ইটালির দক্ষিণে সিসিলি দ্বীপ মাফিয়ার কারণে কুখ্যাত৷ তবে সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও কম নয়৷ স্থানীয় শৈলিতে তৈরি একটি বাড়ি ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়ে সেই অভিজ্ঞতাকে আরো সুন্দর করে তুলছে৷
বিজ্ঞাপন
সিসিলির চড়া রোদের উত্তাপ গুলিয়েল্মো পারাস্পোরোর বাড়ির উপরেও পড়ে৷ দেখলে মনে হয় বাতাসই যেন বাড়িটিকে তার আকার দিয়েছে৷ বাড়িটি তার চারিপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে যেন মিশে আছে৷ ঘরে কার্যত কোনো কোণ নেই৷ সিসিলির ঐতিহ্য অনুযায়ী, বাড়িটি চুনাপাথর-ভিত্তিক প্লাস্টারে মোড়া৷ বাড়ির চ্যাপটা গোল আকারও ভূমধ্যসাগরীয় স্থাপত্যের ঐতিহ্যের সঙ্গে মানানসই৷ বাড়ির মালিক গুলিয়েল্মো বলেন, ‘‘আফ্রিকার উত্তরে, বিশেষ করে ডামুসোস ও পান্টেলেরিয়ার মতো সিসিলির আশেপাশের নানা দ্বীপের স্থাপত্যরীতি, সেইসঙ্গে মরক্কোসহ উত্তর আফ্রিকার স্থাপত্য থেকে আমরা প্রেরণা পেয়েছি৷’’
ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে বাড়ি নির্মাণ
04:52
প্রায় ১২০ বর্গ মিটার বড় বাড়িটির প্রাণকেন্দ্র হলো রান্নাঘর ও তার সংলগ্ন খাওয়াদাওয়ার জায়গা৷ বাড়ির ভেতরে সাদা রংয়ের উপর রঙিন সাজসজ্জা ও শিল্পের নিদর্শন দেখতে বেশ সুন্দর লাগে৷ গুলিয়েল্মো পারাস্পোরো বলেন, ‘‘এই অংশটিকেই বাসার হৃদয় বলা যেতে পারে৷ এখান থেকেই উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে৷ রোদের আলো প্রবেশ করে৷ পেছনেই চিমনি৷ জায়গাটা বেশ আরামদায়ক৷ সব কাজকর্ম এখান থেকেই শুরু হয়ে গোটা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে৷’’
পারাস্পোরো বছরে বেশ কয়েক মাস সপরিবারে এখানেই কাটান৷ আসবাবপত্র বেশ কাজের উপযোগী, কিন্তু ডিজাইনও বেশ সুন্দর৷ গ্রীষ্মকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে বাথটব বেশ কাজে দেয়৷
পারদ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁলেও ঘর ঠান্ডা থাকে৷ জানলা এমনভাবে তৈরি, যাতে বাড়ির মধ্যে শীতল বাতাস চলাচল করে৷ তাছাড়া মোটা দেওয়ালও উত্তাপ প্রবেশ করতে দেয় না৷
দু-দুটি ছাদ বাড়তি আরামের সুযোগ দেয়৷ সেইসঙ্গে বাড়তি পাওনাও রয়েছে৷ ছাদ থেকে চারিপাশের সংরক্ষিত প্রকৃতি ও ভূমধ্যসাগরীয় পরিবেশ উপভোগ করা যায়৷
আন্টিয়ে বিন্ডার/এসবি
নাইজেরিয়ার বোতল বাড়ি
প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে এবং বেকারত্ব দূর করতে নতুন এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে নাইজেরিয়া৷ প্রকল্পের আওতায় প্লাস্টিক বোতল এবং বালি দিয়ে বানানো হচ্ছে বাসাবাড়ি৷ এই বাড়িগুলো পরিবেশসম্মত এবং দীর্ঘস্থায়ী৷
ছবি: DW/G. Hilse
আফ্রিকার বৃহত্তম বোতল বাড়ি
নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নির্মাণ হচ্ছে এই বাড়ি৷ প্লাস্টিক, বালি ও কংক্রিট মিশিয়ে তৈরি এই বাড়িই মহাদেশটিতে সবচেয়ে বড়৷ এখন পর্যন্ত বাড়িটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ৪৬ হাজারেরও বেশি পলিথিলিন টেরেফথালেট বোতল৷ বোতলগুলো বর্জ্য থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে,অনেকে স্বেচ্ছায় দানও করেছেন৷
ছবি: DW/G. Hilse
ভিন্ন ধরনের রিসাইক্লিং
প্রায় ১৯ কোটি মানুষের দেশটিতে প্লাস্টিক একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে৷ প্লাস্টিক বোতল মাঝেমধ্যেই দেশটির শহরগুলোর পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করে৷ বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরো বাজে রূপ নেয়৷ বছরে উৎপাদিত ৩ দশমিক ২ টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেশটিতে নেই তেমন কার্যকর ব্যবস্থা৷ ফলে রিসাইক্লিং যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে৷
ছবি: DW/G. Hilse
প্রকল্পের উদ্যোক্তা
নির্মাণ প্রকৌশলী ইয়াহিয়া আহমেদ জার্মানিতে ২৭ বছর ধরে বাস করেছেন, চাকরিও করেছেন৷ নিজের দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকায় বানানো এ ধরনের কিছু বাড়ি থেকেই এই ধারণা পান আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘জার্মানিতে এক বন্ধু আমাকে এ বুদ্ধি দেয়৷ ভাবলাম, নাইজেরিয়াতে এটা কাজে লাগানো যায়৷’’
ছবি: DW/G. Hilse
বেকারত্ব নিরসন
নাইজেরিয়ার ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের এক চতুর্থাংশেরই কোনো নিয়মিত আয় নেই৷ অনেককেই শেষ পর্যন্ত জীবনধারণে বেছে নিতে হয় ভিক্ষাবৃত্তি বা চুরি৷ আহমেদ বলছেন, ‘‘এদের অনেকে রাজনীতির শিকারে পরিণত হয়, কেউ জড়িয়ে পড়ে মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে৷ এজন্য তাঁদের বিকল্প উপায় দিতে হবে৷’’
ছবি: DW/G. Hilse
সাধারণ কিন্তু কার্যকর
নির্মাণ প্রক্রিয়া বিস্ময়করভাবে সহজ৷ প্লাস্টিকের খালি বোতল বালি এবং পাথরকুঁচি দিয়ে ভর্তি করা হয়৷ এরপর নাইলনের দড়ি দিয়ে বেঁধে সেগুলোকে একটার ওপর একটা সাজিয়ে কাদা দিয়ে আটকে দেয়া হয়৷ এই পদ্ধতি যে শুধু পরিবেশবান্ধব তাই নয়, খরচও অনেক কম৷ এতে নির্মাণ খরচ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব৷
ছবি: DW/G. Hilse
প্রশিক্ষণ, দক্ষতা
ইটের বাড়ি বানানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন সিইবা৷ কিন্তু গত সাত বছর ধরে তিনি ইটের বদলে বাড়ি বানাচ্ছেন বোতল দিয়ে৷ ডয়চে ভেলেকে সিইবা বলেন, ‘‘প্রথমে বোতল দিয়ে বাড়ি বানাতে খুব অস্বস্তি লাগতো৷ কিন্তু একবার কৌশল শিখে গেলে সব সহজ হয়ে যায়৷’’
ছবি: DW/G. Hilse
বুলেটপ্রফ এবং ভূমিকম্প-প্রতিরোধী
বোতল বাড়ির আরেক বড় সুবিধা- স্থায়ীত্ব৷ বালিভর্তি বোতলগুলো প্রায় অবিনশ্বরই বলা চলে৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার হন্ডুরাসে বানানো এমন কিছু বাড়ি ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পেও অক্ষত ছিল৷ নির্মাতাদের দাবি, এই বাড়িগুলো বুলেটপ্রুফ৷
ছবি: DW/G. Hilse
অসীম সৃষ্টিশীলতা
আবুজা প্রকল্পে নানা আকারের ও বর্ণের প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হয়৷ ফলে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইনে বাড়ি বানাতেও কোনো বাধা নেই৷ উত্তর নাইজেরিয়ার ঐতিহ্যবাহী বৈশিষ্ট্যের সাথে নানা রং ও নকশা মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে অপূর্ব কিছু বাড়ি৷
ছবি: DW/G. Hilse
দক্ষ প্রশিক্ষক
জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সাত বছর আগে নাইজেরিয়ার কিছু নির্মাণ শ্রমিককে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন আহমেদ৷ তাঁর সেই শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন পরিণত হয়েছেন দক্ষ প্রশিক্ষকে৷ এখন বোতল বাড়ি নির্মাণকাজে আগ্হীদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে৷