সিলেটের আতিয়া মহলে এখনো অভিযান চলছে৷ সোমবার সকালে আবারও বেশ কিছু সময় থেমে থেমে গুলি এবং বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
রোববার বিকালে এক ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানিয়েছিলেন, আতিয়া মহল নামের ওই বাড়িতে অন্তত দুই জঙ্গি মারা পড়েছে এবং ভেতরে আরও জঙ্গি রয়েছে বলে তাদের ধারণা৷ শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমা শিববাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর জঙ্গি আস্তানায় কমান্ডো অভিযানের প্রথম পর্যায়ের ব্রিফিং শেষে সেখান থেকে মাত্র ৬০ গজ দূরে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে৷ এর কিছুক্ষণ পরেই কাছের পূর্ব পাঠানতলা মসজিদ এলাকায় আরেক দফা বোমা বিস্ফোরণ হয়৷ ওই জোড়া বিস্ফোরণে দুই পুলিশসহ ছয়জন নিহত হন৷
প্রসঙ্গত, সিলেটের শিববাড়ি এলকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ‘আতিয়া মহল' নামে একটি বাড়ি শুক্রবার পুলিশ ঘেরাও করে৷ শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা ট্রুপার কমান্ডোরা ওই ৫ তলা ভবনে আটকে থাকাদের উদ্ধারে অভিযান চালায়৷ ভবনটির নীচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছিল৷ বিকেলে নাগাদ সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ২৭ নারী ও ২১ শিশুসহ ৭৮ জনকে৷ সেসময় গুলি আর বোমার শব্দ শোনা যায়৷
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান রবিবার জঙ্গিদের আটকে ফের অভিযানের ঘেষণা দিয়ে রাতের মত অভিযান সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করেন৷ এর পরপরই ওই জায়গা থেকে মাত্র ৬০ গজ দূরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে৷ সেখানে প্রচুর উৎসুক মানুষের ভিড় ছিল৷
এরপর রাত ৭টা ৫৫ মিনিটের দিকে আগের ঘটনাস্থলের কাছে পূর্ব পাঠানতলা মসজিদ এলাকায় আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে৷ পুলিশ জানিয়েছে দু'টি বোমাই ছিল শক্তিশালী৷ বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মো. আবু ফয়সাল এবং স্থানীয় লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ওয়াহিদুল ইসলাম অপু৷ বাকিদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি৷
‘ইসলামিক স্টেট’ আসলে কী?
আল-কায়েদার অখ্যাত এক উপদল থেকে প্রভাবশালী ‘মিলিট্যান্ট মুভমেন্টে’ পরিণত হয়েছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ জিহাদি এই গোষ্ঠীটির দখলে থাকা অঞ্চল থেকে আক্রমণের কৌশল – আইএস-এর এমন নানা দিক তুলে দেয়া হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
আইএস কোথা থেকে এসেছে?
ইসলামিক স্টেট (আইএস) সুন্নী ইসলামিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী আল-কায়েদার একটি উপদল, যেটি আইএসআইএল, আইসিস এবং দায়েশ নামেও পরিচিত৷ ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণের পর এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটে৷ এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন আবু বকর আল-বাগদাদি৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটির লক্ষ্য হচ্ছে ইরাক, সিরিয়া এবং অন্যান্যা অঞ্চল নিয়ে একটি ইসলামিক স্টেট বা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস কোথায় কাজ করে?
বিশ্বের ১৮টি দেশে আইএস সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ ইরাক এবং সিরিয়ার কিছু অংশ এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এটি সিরিয়ার রাকা শহরকে রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে৷ তবে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন অবধি নিজেদের দখলে থেকে এক চতুর্থাংশ এলাকা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে৷
কারা তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে?
আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে৷ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের সমন্বয়ে তৈরি মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি ‘কোয়ালিশন’ আইএস অধ্যুষিত এলাকায় বিমান হামলা চালাচ্ছে৷ এই কোয়ালিশনে কয়েকটি আরব দেশও রয়েছে৷ অন্যদিকে সিরিয়া সরকারের পক্ষে সেদেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া৷ তবে ভূমিতে তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে কুর্দিশ পেশমার্গার মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো৷
ছবি: picture-alliance/abaca/H. Huseyin
আইএস-এর অর্থের উৎস কী?
জঙ্গি গোষ্ঠীটির অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে তেল এবং গ্যাস৷ এটি এখনো সিরিয়ার তেল উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ দখলে রেখেছে৷ আর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে জঙ্গি গোষ্ঠীর এই মূল্যবান সম্পদ৷ এছাড়া কর, মুক্তিপন এবং লুট করা পুরাকীর্তি বিক্রি করেও অর্থ আয় করে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
আইএস কোথায় কোথায় জঙ্গি হামলা চালিয়েছে?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷ চলত বছর সবচেয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলাটি চালানো হয়েছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে, যেখানে দু’শোর বেশি মানুষ নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে৷ আইএস-এর নেতারা জঙ্গি গোষ্ঠীটির আদর্শে বিশ্বাসীদের এককভাবে বিভিন্নস্থানে আঘাত হানতে উৎসাহ প্রদান করে৷
অন্যান্য আর কী কৌশল ব্যবহার করে আইএস?
নিজেদের ক্ষমতার পরিধি বাড়াতে অনেক কৌশল ব্যবহার করে আইএস৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটি ‘কালচারাল ক্লিনজিংয়ের’ নামে সিরিয়া এবং ইরাকের অনেক ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম লুট ও ধ্বংস করেছে৷ এছাড়া সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর কয়েকহাজার মেয়েকে ক্রীতদাসী বানিয়েছে৷ গোষ্ঠীটি নিজেদের ‘প্রোপোগান্ডা’ এবং নিয়োগের কাজে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
শরণার্থী হয়েছেন কতজন?
সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে সেদেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রতিবেশী লেবানন, জর্ডান এবং তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছেন৷ অনেক সিরীয় ইউরোপেও পাড়ি জমিয়েছেন৷ এছাড়া প্রায় ৩০ লাখ ইরাকে ইরাকের মধ্যেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
7 ছবি1 | 7
বোমা বিস্ফোরণের সময় কাছেই থাকা ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল রাফি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ব্রিফিং শেষ হওয়ার পরই আমরা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাই৷ পরে আরো একটি বোমা হামলা হয়৷ আমরা শিববাড়ি এলাকায় চারটি রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখি৷ হামলার পর সেখানে এক নারকীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘সিলেট শহরে এখন ভয় আর আতঙ্ক৷ এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা কারুর চিন্তায়ও ছিলনা৷ ঘটনার পরপরই শহরের দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়৷ যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে আসে৷''