বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্তে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখছে মিয়ানমার৷ গত তিনদিন ধরেই মাইনগুলো পুঁতে রাখা হচ্ছে৷ এর প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের দু'টি সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, মিয়ানমার বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্তে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখছে৷ সূত্র দু'টি জানিয়েছে, যেসব রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তারা যেন আবার মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে, সেজন্যই হয়তো মাইনগুলো পুঁতে রাখা হচ্ছে৷
সীমান্তের কাছে মাইন পুঁতে রাখার ঘটনায় বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ৷ মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্টদূত অং মিন্টকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এই প্রতিবাদ জানানো হয়৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মঞ্জুরুল করীম তাঁকে তলব করেন এবং এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানান৷ পাশাপাশি বাংলাদেশে অপ্রত্যাশিতভাবে অত্যধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করায় তাকে একটি অনানুষ্ঠানিক পত্র হস্তান্তর করা হয়৷
সীমান্তে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখা আন্তর্জাতিক আইনের বরখেলাপ: অধ্যাপক শাহেদুজ্জামান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহেদুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সীমান্তে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখা আন্তর্জাতিক আইনের বরখেলাপ৷ কারণ, এখন তো কোনো যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে না৷ আসলে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আইন বা যুদ্ধকালীন আইন কোনোটারই তোয়াক্কা করছে না৷ তারা তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করছে৷ আমাদের পররাষ্ট্র দফতরের উচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ আকর্ষণ করা৷ যদিও তারা উত্তর কোরিয়া নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে৷ ভারত ও চীনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে আমরা কোনো সহযোগিতা পাবো না৷ আমি শুনেছি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান যুদ্ধাপরাধী৷ অতীতেও তিনি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযান চালিয়েছেন৷ ইউরোপের কয়েক জায়গায় বক্তৃতা দিয়ে তিনি বলেছেন, বাঙালি নিধন এখন তার অন্যতম উদ্দেশ্য৷ এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কার্যকরভাবে পদক্ষেপ নেয়া উচিত৷’’
রয়টার্সের এক রিপোর্টেও ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ রয়টার্সের কাছে এসব তথ্য জানালেও সংবেদনশীলতার কারণে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেননি তথ্যদাতারা৷ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে দ্বিতীয়বারের মতো অভিযান শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪শ' রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছে৷ এছাড়া প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সীমান্তের পিলারের মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়ায় নিজেদের এলাকায় ল্যান্ডমাইন পুঁতে রেখেছে মিয়ানমার৷ মূলত বিভিন্ন প্রমাণ এবং গুপ্তচরদের কাছ থেকেই মাইন পুঁতে রাখার খবর তারা পেয়েছে৷ মনজুরুল হাসান খান নামে এক বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী রয়টার্সকে বলেছেন, মঙ্গলবার মিয়ানমারের কাছ থেকে দু'টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে৷ সোমবারও দু'টি বিস্ফোরণ হয়েছে৷ তবে সীমান্তে বিস্ফোরণের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী৷ এগুলো মাইনের বিস্ফোরণ বলে ধারণা করা হচ্ছে৷’’
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশ যাত্রা
নিজের দেশে সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা৷ তবে জাতিসংঘের অনুরোধ সত্ত্বেও সীমান্তে কড়াকড়ি অব্যাহত রেখেছ বাংলাদেশ৷ আজও রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী মনে করে মিয়ানমার৷
আশ্রয়ের সন্ধান
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের পরিকল্পিত হামলার জের ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর দমনপীড়ন শুরু করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী৷ ফলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের সীমান্তের দিকে ছুটছেন রোহিঙ্গারা৷ সর্বশেষ অস্থিরতায় ইতোমধ্যে প্রাণ গেছে একশ’র বেশি মানুষের৷
ব্যাপক উদ্বাসন
বাংলাদেশের সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার মাঝখান থেকে এক রোহিঙ্গা শিশুকে পার করছেন এক ব্যক্তি৷ মিয়ানমার সরকার দাবি করেছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা সাতটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, একটি চেকপোস্ট এবং এক শহরের দুই প্রান্তে হামলা করেছে৷
ছবি: Getty Images/R.Asad
বৌদ্ধ শরণার্থীরা ছুটছে দক্ষিণের দিকে
নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার বৌদ্ধরাও নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজছেন৷ রোহিঙ্গা মুসলমান এবং রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ ২০১২ সালে সেখানে রক্তাক্ত দাঙ্গা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রবেশ নিষেধ
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা আশ্রয়প্রত্যাশী রোহিঙ্গাদের সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন৷ তবে এ সব বাধার মাঝেও তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন৷ বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চারলাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
মানবিক সংকট
একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার কর্মী লিখেছেন: ‘‘অনেক রোহিঙ্গাকে আমরা অসুস্থ অবস্থায় পাচ্ছি৷ এর কারণ তাঁরা বাংলাদেশে প্রবেশের আগে দীর্ঘসময় সীমান্তে আটকে ছিলেন৷ অসুস্থদের মধ্যে নারী এবং শিশুদের সংখ্যা বেশি৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Alam
বাংলাদেশে স্বাগত নয়
কক্সবাজারের কুতুপালাং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া একদল রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের একটি দ্বীপে সরিয়ে নিতে চাচ্ছে যেটি বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ সময় পানির নীচে তলিয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
নো ম্যান’স ল্যান্ডের আটকে থাকা
পানির মধ্যে দিয়ে হেঁটে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গা শিশুরা৷ এই মুহূর্তে ছ’হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
7 ছবি1 | 7
এর আগেও মিয়ানমার সীমান্তে জিরো লাইনের আশেপাশে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর পুঁতে রাখা মাইনের কারণে বিজিবি সেখানে যেতে পারতো না৷ পুঁতে রাখা এসব মাইন ও ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণে নিহত ও আহতের ঘটনা পরিহার করতে মিয়ানমার পুলিশ ফোর্স (এমপিএফ) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-র মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়৷ গত এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত অতিরিক্ত মহাপরিচালক (বিজিবি) ও এমপিএফ-এর মধ্যে ৫ দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শেষে এক যৌথ ব্রিফিংয়ে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিসুর রহমান এ কথা জানিয়েছিলেন৷
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সীমান্তে ল্যান্ড মাইন পুঁতে রাখা আন্তর্জাতিক আইনের বরখেলাপ৷ এখন তো তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যুদ্ধ চলছে না৷ তাহলে তারা কেন মাইন পুঁতে রাখবে? এর জন্য বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী প্রতিবাদ জানানো উচিত৷’’ বাংলাদেশ যে প্রতিবাদ করছে সেটা আরো জোরালো হওয়া উচিত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ করছে৷ পাশাপাশি তাঁর হাতে একটি চিঠিও ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ এটাই তো হওয়া উচিত৷ এর বাইরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করে তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে৷’’
আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতিবাদ জানানো উচিত: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘকে ড. ইউনূসের খোলা চিঠি
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিরসনে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন ড.মুহাম্মদ ইউনূস৷ মঙ্গলবার ইউনূস সেন্টার থেকে গণমাধ্যমের কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়৷ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ও সদস্যদের উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন এলাকায় মানবিক ট্রাজেডি ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে৷ এ ব্যাপারে অবিলম্বে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন৷
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আক্রমণে শত শত রোহিঙ্গা জনগণ নিহত হচ্ছে৷ লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে৷ বহু গ্রাম সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে, বেসামরিক মানুষকে নির্বিচারে আটক করা হচ্ছে এবং শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে৷ আতঙ্কের বিষয়, মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে ওই এলাকায় প্রায় একেবারেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না৷ যার ফলে দারিদ্র্যপীড়িত ওই এলাকায় মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে৷ চিঠিতে আরো বলা হয়, গত ১২ দিনে এক লাখ বিশ হাজারেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ মৃত্যুর মুখে নারী, পুরুষ ও শিশুদের এই ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ও অভিবাসন থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি প্রতিদিন আরো খারাপ হচ্ছে৷
ড. মুহাম্মদ ইউনূস চিঠিতে জাতিসংঘের উদ্দেশে বলেন, ‘‘গত বছরের শেষে পরিস্থিতির বেশ অবনতি ঘটলে বেশ কয়েকজন নোবেল লরিয়েট ও বিশ্বের বিশিষ্ট নাগরিকসহ আমি এ বিষয়ে জরুরি হস্তেক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আপনাদের নিকট যৌথভাবে অনুরোধ জানিয়েছিলাম৷ আপনাদের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি৷ এবার পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতির প্রেক্ষিতে নিরীহ নাগরিকদের ওপর অত্যাচার বন্ধ এবং রাখাইন এলাকায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমি আপনাদের নিকট আবারও অনুরোধ জানাচ্ছি৷’’
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...
ভুলে যাওয়া শরণার্থীরা: বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা
গত অক্টোবরে মিয়ানমারে দমনপীড়ন শুরুর পর ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন৷ মুসলিমপ্রধান দেশটিতে বর্তমানে পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করছেন৷ কুতুপালংয়ের মতো জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে তাদের অনেকের বাস৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
মিয়ানমার থেকে পালানো
মিয়ানমারে গত অক্টোবরে নয় পুলিশ হত্যার অভিযোগ ওঠে এক রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে৷ তারপর থেকে সেদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর আবারো দমনপীড়ন শুরু হয়৷ ফলে সত্তর হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ তারা যেসব ক্যাম্পে বসবাস করেন সেগুলোর একটি এই কুতুপালং৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
স্বনির্ভরতা দরকার
কুতুপালং ক্যাম্পের শরণার্থীরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপদ আছে বটে, তবে জীবন সেখানে মোটেই সহজ নয়৷ সেখানে সত্যিকারের কোনো অবকাঠামো নেই, সবই শরণার্থীদের গড়া অস্থায়ী আবাস৷ তারা নিজেদের দেশ ছেড়ে এসেছেন, কেননা, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং অসংখ্য মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ করেছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
শিশুদের খেলা নয়
আশ্রয়শিবিরটির অধিকাংশ এলাকায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই৷ কয়েক হাজার শরণার্থী শিশুর খেলোধুলারও কোন ব্যবস্থা নেই৷ ক্যাম্পের লেক থেকে মাটি সংগ্রহ করছে এই শিশুটি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
কুঁড়েঘরে বসবাস
কাদা মাটি এবং সহজলভ্য অন্যান্য উপাদান দিয়ে ঘর তৈরি করে বাস করেন শরণার্থীরা, যাতে মাথার উপরে অন্তত ছাদ থাকে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস
সেই ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সেদেশে রোহিঙ্গারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন৷ তাদেরকে নাগরিকত্ব এবং ভোট দেয়ার অধিকার দিচ্ছে না সরকার৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
বাংলাদেশেও বৈষম্যের শিকার?
বাংলাদেশেও বৈষম্যে শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা৷ ক্যাম্পে আর জায়গা নেই- বলে বাংলাদেশে জলপথে আশ্রয় নিতে আসা অসংখ্য রোহিঙ্গাকে তাদের নৌকাসহ ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে সীমান্তরক্ষীরা৷ পাশাপাশি কক্সবাজার ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের একটি দুর্গম দ্বীপে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার৷ স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দ্বীপটি বর্ষাকালে অধিকাংশ সময় পানির নীচে তলিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
নির্জন দ্বীপে সরিয়ে নেয়া
ঠ্যাঙ্গার চর বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীর মোহনায় কয়েকবছর আগে জেগে ওঠা এক দ্বীপ৷ শুধুমাত্র নৌকায় করে সেখানে যাওয়া যায় এবং চরটিতে অতীতে একাধিকবার জলদস্যু হানা দিয়েছে৷ এক উন্নয়নকর্মী সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যে দ্বীপটিতে কর্মসংস্থানেরও তেমন কোনো সুযোগ নেই৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী স্বীকার করেছেন যে, ঠ্যাঙ্গার চরকে বসবাসের উপযোগী করতে আরো অনেক কাজ করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘দ্বীপটিতে উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার পর রোহিঙ্গাদের সেখানে সরিয়ে নেয়া হবে৷’’ তবে সরকার অতীতে এরকম প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি৷ কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের তেমন কোন উন্নয়ন সাধন করা হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
ইতিহাস থেকে মোছার চেষ্টা
নিরাপদ আবাসভূমি না থাকায় রোহিঙ্গাদে ভবিষ্যত ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে৷ অন্যদিকে, মিয়ানমার তাদের অতীত মুছে ফেলতে কাজ করছে৷ দেশটির সংস্কৃতি এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতিহাস বিষয়ক পাঠ্যবই প্রকাশের পরিকল্পনা করেছে যেখানে রোহিঙ্গাদের কথা একেবারেই উল্লেখ থাকবে না৷ গত ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়টি দাবি করেছে, মিয়ানমারের ইতিহাসে কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে কখনো রোহিঙ্গা নামে আখ্যায়িত করা হয়নি৷