সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যায় সাড়ে ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দি
১৯ জুন ২০২৪
বিরামহীন প্রবল বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের আরো বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যাকবলিত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মানুষ৷ তাদের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন অন্তত ৩০ হাজার মানুষ৷
বিজ্ঞাপন
এর মধ্যে সিলেট জেলার সিলেট মহানগর ও ১৩টি উপজেলায় মোট পানিবন্দি ছয় লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ এবং সুনামগঞ্জে পানিবন্দি পাঁচ লাখ ৬০ হাজার মানুষ৷এর মধ্যে সিলেটে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১৭ হাজার ৮২৫ জন এবং সুনামগঞ্জে ১২ হাজার ৫০০ জন৷
দেশের উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কম হওয়ায় এ অঞ্চলের নদীগুলোর পানি উজানে কিছুটা কমেছে৷ তবে ভাটির দিকে নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে আরো বিস্তীর্ণ এলাকা৷
এদিকে সিলেটে আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার জন্য ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর৷ একইসঙ্গে এ অঞ্চলে ভূমিধ্বসের আশঙ্কার কথাও জানানো হয়েছে৷
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেছেন, ‘‘সিলেট নগরীর বরইকান্দি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বন্যাঝুঁকিতে থাকায় তা রক্ষায় গতরাত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল কাজ করছে৷ এছাড়া যেকোনো গুরুতর পরিস্থিতিতে কাজ করার জন্য সেনাবাহিনী প্রস্তুত আছে, তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি ততটা গুরুতর হয়নি৷ প্রতিটি উপজেলা প্রশাসন তার স্বেচ্ছাসেবকদের দল নিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে৷ ইতোমধ্যে জেলার ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ প্লাবিত হয়েছে৷ যেহেতু ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে এবং এর ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে, তাই আমরা সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছি৷''
এপিবি/এসিবি ( দ্য ডেইলি স্টার)
জলবায়ু পরিবর্তনের লড়াইয়ে বাংলাদেশের কৃষকের অস্ত্র ভাসমান খেত
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়ছেন বাংলাদেশের কৃষকরা। সাধারণ জীবনযাপনের মাঝেই বহুকালের পুরনো পদ্ধতি মেনেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছেন তারা। দেখুন ছবিঘরে..
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
ভাসমান খেত
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিয়মিত বিরতিতে বন্যার কবলে পড়ছে বাংলাদেশ। খাদ্য নিরাপত্তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পিরোজপুর জেলার একজন কৃষিজীবী ভাসমান খেতে সেচের কাজ করছেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক কৃষকই ফসলের চারা রোপণ করেন। বর্ষাকালে শুষ্ক জমিতে কচুরিপানার মতো জলজ উদ্ভিদ থেকে তৈরি ভাসমান ভেলায় সবজি চাষ করেন।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
কীভাবে যত্ন
বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরে ৪২ বছর বয়সি কৃষক মোহাম্মদ মোস্তফা তার ভাসমান খামারে চারার শিকড়ের উপরে জলের আগাছাগুলিকে রাখার চেষ্টা করছেন৷ তিনি রয়টার্সকে বলেন, "আমার বাবা এবং পূর্বপুরুষরা সবাই এ কাজ করেছেন৷ কিন্তু কাজটা খুব কঠিন। পাঁচ বছর আগে ভাসমান খেতে চাষ করতে শুরু করি। এটি আমার জীবনে বড়সড় পরিবর্তন এনেছে।"
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
‘ওরা কাজ করে’
কৃষক মোহাম্মদ সেলিম বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলায় তার খামারে ভাসমান খেতের ছাদে দড়ি দিয়ে একটি লাউ ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। এই কৌশলটি শুষ্ক মৌসুমে শাকসবজিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
বিক্রিবাটা চলছে
বাংলাদেশের পিরোজপুরের বেলুয়া নদীর তীরে একটি দ্বি-সাপ্তাহিক ভাসমান বাজারে কৃষকরা তাদের সবজি, ফল এবং চারা বিক্রি করেন মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
জীবন বাঁচানোর উপায়
জলজ আগাছার ডালপালা থেকে বোনা ভেলাগুলি তাদের পরিবারকে বাঁচিয়ে রেখেছে। চরম বর্ষায় যখন শুষ্ক জমি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ে, তখন এটি কাজে লাগে। এভাবেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন তারা।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
কাজ ভাগ করে নেয়া
বছর ৩৫-এর মুর্শেদা বেগম তার স্বামী মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে পিরোজপুর জেলায় তাদের বাড়ির ভাসমান খামারে রোপণের জন্য একটি নৌকায় চারা তুলে রাখছেন। ঝড়, বন্যা এবং ক্ষয়জনিত বৃষ্টির প্রভাবে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশে আশার আলো মুর্শেদা-মোহাম্মদরা।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
হাল ছেড়ো না
ভাসমান খামারগুলি এখন পিরোজপুর জেলায় মোট ১৫৭ হেক্টর (৩৮৮ একর) জুড়ে বিস্তৃত। নাজিরপুরে এগুলি ১২০ হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত। পাঁচ বছর আগে এমন জমি ছিল মাত্র ৮০ হেক্টর। ২০০ বছরের পুরোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে ফল পাচ্ছেন কৃষকরা।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
খামারে ভরসা
পিরোজপুরের একজন কৃষক ভাসমান খামারের কাজ করছেন। জলবায়ুর প্রভাব প্রাকৃতিক কারণে আরো জটিল হচ্ছে। টেকটোনিক পরিবর্তনের ফলে খেত ডুবে যাচ্ছে। উজানের বাঁধগুলি পলিকে ধরে রাখছে, যেগুলি আসলে ক্ষয়প্রাপ্ত ব দ্বীপ গঠনের কাজে লাগে।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
প্রকৃতির পুত্র
পিরোজপুর জেলার এই কিশোরের নাম রাতুল ইসলাম। বাড়ির কাছে পুকুরে স্নান করার জন্য নৌকা থেকে লাফ দিচ্ছে সে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উদ্যোগী এই কিশোরও।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
মায়ের পাশে
বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলায় মুর্শেদা বেগমের ছেলে রাতুল। দুপুরে মায়ের সঙ্গে আড্ডা দেয় ঠিকই, তবে সে ভাসমান খেতের কাজেও সাহায্য করে।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
নারী শক্তির উদ্যোগ
পিরোজপুরে মুর্শেদা, তার মেয়ে এবং প্রতিবেশীরা স্থানীয়ভাবে গাছের পাতাগুলোকে পাতলা টুকরো করে কেটে ওয়াটার লেটুসের বীজের বল বেঁধেছেন।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
হাতে কালো দাগ
ওয়াটার লেটুস চারা থেকে ক্রমাগত বল তৈরি করার ফলে কালো দাগে ভরে গিয়েছে মুর্শেদার হাত। কিন্তু হাল ছাড়ছেন না তিনি। প্রকৃতির সঙ্গে এভাবেই বাঁচার চেষ্টা করছেন মুর্শেদা তার পরিবার।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
রোজের জীবন
পিরোজপুরে গ্রামবাসীরা আখ কেনার জন্য একজন বিক্রেতার সঙ্গে দর কষাকষি করছেন। চাষবাস, সংসার, ছোটদের পড়াশোনা, বাজার হাটের পাশাপাশি প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেঁচে থাকা- এভাবে আশার আলো দেখাচ্ছেন পিরোজপুরের এই কৃষিজীবী পরিবারগুলি।