সীমান্তে বিপুল সেনা সমাবেশ করেছে রাশিয়া। বিরোধ মেটাতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনের সঙ্গে আলোচনা চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জিলেনস্কি।
বিজ্ঞাপন
পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা নিয়ে এখন দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। সীমান্তে প্রচুর সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ''আমি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। আমি তাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি পূর্ব ইউক্রেনে, যেখানে সংঘর্ষ চলছে, আসুন, সেখানে আমরা আলোচনায় বসি।'' তিনি বলেছেন, ''রাশিয়া ও ইউক্রেনের আলোচনাকারীরা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দুই দেশের ট্রেঞ্চ ঘুরে দেখার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন।''
সীমান্তে উত্তেজনা
ইউক্রেনের অভিযোগ, রাশিয়া সীমান্তে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে। অ্যামেরিকা এবং ইইউ-ও ইউক্রেনের দাবি সমর্থন করেছে। জার্মানি ও ফ্রান্সের দাবি, অবিলম্বে রাশিয়াকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। মস্কোর বক্তব্য, প্রশিক্ষণ ও মহড়ার জন্যই সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ''রাশিয়া বিপুল সংখ্যক সেনা সীমান্তে মোতায়েন করেছে। তারা বলছে, সামরিক মহড়া চলছে। আর বাকি পুরো বিশ্ব বলছে, এটা আসলে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট একবার বলেছিলেন, লড়াই অনিবার্য হলে প্রথমে আঘাত করা দরকার। কিন্তু প্রত্যেক নেতাকে বুঝতে হবে, লড়াই কখনো অনিবার্য হয় না। লড়াই হলে লাখ লাখ মানুষ বিপন্ন হন।''
ছবিতে রুশ-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব
কের্শ প্রণালী থেকে তিন ইউক্রেনীয় জাহাজ আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে৷ এই দ্বন্দ্ব আর শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, ইউরোপ ছাড়িয়ে এর উত্তাপ ছুঁয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Volskii
যেভাবে শুরু
ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সাথে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের সংযোগ স্থাপনকারী সেতুর ওপর রুশ জেট বিমান উড়ছে৷ ইউক্রেনের তিন কার্গো জাহাজ আটকের পর এভাবেই মহড়া দেয় রুশ বিমানবাহিনী৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
আটক জাহাজ
ইউক্রেনের জাহাজ তিনটি কৃষ্ণ সাগর থেকে কের্শ প্রণালী হয়ে আজভ সাগরে যাচ্ছিল৷ এক চুক্তি অনুযায়ী কের্শ প্রণালীতে রাশিয়া ও ইউক্রেন, দুই দেশেরই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে৷ কিন্তু রাশিয়ার দাবি, বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সীমা লঙ্ঘন করে রাশিয়ার সীমানায় ঢুকে পড়েছিল জাহাজগুলো৷
ছবি: Reuters/A. Dmitrieva
আটক নাবিক
জাহাজগুলোতে থাকা নাবিকদের আটক করেছে রুশ নৌবাহিনী৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ক্রাইমিয়ার আদালতে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ক্রাইমিয়ার সিম্ফারপোলে আদালতে এক আটক ইউক্রেনীয় নাবিককে নিয়ে যাচ্ছেন রাশিয়ার এফএসবির নিরাপত্তা সদস্য৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
ইচ্ছাকৃত উসকানি!
আদালতে শুনানিতে ইউক্রেনের নাবিক ইউরি বুদসিলোকে তাঁর আইনজীবীর সাথে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে৷ পুরো ঘটনার জন্য ইউক্রেন রাশিয়াকে দায়ী করলেও রুশ সেনাবাহিনীর দাবি, বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও রুশ জলসীমায় ঢুকে পড়ে ইউক্রেনের জাহাজ৷ এই বক্তব্যের সমর্থনে আটক নাবিকদের স্বীকারোক্তিও প্রচার করা হয়েছে রুশ গণমাধ্যমে৷ তবে ‘ভয় দেখিয়ে’ এমন কথা বলতে নাবিকদের বাধ্য করা হয়েছে, দাবি ইউক্রেনের৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
মার্শাল ল’
রাশিয়ার ‘অনভিপ্রেত’ ও ‘আগ্রাসী’ মনোভাবের কড়া জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেংকো৷ তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে রুশ সীমান্তের বেশ কিছু এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির পার্লামেন্ট৷ পাশাপাশি, আজভ সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠাতে ন্যাটোকে আহ্বান জানিয়েছেন পোরোশেংকো৷
ছবি: Reuters/V. Ogirenko
প্রতিবাদ, বিক্ষোভ
জাহাজ আটকের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে৷ বিশেষ করে উগ্র ডানপন্থি দলগুলো আয়োজন করেছে বিক্ষোভ কর্মসূচির৷ কিয়েভে পার্লামেন্ট ভবন এবং রুশ দূতাবাসের সামনে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে ডানপন্থিরা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রুশ দূতাবাসে ইউক্রেনের পতাকা ওড়ানোর চেষ্টা করছেন এক বিক্ষোভকারী৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gimanov
6 ছবি1 | 6
আর রাশিয়ার অভিযোগ, অ্যামেরিকা ও ন্যাটোর দেশগুলি কৃষ্ণসাগরে উসকানিমূলক কাজ করছে।
কূটনৈতিক পথে সমাধান চায় ইউক্রেন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চান। তবে আক্রান্ত হলে ইউক্রেন নিজেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি। তিনি বলেছেন, ''ইউক্রেন কি যুদ্ধ চায়? এর জবাব হলো, না। ইউক্রেন কি যুদ্ধের জন্য তৈরি? এর উত্তর হলো হ্যাঁ।''
পূর্ব ইউক্রেনের সংঘাতের সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জিলেনস্কি ২০১৯ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া নিয়ে নেয়। তারপর থেকে রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পূর্ব ইউক্রেনে লড়াই করছে। এপর্যন্ত সংঘাতে ১৩ হাজার মানুষ মারা গেছেন।