জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩২১ রান৷ হাতে ছিল দুই দিন৷ অথচ দেড় সেশনের বেশি টিকতেই পারলো না টাইগাররা৷ ফলে ১৭ বছর পর বিদেশের মাটিতে টেস্ট জিতল জিম্বাবোয়ে৷ ২ টেস্টের সিরিজ এগিয়ে গেল ১-০-তে৷
বিজ্ঞাপন
ওয়ানডেতে জিম্বাবোয়েকে হোয়াইট ওয়াশ করার পর সফরকারী দলকে টেস্টে হালকাভাবে নেয়া হয়েছে, এ অভিযোগ অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর৷ কিন্তু পোস্ট ম্যাচ প্রেস ব্রিফিংয়ে তা উড়িয়ে দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ৷
‘‘সিলেটের কন্ডিশন বিবেচনায় টিম ম্যানেজমেন্ট যে দল তৈরি করেছে, তিনজন স্পিনার নেয়া হয়েছে, আমিও মনে করি সেটিই সঠিক,'' বলেন অধিনায়ক৷
কিন্তু তারপরও কেন এত সহজে ধরাশায়ী হলো বাংলাদেশ? প্রথম ইনিংসে এই বোলিং লাইনআপের বিপরীতে জিম্বাবোয়ে করে ২৮২, আর বাংলাদেশ করে তার প্রায় অর্ধেক (১৪৩)৷ দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীদের ১৮১-তে আটকে রাখতে পারলেও বাংলাদেশ এখানেও পিছিয়ে৷ ১৬৯ রানে অলআউট৷ অর্থাৎ দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল জিম্বাবোয়ে৷
১৭ বছর আগে বিদেশের মাটিতে যে টেস্টটি তারা জিতেছিল, সেটিও বাংলাদেশে৷ সে দলে অবশ্য ছিলেন ফ্লাওয়ার ভ্রাতৃদ্বয়, হিথ স্ট্রিকের মতো ক্রিকেটাররা৷ কিন্তু এই জিম্বাবোয়ের কাছেও এমন অসহায় আত্মসমর্পন, যারা গত পাঁচ বছরে কোনো টেস্ট জেতেনি?
সবচেয়ে কম বয়সের টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানরা
১৭ বছর আগে এক বাংলাদেশি কিশোর সবচেয়ে কম বয়সে টেস্টে শতক করার রেকর্ড গড়েছিলেন৷ পূর্ববর্তী রেকর্ড ভাঙা দেখতে ক্রিকেটবিশ্বকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ চার দশক৷ এই ছবিঘর টেস্ট ক্রিকেটের এমন কিছু বিস্ময়কে নিয়ে৷
ছবি: Lakruwan Wanniarachchi/AFP/Getty Images
মোহাম্মদ আশরাফুল (বাংলাদেশ)
২০০১ সাল৷ শ্রীলঙ্কার সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে চলছে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ৷ টেস্ট অভিষেকেই আশরাফুল করে বসলেন অসাধারণ কীর্তি৷ মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে ১১৪ রান করে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করলেন৷ সে ম্যাচে বাংলাদেশ ইনিংস ও ১৩৭ রানের ব্যবধানে পরাজিত হলেও আশরাফুল রয়ে গেছেন ইতিহাসের পাতায়৷
ছবি: Lakruwan Wanniarachchi/AFP/Getty Images
মুস্তাক মোহাম্মদ (পাকিস্তান)
আশরাফুলের আগের রেকর্ড ছিল পাকিস্তানের মুস্তাক মোহাম্মদের দখলে৷ ১৯৬১ সালে নয়া দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে ১০১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি৷ তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ৭৮ দিন৷ (ছবিতে বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়)
ছবি: AP
শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
১৯৯০ সালে ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১১৯ রানের ইনিংস খেলে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়নের তালিকায় তৃতীয় স্থান দখল করেছেন ক্রিকেট বিশ্বে ‘বিস্ময় বালক’ হিসেবে পরিচিত শচীন টেন্ডুলকার৷ ম্যাচের শেষ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রথম শতরান পেলেও খেলায় শেষ পর্যন্ত কোনো ফল আসেনি৷
ছবি: Reuters
হ্যামিলটন মাসাকাদজা (জিম্বাবুয়ে)
২০০১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতক করেন জিম্বাবুয়ের মাসাকাদজা৷ ১১৯ রানের ইনিংস করার সময় তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ৩৫২ দিন৷ এই ইনিংসের ফলে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে অভিষেকে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড করেন মাসাকাদজা৷ অবশ্য মাত্র দুই মাস পরেই আশরাফুল ভাঙেন সেই রেকর্ড৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
ইমরান নাজির (পাকিস্তান)
২০০০ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করার সময় নাজিরের বয়স ছিল ১৮ বছর ১৫৪ দিন৷ তবে পরবর্তীতে পাকিস্তান দলে নিয়মিত জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হন তিনি৷ ১৯৯৯ সালে অভিষেকের পর থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৮টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Vidanagama
সেলিম মালিক (পাকিস্তান)
১৯৮২ সালে করাচিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তানের পক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় সেলিম মালিকের৷ প্রথম ইনিংসে মাত্র ১২ রান করলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে করেন অপরাজিত শতরান৷ তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ১৮ বছর ৩২৩ দিন৷
ছবি: Getty Images/AFP
পৃথ্বী শ (ভারত)
অভিষেকেই জাত চিনিয়েছেন ভারতের পৃথ্বি শ৷ ২০১৮ সালে রাজকোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৩৪ রান করেন তিনি৷ ১৮ বছর ৩২৯ দিন বয়সে দখল করে নেন ভারতের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকে শতরান করার রেকর্ড৷ তবে অভিষেকের হিসেব বাদ দিলে সবচেয়ে কমবয়সী ভারতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিওনদের তালিকায় তিনি চতুর্থ৷
ছবি: Getty Images/H. Trump
শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)
১৯৯৯ সালে চেন্নাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ১৪১ রানের ইনিংস খেলেন শহীদ আফ্রিদি৷ তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর ৩৩৩ দিন৷ তবে ২০১০ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়ার আগে তিনি ম্যাচ খেলেন মাত্র ২৭টি, শতরানের ইনিংস খেলেছেন ৫টি৷ অবসরে যাওয়ার সময় আফ্রিদি বলেন, টেস্ট ক্রিকেট তিনি উপভোগ করেন না৷
মিরপুরে ১১ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াবেন ক্রিকেটাররা৷ অন্তত এমনটাই আশা অধিনায়কের৷
কিন্তু সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তেমন আশা জাগায় না৷ টেস্টে এই ম্যাচেই যে বাংলাদেশ খারাপ করেছে তা নয়৷ জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে রীতিমতো দুঃস্বপ্ন দেখে এসেছিল টাইগাররা৷
এমনকি তার আগের দু'টি সিরিজেও শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরেছে৷
সুতরাং ওয়ানডেতে যতই দুর্দান্ত হোক বাংলাদেশের পারফরম্যান্স, টেস্টে যে এখনো বহুদূর যেতে হবে, তা বারবারই প্রমাণিত হয়েছে৷ বিশেষ করে মানসিকতায়৷ ম্যাচের পরে তেমনটিই ইঙ্গিত দিলেন জিম্বাবোয়ের ভারতীয় কোচ লালচাঁদ রাজপুত৷ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই ম্যাচে কোন দিক থেকে এগিয়ে ছিল জিম্বাবোয়ে?
‘‘অবশ্যই মানসিকতায়,'' জবাবে বলেন তিনি৷
অবশ্য দলের শেষ দিনের ব্যাটিং অনেকের মনেই এমন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷ যেমন, শেষ বলটিই দেখুন৷ শট নিতে গিয়ে এজড হয়ে চাকাবভার হাতে ক্যাচ দিলেন আরিফুল৷ অথচ তখনও দিনের দেড় সেশন বাকি৷ অবশ্য ৩৭ বলে ৩৮ রান করা আরিফুল একাই শেষ দিকে লড়েছেন৷ সতীর্থরা আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলে তাঁরই বা কী করার আছে?
টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি আছে যাদের
একজন ব্যাটসম্যান কোনো টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন এমনটি ঘটেছে ৮৩ বার! মোট ৬৭ জন খেলোয়াড় এ কীর্তি গড়েছেন, সেখানে সর্বশেষ সংযোজন বাংলাদেশের মুমিনুল৷ চলুন ছবিঘর থেকে জেনে নিই এ বিষয়ে কিছু মজার তথ্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
সর্বশেষ সংযোজন
৬৭ জন ব্যাটসম্যান ৮৩ বার যে কীর্তি গড়েছেন সেখানে সর্বশেষ সংযোজন মুমিনুল৷ মনে হতেই পারে, এ আর এমন কি! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে টেস্টে মুমিনুলের এই কীর্তি, সেটি ইতিহাসের ২ হাজার ২শ ৯৫ তম৷ এবার হিসেব করুন৷ যে ৬৭ জন এ কাজটি করেছেন তাতে শচীন, জহির আব্বাসরা নেই৷ কিন্তু আছেন মুমিনুল৷ তাই তিনি অনন্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
প্রথম কীর্তি
ইংলিশ ব্যাটসম্যান হারবার্ট সাটক্লিফ প্রথম গড়েন এমন কীর্তি৷ একবার নয়, দু’বার৷ ১৯২৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেলবোর্নে এবং ১৯২৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে৷ মজার ব্যাপার হলো, দু’টি ম্যাচেই হারে ইংল্যান্ড৷
ছবি: Getty Images/Hulton Archive
সর্বোচ্চ বার
ভারতের সুনীল গাভাস্কার, অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং ও ডেভিড ওয়ার্নার এই কীর্তি গড়েছেন তিন বার করে৷
ছবি: Getty Images/Daily Express/G. Stroud
সর্বোচ্চ রান
দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি আছে এবং নেই উভয় ক্যাটাগরিতেই সর্বোচ্চ রান করেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান গ্রাহাম গুচ৷ লর্ডসে ১৯৯০ সালে ভারতের বিপক্ষে তিনি প্রথম ইনিংসে ৩৩৩ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ম্যাচ জেতানো ১২৩ রান৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Thompson
যে দেশের ব্যাটসম্যানরা এগিয়ে
অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা সবচেয়ে বেশি বার এক টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন৷ ৮৩ বারের ২১ বারই সেঞ্চুরিগুলো এসেছে অজিদের ব্যাট থেকে৷
ছবি: Getty Images/Allsport/B. Radford
5 ছবি1 | 5
কিন্তু অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ কী করলেন? সুইপ না পুল? ইমরুল কায়েস আর লিটন দাসের ওপেনিং জুটি ভালোই করছিল৷ কিন্তু এক সিকান্দার রাজা পুরো সিরিজে যা ভুগিয়েছেন, সেখানে তাঁকে একটু সমীহ করে খেললে খুব কি অসুবিধা হতো? কিন্তু ২৩ রান করা লিটন উইকেট দিয়ে এলেন৷ ৪৩ করা ইমরুল লম্বা ইনিংসের আশা দেখাচ্ছিলেন৷ কিন্তু তিনিও রাজাকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ডই হয়ে গেলেন৷ এর মাঝে এসেছিলেন মুমিনুল৷ তাঁর যেন কী হয়েছে৷ আবারো ফ্লপ৷ উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন, জার্ভিসের অনেক বাইরের একটি বল খেলতে গিয়ে৷ শেষ দিকে আরিফুল হক ছাড়া আর কেউ উইকেটে টিকতেই পারেননি৷
আগের দিন কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০ ওভারে ২৬ রান করেছিল বাংলাদেশ৷ আর চতুর্থ দিন আরো ৫৩ ওভার খেলে ১৪৩ রান যোগ করতেই সবক'টি উইকেট হারায় বাংলাদেশ৷
দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ১১৪ দশমিক ১ ওভার৷ আর জিম্বাবোয়ে প্রথম ইনিংসেই খেলেছে ১১৭ দশমিক ৩ ওভার৷
প্রথম ইনিংসে ৮৮ রান করা শন উইলিয়ামস হয়েছেন ম্যাচসেরা৷ বাংলাদেশের একমাত্র অর্জন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের ১১ উইকেট৷