালো রাতে পাক হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরুর পরদিনের ঘটনা স্মরণ করে রুমা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সেইরাতে পাক বাহিনী নৃশংসভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়৷ তারা চেয়েছিল যেন কোন মানুষ কিংবা কোন জনপদের চিহ্নই না থাকে, এমনভাবে তারা বোমা ফেলছিল৷ সারা ঢাকা শহরে আগুন আর আগুন৷ তারপর ২৬শে মার্চ আমাদেরকে ছাত্রীনিবাস থেকে হাসপাতালে চলে আসার জন্য বলা হয়৷ ঢাকা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে এসে ছাত্রলীগের নেতা আলম সাহেবের সাথে দেখা হলো৷ তিনি বললেন, এই মেয়েরা লাশ কতগুলো আছে গুণে দেখো৷ তখন আমি সহ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী মেয়েরা আমরা গুণে দেখলাম ৮৬টি লাশ জমা করা হয়েছিল৷ লাশগুলো স্তূপের মতো ফেলে রাখা ছিল৷ এমনকি কিছু লাশ একটার উপর আরেকটা ফেলা ছিল৷ কিছু লাশ সরিয়ে সরিয়েও গুণতে হলো৷ এই লাশ এই রক্তের বন্যা আমি সারাজীবনেও ভুলতে পারবো না৷ এই বাঙালির উপরে এরকম অত্যাচার করেছিল হানাদার বাহিনী এটা ভুলবার মতো নয়৷''

যুদ্ধ শুরুর দিন থেকেই আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় রত হলেন দেশপ্রেমী সাহসী নারী রুমা চক্রবর্তী৷ মে মাস পর্যন্ত তিনি ঢাকায় থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন৷ কিন্তু এরপর ভুট্টো প্রচারণা শুরু করে যে, ভারত পূর্ব পাকিস্তানকে আক্রমণ করেছে৷ ফলে গ্রাম্য মানুষের মাঝে ‘হিন্দু মারো' প্রবণতা শুরু হয়৷ এসময় রুমা চক্রবর্তী এবং তাঁর বড় বোন অন্যদের সাথে ভারত পাড়ি দেন৷

Week 25/12 Women 1: Ruma Chakrabarty (Part 1) - MP3-Mono

This browser does not support the audio element.

বেনাপোল ও কৃষ্ণনগর হয়ে ভারতে যাওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ দীর্ঘ পথের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বেশ কয়েকটি পরিবার সাংবাদিক হাবিবুর রহমানের সহযোগিতায় ভারত যাওয়ার জন্য রওয়ানা করি৷ তাঁর নির্দেশ মতো আমরা পথ চলছি৷ আরো অনেক মানুষ সীমান্ত পার হওয়ার জন্য যাচ্ছিল৷ চুয়াডাঙ্গায় আমরা যখন পৌঁছেছি, আমাদের রিকশাটা সান্ধ্য আইন যে এলাকায় ছিল সে এলাকায় চলে গিয়েছে৷ অন্যরা যারা ছিল তারা পানির মধ্যে হেঁটে যাচ্ছিল৷ কিন্তু আমি জোঁককে খুব ভয় পেতাম বলে পানি দিয়ে না গিয়ে রিকশায় যাচ্ছিলাম৷ আমি তো একেবারে ঘোমটা দিয়ে বুড়ো মহিলা সেজে হাবিবুর রহমানের সাথে রিক্সায় ছিলাম৷ আর ঠিক এমন সময় আমাদের রিক্সা পাক সেনাদের বহরের সামনে পড়ে গেছে৷ আমাদের বামদিকে সৈনিকরা আর ডান দিক দিয়ে সেনা কর্মকর্তারা গাড়িতে করে যাচ্ছিল৷ তারা কোন এক মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে অভিযান চালাতে যাচ্ছিল৷ আর সেনা কর্মকর্তারাও বহরে ছিল বলেই বোধহয় আমাদেরকে ওরা কিছু বলেনি৷ তা নাহলে সেদিনই হয়তো আমাকে ধরে নিয়ে যেতো, আর বৃদ্ধ লোকটাকে মেরেই ফেলতো৷''

এমনই ঝুঁকির মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কলকাতায় পৌঁছেন রুমা চক্রবর্তী এবং তাঁর বোন৷ সেখানে বাংলাদেশ দপ্তরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে নিজেদের আগ্রহের কথা জানান তাঁরা৷ এসময় চব্বিশ পরগণার বনগাঁয় রেডক্রসের সহায়তায় অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ সেখানে চল্লিশটি আসন ছিল৷ সেই হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে অন্যদের সাথে যোগ দেন রুমা চক্রবর্তী এবং তাঁর বড় বোন৷ দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত সেই হাসপাতালে এবং মাঝে মাঝে যুদ্ধের এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তাঁরা৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ