চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি একটি কনটেইনার ডিপোতে আগুনের পর ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷
বিজ্ঞাপন
দগ্ধ ও আহত শতাধিক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে কদমরসুল এলাকায় বিএম ডিপো নামের ওই কন্টেইনার টার্মিনালে আগুন লাগে৷ পরে রাসায়নিকের কন্টেইনারে একের পর এক বিকট বিস্ফোরণ ঘটতে থাকলে বহু দূর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে৷
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সবগুলো ইউনিট চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় রাত সাড়ে ৩টার দিকে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে অগ্নিনির্বাপক গাড়ি পাঠাতে অনুরোধ করা হয়৷
বাংলাদেশে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও ভবন ধসের কিছু ঘটনা
ভয়াবহ ভবন ধস আর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাংলাদেশে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ এর প্রধান কারণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা৷ বাংলাদেশের কিছু ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা এখানে তুলে ধরা হল৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Hasan
নিমতলী বিস্ফোরণ, ২০১০
২০১০ সালের ৩রা জুন ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১২৪ জন মানুষ৷ একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের বিস্ফোরণ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল আশেপাশের ভবনে৷ নিমেষে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/A. Abdullah
আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় আগুন, ২০১২
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর৷ আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশন ফ্যাক্টরির ৯ তলা ভবনে আগুন লেগে প্রাণ হারান ১১২ জন শ্রমিক৷ তদন্তে জানা যায়, ঐ কারখানায় আগুন দেয়া হয়েছিল এবং কর্তৃপক্ষ ফ্যাক্টরির সব দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল, যাতে শ্রমিকরা বের হতে না পারে৷
ছবি: Reuters
রানা প্লাজা ধস, ২০১৩
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে পোশাক কারখানা রানা প্লাজার ৯ তলা ভবনটি বিধ্বস্ত হয়৷ বিশ্বের ভয়াবহ শিল্পকারখানা দুর্ঘটনার একটি এটি৷ এই ঘটনায় প্রাণ হারান ১১শ’রও বেশি মানুষ৷ আহত হন অন্তত ২ হাজার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Abdullah
টঙ্গীতে কারখানায় আগুন, ২০১৬
ঢাকার উত্তরে টঙ্গীতে একটি সিগারেট তৈরির কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রাণ হারান ৩১ জন৷ ঐ ভবনের নীচে ছিল রাসায়নিক গুদাম৷ ফলে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়েছিল আগুন৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com
গাজীপুরে কারখানা ধস, ২০১৭
গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানার পেছনে বয়লার বিস্ফোরণে ১৩ জন মানুষ প্রাণ হারান, ২০১৭ সালের ৪ জুলাই৷ ভাগ্য ভালো যে, সে সময় ঈদের ছুটি থাকায় অনেক শ্রমিক কারখানায় ছিলেন না৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Hasan
চকবাজার ট্র্যাজেডি,২০১৯
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯৷ সারাদেশের মানুষ যখন একুশের ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে জেগে উঠেছিলেন, ঠিক সে সময় পুরান ঢাকার চকবাজারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে৷ দমকল বাহিনী পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও সরকারি তথ্যমতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে অন্তত ৭৮ জনের মৃত্যু ঘটে।
ছবি: picture-alliance/Xinhua/S. Reza
ঝালকাঠিতে লঞ্চে আগুন, ২০২১
২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে একটি লঞ্চে আগুন ধরে যায়। ইঞ্জিন থেকে ছড়িয়ে পড়া সেই আগুনে অন্তত ৩৮ জনের প্রাণহানি ঘটে।
ছবি: Str/REUTERS
সেজান জ্যুস কারখানা, ২০২১
নারায়ণগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জ্যুসের কারখানায় লাগা আগুনে অন্তত ৫২ জন নিহত হন, আহত হন কমপক্ষে ২০ জন।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/Reuters
সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে আগুন, ২০২২
২০২২ সালের ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এক পর্যায়ে মজুদ রাসায়নিকে বিস্ফোরণের ফলে চার শতাধিক কন্টেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় অন্তত ৪১ জন নিহত হন, ৪৫০ জনেরও বেশি আহত হন।
ছবি: Stringer/Reuters
বঙ্গবাজারে আগুন, ২০২৩
২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকার গুলিস্থানের বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই পুড়ে ছাই হয় প্রায় সব দোকান। বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির দাবি, এই আগুনে ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার।
ছবি: Mahmud Hossain Opu/AP/picture-alliance
বেইলি রোডের আগুন, ২০২৩
২০২৩ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বেইলি রোডে একটি ছয়তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৬ জন মারা যান৷ ভবনটিতে কাচ্চি ভাইসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ছাড়াও পোশাক ও মোবাইল ফোনের দোকান ছিল।
রাসায়নিকের কারণে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেকে৷
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, মোট ৪৯ জনের মরদেহ মার্গে এসেছে৷ তাদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের উপ-সহকারী পরিচালক শাহজাহান সিকদার৷
আহত ও দগ্ধদের মধ্যে অন্তত ১১ জন পুলিশও রয়েছেন৷ তাদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে৷
মেডিকেলের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন বেরসকারি হাসপাতালেও রোগীদের নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াস রাতেই আহতদের সেবায় নগরীর চিকিৎসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সকালে ডিপোতে এসে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো আশরাফ উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা এবং প্রাথমিকভাবে আহতদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সব বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্রুত তদন্ত কমিটি করা হবে।
সেনাবাহিনীর ১ ইঞ্জিনিয়ার কোরের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিরা সুলতানা বলেন, "সমুদ্রে যাতে রাসায়নিক না যায়, সেটা প্রটেক্ট করাই এখন আমাদের মূল কাজ। সে লক্ষে কাজ চলছে। কিন্তু কয়টা কন্টেইনারে রাসায়নিক ছিল তা এখনো জানা যায়নি।”
ঘটনাস্থলে বিএম ডিপোর জেনারেল ম্যানেজার (সেলস ও মার্কেটিং) নাজমুল আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, "তদন্তের পর বোঝা যাবে, কেন আগুন লাগলো। স্যাবোটাজও হতে পারে। কী হয়েছে কেবল তদন্ত বলতে পারবে।”
তার সঙ্গে থাকা ডিপোর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল আলম খান স্বপন বলেন, "হাজার কোটি টাকার পণ্য আছে এই ডিপোতে। শত শত কন্টেইনার পুড়েছে। রাতে সব রকমের কর্মীরা কাজ করছিল। দেশের জন্য বিরাট ক্ষতি। কারণ, এখানে বেশিরভাগ রপ্তানি পণ্য।”