‘সীতাকুণ্ডের ডিপোতে থাকা কেমিক্যাল বৈধ পথে আসেনি’
১০ জুন ২০২২এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন৷
ডয়চে ভেলে : দেশে যে কেমিক্যাল আমদানি হয়, সেখানে তো পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়৷ সবাই কি অনুমোদন নেয়?
শাহাব উদ্দিন : কারো কেমিক্যাল আমদানি করতে হলে আমাদের অনুমোদন নিতে হয়৷ না নিয়ে যদি কেউ আনেন, সেটা অবৈধ হবে৷
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ডিপোতে যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটলো, সেখানে তো বিপুল পরিমান হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল৷ এটা কি আপনাদের অনুমতি নিয়ে আনা হয়েছিল? ওখানে কেমিক্যাল থাকার খবর আপনারা কি জানতেন?
আমাদের চট্টগ্রাম কার্যলয় এ নিয়ে একটা প্রাথমিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আমাকে দিয়েছে৷ সেখানে তারা উল্লেখ করেছে, গত ৪ জুন সন্ধ্যায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে৷ এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম অফিসের কর্মকর্তারা সরেজমিনে ওই এলাকা পরিদর্শন করেন৷ ডিপোটি কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিলেও প্রতিষ্ঠানটিতে সাধারণ পণ্যের কন্টেইনার ছাড়াও কেমিক্যাল বা সমজাতীয় বস্তু বা পদার্থ মজুদ করতো বলে প্রতীয়মান হয়৷ এটার জন্য বৃহস্পতিবার তাদের শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে৷ পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এটা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন৷
অনুমতি না নিয়ে যদি কেউ কেমিক্যাল আনেন বা রাখেন, এমন কাউকে কি আপনার কখনো শাস্তির আওতায় এনেছেন?
হ্যঁ, আনা হয়৷ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়৷ শুনানি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷
পরিবেশ আইনে কিখোলা জায়গায় কেমিক্যাল রাখার সুযোগ আছে?
এখানে যে কেমিক্যাল রাখা হয়েছিল, সেটার জন্য তো তারা কোনো অনুমতি নেয়নি৷
দেশে যে কেমিক্যাল আমদানি হয়, এটা কি সঠিক পন্থায় হয়? মন্ত্রণালয়ের কাছে এসবের তথ্য কতটুকু থাকে?
বৈধ পথে আনলে তো আমাদের কাছে হিসাব থাকে৷ আর যে অবৈধ পথে আনে, সে তো অবৈধ৷ তাদের বিরুদ্ধে তো আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷
সীতাকুন্ডের অগ্নিকান্ডের পর চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দ্রুত নিলাম করা হলো৷ এতদিন তাহলে কেন সেখানে এভাবে পড়ে ছিল? আপনারা কি জানতেন না?
আমাদের জানা ছিল না হয়ত৷ ওই ডিপোতে তারা আমাদের কাছ থেকে যে ছাড়পত্র নিয়েছিল, সেখানে তো কেমিক্যালের ছাত্রপত্র নেয়নি৷
সব সময় কি অনুমোদিত দেশ থেকেই কেমিক্যাল আমদানি করা হয়?
আমাদের কাছ থেকে তো ছাড়পত্র নিতে হয়৷ এই ছাড়পত্র আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তর দিয়ে থাকে৷ যারা ছাড়পত্র নেন তারা তো বৈধভাবেই আমদানি করেন৷ আর যিনি ছাড়পত্র নেন না তিনি তো অবৈধ৷ যেখান থেকে তিনি আনুক না কেন সেটা অবৈধ৷
আপনারা ছাড়পত্র দেওয়ার আগে কি দেখেন একটি কোম্পানির যে পরিমাণ কেমিস্ট থাকার উচিৎ, সেটা আছে কিনা?
সীতাকুণ্ডে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে তো তারা অনুমতি নেয়নি৷ ফলে তাদের শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে৷ তারা জবাব দিতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
জ্বালানি তেলের কন্টেইনার বা গাড়ির গায়ে লেখা থাকে বা আলাদা রঙ থাকে৷ কিন্তু কেমিক্যালের কন্টেইনারে বা গাড়িতে কিছুই লেখা থাকে না৷ লেখা থাকলে তো মানুষ এসব কন্টেইনার দেখে সতর্ক হতে পারেন? লেখা থাকলে হয়ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও সতর্ক হতেন, এত হতাহত হতো না? এমন কোনো সুপারিশ কি আপনারা কখনো করেছেন?
শুধু তো আমরা না, আরো অনেক জায়গা থেকে তাদের অনুমতি নিতে হয়৷ আমরাও মনে করি, এটা লেখা থাকা উচিৎ৷
যেসব জায়গায় কেমিক্যাল থাকে, সব জায়গা কি সুরক্ষিত? আমরা তো কয়েকদিন পরপরই দেখি পুরান ঢাকায় কেমিক্যালের গুদামে আগুন লেগে হতাহতের ঘটনা ঘটে৷ যারা অবৈধভাবে কেমিক্যাল রাখেন বা নিয়ম মেনে রাখেন না, তাদের বিরুদ্ধে কি আসলে কখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়?
যারা অবৈধভাবে রাখেন, তাদের বিরুদ্ধে তো আইন প্রয়োগ করা হয়৷
আগুন লাগলেই একে অপরের উপর দায় চাপানোর একটা চেষ্টা শুরু হয়৷ এতে কি মূল ঘটনা চাপা পড়ে যায় না?
এই যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটা তো মর্মান্তিক৷ এটার কারণ অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে৷ দায়ী যারা, তাদের বিরুদ্ধে তো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে৷
কেমিক্যাল আমদানি বা রাখা নিয়ে সবসময়ই এক ধরনের লুকোচুরি আমরা দেখি৷ অনেক সময় তথ্য গোপন করা হয়৷ এই প্রবণতা কেন?
যারা অবৈধভাবে আমদানি করে, তারাই বলতে পারবে তারা কেন এটা করে৷ তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে পারলে এই প্রবণতা কমে যাবে৷