দেশের পশ্চিম সীমান্তে সেনা পাঠানোর হুমকি দিলেন বেলারুশের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো। বৃহস্পতিবার তিনি জানিয়েছেন, পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ার সীমান্তে সেনা পাঠিয়ে সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হবে। যদিও দু'টি দেশই জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত সীমান্তে কোনওরকম পরিবর্তন তাঁদের সীমান্তরক্ষীরা দেখতে পাননি। লুকাশেঙ্কোর বক্তব্য, উস্কানিমূলক এবং নতুন প্রোপাগ্যান্ডা।
বেলারুশের রাস্তা এখন সেনা জওয়ানে ভর্তি। যেখানেই প্রতিবাদ প্রতিরোধ হচ্ছে, সেখানেই সেনা পাঠিয়ে দিচ্ছে সরকার। যে ভাবে লুকাশেঙ্কো নির্বাচন করেছেন, এবং ভোটের আগে থেকেই যে ভাবে বিরোধীদের উপর আঘাত করছেন তিনি, তা নিয়ে সরব হয়েছে প্রায় গোটা ইউরোপ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেলারুশের সাম্প্রতিক ভোট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। জার্মানি সহ বিভিন্ন দেশ লুকাশেঙ্কোর কাজকর্মের তীব্র নিন্দা করেছে। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন লুকাশেঙ্কোর পাশে দাঁড়িয়েছেন।
যে কারণে শিরোনামে বেলারুশ
ইউরোপের বেলারুশে টানা ২৬ বছর ধরে ক্ষমতায় আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো৷ এখন কেন শিরোনামে এই রাষ্ট্রনায়ক, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
লুকাশেঙ্কোর রাজনীতিতে প্রবেশ
সাবেক সোভিয়েত সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত থাকা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ১৯৯৪ সালের প্রথম নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় আসেন৷ ৪৫ শতাংশের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবার পর থেকেই লুকাশেঙ্কো বেলারুশের নীতিকে রাশিয়ার নিকটবর্তী করে তোলেন৷ ১৯৯৬ সালে ১৯৯জন সংসদ সদস্য সংবিধান বিরোধিতার দায়ে লুকাশেঙ্কোর অপসারণের দাবি তোলেন৷ কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি তাঁকে৷
ছবি: Reuters/M. Guchek
ক্ষমতা ধরে রাখা
১৯৯৬ সালে অপসারণের দাবির প্রেক্ষাপটে আয়োজন করা হয় একটি গণভোটের৷ সেখানে দেখা যায়, বেলারুশের জনতা বিপুলভাবে লুকাশেঙ্কোর পক্ষে রায় দিয়েছেন, যদিও এই গণভোটকে স্বীকৃতি দেয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ৷ ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর কথা তোলেন তিনি, যা আবার গণভোটে ৭৯ শতাংশের সম্মতি পায়৷ এই ভোটকেও মান্যতা দেয়নি পশ্চিমা বিশ্ব৷
ছবি: Reuters/Y. Yerchak
বেলারুশ ও লুকাশেঙ্কো
লুকাশেঙ্কোর আমলে বেলারুশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে চোখে পড়বার মতো, যদিও বিশেষজ্ঞদের মত, এই উন্নয়নের পেছনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে রাশিয়ার সাথে তাদের নিবিড় সম্পর্ক৷ রাশিয়া থেকে বাজারদরের চেয়ে সস্তায় তেল কিনে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যথেষ্ট লাভ রেখে বিক্রি করতে পারা বেলারুশের অর্থনীতির মূল চালক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
রাশিয়া ছাড়াও চীন, ভেনেজুয়েলা, ইরান, পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে বেলারুশের৷ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাথে লুকাশেঙ্কোর সম্পর্কে উন্নতি এই মুহূর্তে হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের মত৷ বিশেষ করে, লুকাশেঙ্কো ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের এই দুই অঞ্চলে চলাফেরা করার ওপর বিধিনিষেধ থাকায় এমনটা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/RIA Novosti
‘ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী’
সাবেক জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ভেস্টারভাইলে ২০১২ সালে লুকাশেঙ্কোকে ‘ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী’ আখ্যা দেন৷ বেলারুশে তাঁর শাসনকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে এমনটা বলেন তিনি৷ উত্তরে লুকাশেঙ্কোর ব্যক্তিগত জীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘(গুইডোর মতো) সমকামী হবার চেয়ে স্বৈরাচারী হওয়া ভালো’’৷
ছবি: Reuters/V. Ogirenko
বর্তমান বিতর্ক
১৯৯৪ সাল থেকে একটানা ২৬ বছর ধরে ক্ষমতায়৷ সব নির্বাচনে তিনিই বিপুলভাবে জয়ী হন৷ কিন্তু ২০২০ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হবার পর বেলারুশজুড়ে নেমেছে প্রতিবাদের ঢল৷ ব্যাপক দুর্নীতি করে ক্ষমতায় লুকাশেঙ্কো - এমনটা মনে করছে ইইউ, অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ক্যানাডার পাশাপাশি বেলারুশের জনতাও৷ বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যেই লুকাশেঙ্কোকে বেলারুশের সাবেক রাষ্ট্রপতি বললেও পদ ছাড়ার কোনো কথা তিনি এখনও বলছেন না৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
6 ছবি1 | 6
এই পরিস্থিতির মধ্যেই প্রায় প্রতিদিন বিক্ষোভ চলছে বেলারুশে। হাজার হাজার বিরোধী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে যিনি ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই শ্বেতলানা দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদ আন্দোলন বন্ধ করতে বলছেন। ঘরে ফিরে যেতে বলছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্টকেই পদ ছেড়ে ফিরে যেতে হবে। তা না ঘটা পর্যন্ত বিক্ষোভ প্রদর্শন বন্ধ হবে না।'' সম্প্রতি বেলারুশের আর এক নারী বিক্ষোভকারীকে ইউক্রেন সীমান্তে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁকেও দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সীমান্তে পৌঁছে তিনি নিজের পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলেন। ফলে তাঁকে ইউক্রেনে পাঠানো যায়নি। গ্রেফতার করা হয়।
ইউরোপ যে ক্রমশ তাঁর বিপক্ষে চলে যাচ্ছে, তা ভালোই বুঝতে পারছেন লুকাশেঙ্কো। সে কারণেই বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, ইউরোপের সঙ্গে দেশের সীমান্ত সিল করে দেওয়া হবে। রাজধানীর রাস্তা থেকে সেনা সরিয়ে তাঁদের সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সীমান্ত সেনা যেতে শুরু করে দিয়েছে বলেও বৃহস্পতিবার দাবি করেন লুকাশেঙ্কো। কিন্তু পোল্যান্ড আর লিথুয়ানিয়ার প্রশাসন জানিয়েছে, সীমান্ত এখনও স্বাভাবিকই আছে। সেনার তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে না। তা হলে কি মিথ্যে বলছেন লুকাশেঙ্কো? সেনার কথা বলে কি তিনি যুদ্ধের ভয় দেখাচ্ছেন?
বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। পোল্যান্ড অবশ্য জানিয়েছে, লুকাশেঙ্কো আসলে মিথ্যা ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। এও তাঁর এক ধরনের প্রোপাগ্যান্ডা। যা তিনি করেই থাকেন। ফলে তাঁর বক্তব্যকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার কোনো কারণ নেই।