নেপালের কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে বিহার রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে ভারতীয়রা দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করলে নিরাপত্তা রক্ষীরা বাধা দেয়৷ এসময় তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে৷ প্রায় একশো ভারতীয় নেপালের বাহিনীর দিকে পাথর ছোঁড়ে৷ দেশটির আর্মড পুলিশ ফোর্সের সহকারী ইন্সপেক্টর জেনারেল নারায়ণ বাবু থাপা ডিপিএকে বলেছেন, ‘‘আমাদের সদস্যরা তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে৷ কিন্তু তারা এসময় পাথর ছুঁড়তে থাকে এবং বন্দুক ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে৷''
এদিকে একজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে ভারতীয় পুলিশও৷ রাজেশ চন্দ্র নামের একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, নেপালের পুলিশ সতর্ক করার জন্য প্রথমে গুলি ছোঁড়ে৷ পরবর্তীতে সংঘর্ষ বাধলে গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়৷ নেপালে অবস্থানরত স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তারা সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করছিলেন বলে দাবি করেন তিনি৷
এদিকে সংঘর্ষে নিহত ২৭ বছর বয়সী বিকাশ কুমার রায়ের মরদেহ শনিবার ফেরত দিয়েছে নেপালের পুলিশ৷ সেই সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত একজনকে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া৷
নেপালে সঙ্গে ভারতের সীমান্ত উন্মুক্ত থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে গত মার্চ থেকে পারাপার বন্ধ রয়েছে৷
এফএস/জেডএ (এপি, ডিপিএ)
ভারত ও চীনের মধ্যে একবারই যুদ্ধ হয়েছিল। ১৯৬২ সালে। কিন্তু তার আগে ও পরে অনেকবারই সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে এই দুই দেশ। সেই সংঘাতের কাহিনি দীর্ঘ এবং রক্তাক্ত।
ছবি: Getty Images/Three Lions/Radloffচীন তিব্বতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলো ১৯৫১ সালে। তার আট বছর পরে চতুর্দশ দলই লামা পালিয়ে ভারতে আসেন। ভারত তাঁকে আশ্রয় দেয়। চীন তার বিরোধিতা করে। তারপর শুরু হয় সীমান্তে দুই সেনার সংঘর্ষ।
ছবি: APসীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছে প্রচুর। কিন্তু যুদ্ধ একবারই। ১৯৬২ সালে এক মাস এক দিনের লড়াইয়ে ভারতীয় ভূখন্ডে ঢুকে পড়ে চীন। অরুণাচল প্রদেশে ও লাদাখের ভিতরে। ভারত ছিলো অপ্রস্তুত। চীন সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলো।
ছবি: Getty Imagesভারত ও চীনের মধ্যে চার হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত রয়েছে। সহজভাবে বললে, যুদ্ধের পর দুই দেশের সেনা যেখানে অবস্থান করছে, সেটাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা।
ছবি: Getty Imagesপাঁচ বছরের মধ্যে অবস্থা বদলে গেলো। ১৯৬৭-র ১১ সেপ্টেম্বর চীনা সেনা নাথু লা-য় ভারতীয় পোস্ট আক্রমণ করে। পাঁচ দিন ধরে সংঘর্ষ চলে। এ বার ভারত ছিলো সুবিধাজনক অবস্থায়। তারা চীনা সেনাকে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করে। সংঘর্ষ হয় চো লা-তেও।
ছবি: Diptendu Dutta/AFP/Getty Imagesআবার উত্তেজনা ২০ বছর পরে, সামডরং উপত্যকায়। ভারত তখন অপারেশন চেকারবোর্ড চালাচ্ছিলো। কত তাড়াতাড়ি আসাম থেকে সীমান্তে সেনা পৌঁছনো যায় তা নিয়ে। সেখান থেকেই উত্তেজনা। দুই দেশের সেনা সামনাসামনি। তবে সংঘর্ষ হয়নি।
ছবি: picture-alliance/AP Photoএ বার বিরোধ ২০১৭-তে, ডোকলামে। ভারত, ভূটান ও চীনের সীমান্তে। চীনের সেনা একটা রাস্তা বানাতে থাকে। ভারতীয় সেনাও বুলডোজার নিয়ে চলে যায় তা থামাবার জন্য। সেই সংঘাত ৭৩ দিন চলে। অবশেষে কূটনৈতিক আলোচনার পর বিরোধ মেটে।
ছবি: APএ বার ২০২০-তে। আবার লাদাখ। প্রথমে দুই সেনার হাতাহাতি লড়াই। সিকিমেও একই ঘটনা ঘটলো। চীনের প্রেসিডেন্ট বললেন, তিনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। তারপর ভারত ও চীন দুই পক্ষই সীমান্তে প্রচুর সেনা মোতায়েন করেছে। দুই দেশই প্রচুর কামান ও গোলাবারুদ নিয়ে গিয়েছে।
ছবি: Eesha Khenyচীন দাবি করে অরুণাচল প্রদেশ তাঁদের এলাকা। বিশেষ করে তাওয়াং শহর। অরুণাচলের লোকের চীনে যেতে ভিসা লাগবে না। ভারত জানায়, অরুণাচল তাদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
ছবি: picture-alliance/dpa/dinodiaভারতের দাবি, আকসাই চীন তাদের এলাকা। চীন জবরদখল করে রেখেছে। ১৯৬২ থেকেই এ নিয়ে বিরোধ চলছে। এখানে কোনও মানুষের বসতি নেই। কিন্তু সামরিক দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।
ভারত ও চীনের সম্পর্ককে বলা হয় ব্লো হট, ব্লো কোল্ড রিলেশন বা নরমে-গরমের সম্পর্ক। মাঝে মাঝেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তেজনা হয়। আবার শান্তি আসে। দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর। দুই দেশের সেনা শক্তিশালী। তাই তা আর যুদ্ধের দিকে যায় না।
ছবি: Reuters/Handout