1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডাক্তাররা লড়তে ভয় পায় না

৮ এপ্রিল ২০২০

উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া দেশগুলো করোনা সংকট মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে৷ সেখানে নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বাংলাদেশে ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’ এর মত চিকিৎসদের উপর সব দোষ চাপানো হচ্ছে বলে মত সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের৷

ফাইল ছবিছবি: bdnews24.com

কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্ব জুড়ে যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে তাতে দেবদূত এখন স্বাস্থ্যকর্মীরাই৷ সারা বিশ্বেই স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রাণপণ করে এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন৷ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে প্রাণ দিয়ে দেওয়া ডাক্তার-নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থকর্মীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়৷

কিন্তু বাংলাদেশে এই চিকিৎসকদের উপরই উঠছে অভিযোগের আঙুল৷ সারাদেশ থেকে বিনা চিকিৎসার মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে৷  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন৷ এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও মঙ্গলবার দেশে চিকিৎসকদের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷ ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি পর্যন্ত দিয়েছেন৷

অন্যদিকে চিকিৎসকেরা বলছেন, এখন তাদের ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে৷ শুরু থেকেই কোভিড-১৯ প্রতিরোধে চরম অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার কারণেই আজ পরিস্থিতি এত সংকটজনক অবস্থায় উপনীত হয়েছে৷

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক বলেন, ইটালিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তখন সেখান থেকে আসা প্রবাসীদের কেন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনে নেওয়া হলো না৷

‘‘গত ১৪ মার্চ ইতালি থেকে বড় যে দলটি এসেছিল প্রথমে বলা হলো তাদের প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টিনে নেওয়া হবে৷ তারপর তাদের কেন চলে যেত দেওয়া হলো৷ করোনা ভাইরাস যখন বিশ্বজুড়ে ছড়াতে শুরু করে তখন বিদেশ থেকে আসা সবার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টিন বাধ্যতামূলক করা হলে এই ভাইরাস ছড়াতে পারতো না৷ এটা কার দায়িত্ব ছিল৷’’

আরেক চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘চীন থেকে ভাইরাসের বিস্তার শুরুর পরপর চিকিৎসকদের নানা সংগঠন থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আশংকা কথা জানিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের আবেদন জানানো হয়েছিল৷ কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেন নাই৷

‘‘কেন আমাদের পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) চাইতে হলো৷ সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের বলা হয় ‘সুপার স্প্রেডার’৷ কারণ অসুস্থ হলে মানুষ ডাক্তারের কাছেই আসেন৷ ডাক্তারের সুরক্ষা না থাকলে তার মাধ্যমে তার কাছে আসা বাকি রোগীরা সংক্রমিত হবেন৷ ওই রোগীরা বাসায় গিয়ে যার যার পরিবারকে সংক্রমিত করবেন৷ বুঝতে পারছেন তখন কী হবে৷ আমাদের জন্য তো পিপিই ছাড়াই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার আদেশ জারি হয়েছিল৷ যদিও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করা হয়৷’’   

না জেনে করোনা রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে টোলারবাগে দুই জন চিকিৎসক সংক্রমিত হয়েছেন৷ এছাড়া করোনা আক্রান্ত সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের একজন সহকারী অধ্যাপকের অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় বুধবার তাকে ঢাকায় নিয়া যাওয়া হয়েছে বলা জানায় প্রথম আলো৷ আরো কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷

করোনা আক্রান্ত রোগীকে সেবা দেওয়া একাধিক হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের আইসোলেশন বা হোম কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়েছে৷

এভাবে যদি সব চিকিৎসাকর্মীরা আক্রান্ত হন বা আইসোলেশনে যান বা হোম কোয়ারান্টিনে চলে যান তবে কে চিকিৎসা সেবা দেবেন, কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন আরেক চিকিৎসকের৷

সুরক্ষা উপকরণ দাবি করা নিয়ে দ্বন্দের জেরে রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালের তিন চিকিৎসককে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷  যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ওই চিকিৎসকরা নিজেরাই আসছেন না৷

ঢাকার যে দুটি বেসরকারি হাসপাতালে অতি সংক্রামক এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তার একটি ধানমণ্ডির এই হাসপাতাল৷ ‘চাকরিচ্যুত’ চিকিৎসকরা বলছেন, ওই রোগীর মৃত্যুর আগেই তাদের এখানে আসা কয়েকজন রোগীর মধ্যে ‘করোনা ভাইরাসের উপসর্গ’ দেখতে পান তারা৷ কনসালট্যান্টরাও তাদের বিষয়ে একই অভিমত দেন৷ তখন থেকেই পিপিই চাওয়া হলেও তা দেওয়া হয়নি৷

গত মাসের শেষ দিকে হাসপাতালের আইসিইউতে করোনা আক্রন্ত এক রোগীর মৃত্যুর পর চিকিৎসকদের জোরাল দাবির মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুরক্ষা উপকরণ দিলেও তা জুনিয়র চিকিৎসকরা পাচ্ছিলেন না৷

‘করোনা ফেসবুক অ্যাওয়ারনেস গ্রুপ’ নামে একটি পাতায় মোশাররফ হোসেন মুক্ত নামে একজনের পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে৷ যেখানে তিনি জানান, তার মেয়ে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের একজন চিকিৎসক৷ যিনি দায়িত্বরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়ে সি এম এইচে সিসিইউতে ভর্তি আছেন৷ ‘‘সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন৷ ওর অটিস্টিক ছেলে আর মেয়ে ওর অপেক্ষায় আছে৷’’

আব্দুর রহিম নামে আরেক চিকিৎসকের পোস্ট: ‘‘শুক্রবার, ভোর ৪টা৷ ডা. মোস্তাফিজ এবং আমি ঢাকা শহরের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে রেফার্ড করা রোগী দেখতে রাউন্ডে যাচ্ছি৷ সবাই মানসিক শক্তি সঞ্চয় করেন৷’’

চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন না এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘আমি সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার৷ নিজের অভিজ্ঞতাই বলি৷  সম্প্রতি সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত এক শিশুকে নিয়ে তার বাবা হাসপাতালে আসলে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে চাই৷ কিন্তু ওই ব্যক্তি রাজি হন নাই৷ পরীক্ষা ছাড়াতো আমি নিশ্চিত হতে পারছি না শিশুটি করোনা আক্রান্ত কিনা৷ তাই কিছু বলতেও পারিনি৷ শেষ পর্যন্ত ওই ব্যক্তি ছেলেকে নিয়ে চলে যান৷

‘‘অবহেলার ঘটনা একেবারে নেই সেটা বলছি না৷ কিন্তু বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা দিয়ে আপনি গণহারে ডাক্তাদের দোষ দিচ্ছেন এটা ঠিক না৷ আমাদের এখন প্রচণ্ড মানসিক চাপ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে৷ শারীরিক পরিশ্রমও বেড়েছে৷ দয়া করে চাপ আর বাড়াবেন না৷ আমরাও মানুষ৷ আমাদের সহ্যেরও সীমা আছে৷’’

হাতে পাওয়া পিপিই নিয়েও ডাক্তারদের ক্ষোভ রয়েছে৷ অনেকে বলছেন, এগুলো রেইন কোর্ট বলা বরং ভালো৷ ভাইরাস সংক্রমণ আটকাতে কতটা সক্ষম তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷

বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বেতন না পাওয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন৷

এসএনএল/কেএম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ