পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র এবং সুইজারল্যান্ডের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরোপের পর জার্মানিতে নিয়মিত অভিবাসনের হার ৪০ শতাংশ কমেছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে গণমাধ্যম।
বিজ্ঞাপন
জার্মান সংবাদমাধ্যম ভেল্ট আম সনটাগ এ বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে যোগাযোগ করেছিল ফেডারেল পুলিশের সঙ্গে। পুলিশ জানিয়েছে, অক্টোবর ১৬ তারিখের পর থেকে দিনে ৩০০টিরও কম অনিয়মিত সীমান্ত প্রবেশের ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছে তারা। এর আগের ৩০ দিনে এই সংখ্যা ছিল দিন ৭০০ এর কাছাকাছি।
অক্টোবর ১৬ এর আগের ৩০ দিনে এই তিন দেশ এবং অস্ট্রিয়া সীমান্তে মোট ১৮ হাজার ৪৯২ অনিয়মিত প্রবেশের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। অস্ট্রিয়া সীমান্তে ২০১৫ সাল থেকেই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
অন্যদিকে অক্টোবর ১৬ এর পর থেকে ৩০ দিনে মোট অনিয়মিত প্রবেশের সংখ্যা ৪০ শতাংশ নেমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ২৯ জনে।
সাক্সনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরমিন শুস্টার ভেল্ট আম সনটাগকে বলেছেন, এই সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ 'প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে'।
পুলিশ অবশ্য এর পেছনে অন্য একটি কারণও দেখছে। হাঙ্গেরি সীমান্তে সার্বিয়াও কড়াকড়ি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। বলকান রুটে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের অনেকেরই লক্ষ্য থাকে জার্মানিতে আসার।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ৩৪ হাজার আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় ৭৩ শতাংশ বেশি।
জার্মানিতে অভিবাসন: কে, কেমন সুবিধা পাচ্ছে?
জার্মানিতে শরণার্থীরা কী ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা পান তা নিয়ে নানা সময় নানা ধরনের বক্তব্য দেন রাজনীতিবিদরা৷ এই নিয়ে বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়৷ চলুন জেনে নেই এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য৷
ছবি: Bodo Schackow/dpa/picture alliance
স্বাস্থ্যসেবা
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা শুধুমাত্র অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা এই দাঁতের চিকিৎসা পেয়ে থাকেন৷ এধরনের সেবা বলতে শারীরিক আঘাত পাওয়ার মতো ব্যাপার বোঝানো হয় যার চিকিৎসা হাসপাতালে হয়ে থাকে৷ জার্মানির সমাজ কল্যাণ দপ্তর সেই সেবার খরচ বহন করে৷
ছবি: picture alliance/dpa/I. Wagner
রাজ্যভেদে নিয়ম আলাদা
জার্মানির ষোলো রাজ্যে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ তবে অধিকাংশ রাজ্যে, আশ্রয়প্রার্থীরা চিকিৎসা নেয়ার আগে সমাজ কল্যাণ দপ্তর থেকে সেটির অনুমতি নিতে হয়৷
ছবি: Paul Zinken/dpa/picture alliance
নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা
তবে, জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করার পর ১৮ মাস পেরিয়ে গেলে কিংবা আশ্রয় মঞ্জুর হয়ে গেলে তখন সেই ব্যক্তি নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন, যার খরচ সংবিধিবিদ্ধ স্বাস্থ্য বিমা তহবিল থেকে আসে৷ কসমেটিক সার্জারির খরচ স্বাস্থ্যবিমা বহন করে না৷
ছবি: Friso Gensch/dpa/picture alliance
প্রাথমিক আশ্রয় ও আবাসন
জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীরা শুরুতে বিভিন্ন প্রাথমিক অভ্যর্থনাকেন্দ্রে থাকার সুযোগ পান৷ এগুলোতে সাধারণত অনেক মানুষ একত্রে থাকেন৷ সেখানে রুম শেয়ার করে থাকতে হয়৷ তবে সেখানে নিজেদের রান্নাবান্না করার আয়োজন থাকার পাশাপাশি সব বেলা খাবার সরবরাহও করা হয়৷ এসব কেন্দ্রে কয়েক সপ্তাহ থেকে ১৮ মাস অবধি থাকতে হতে পারে৷
ছবি: Patrick Pleul/picture alliance/dpa
আশ্রয়প্রার্থীদের ছড়িয়ে দেয়া হয়
অভ্যর্থনাকেন্দ্র থেকে আশ্রয়প্রার্থীদেরকে একপর্যায়ে বিভিন্ন শহরে থাকা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া হয়৷ এসবকেন্দ্রে কয়েক ডজন থেকে কয়েকশত মানুষ একত্রে থাকেন৷
ছবি: Markus Schreiber/AP Photo/picture alliance
আর্থিক সহায়তা
একজন আশ্রয়প্রার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে সাধারণত প্রয়োজনীয় সবকিছু পেয়ে থাকেন৷ এসবের মধ্যে রয়েছে, খাবার, থাকার ব্যবস্থা, হিটার, পোশাক, প্রসাধনী, এবং গৃহস্থলিতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য৷ পাশাপাশি একক ব্যক্তিরা পকেট খরচ হিসেবে মাসে ১৫০ ইউরো অবধি পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তবে ব্যতিক্রমও আছে
যদি আশ্রয়প্রার্থীকে খাদ্য, পোশাক এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ সম্ভব না হয়, তখন তাকে প্রতিমাসে সেসবের জন্য প্রতিমাসে ৩৬৭ ইউরো দেয়া হয়৷ পাশাপাশি তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে পারেন৷ কিন্তু সেজন্য মাসে ২০০ ইউরোর বেশি নিতে পারবেন না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য
জার্মান রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে দেশটিতে আশ্রয় নেয়া আশ্রয়প্রার্থীদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে৷ এ নিয়ে বিতর্কও দেখা দেয়৷ কারণ, সেখানে অতিরঞ্চিত তথ্যও থাকে৷ ডয়চে ভেলে তাই এধরনের কিছু তথ্য যাচাই করেছে৷