দু দেশের সরকার আগ্রহী হলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যা বন্ধ করা কঠিন নয়। বলছে ভারতের মানবাধিকার সংগঠনগুলি। তাদের দাবি, বিএসএফের গুলিতে অনেক ভারতীয় নাগরিকও মারা যান৷ তাদের বিষয়েও সবাই চুপ৷
বিজ্ঞাপন
ঠিক দশ বছর আগে ৬ জানুয়ারি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলে ছিল কিশোরী ফেলানীর মৃতদেহ। বিএসএফ-এর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল তার দেহ। ১০ বছর পর কি বিচার পয়েছে ফেলানির পরিবার? বাংলাদেশের জন্মের ৪৯ বছরে পরে ঠিক কী অবস্থায় আছে দুই দেশের সীমান্ত? কতটা আতঙ্কে সীমান্তের মানুষ?
''পরিস্থিতি ভয়াবহ।'' ছোট্ট বাক্যে পরিস্থিতি বর্ণনা করতে শুরু করলেন ভারতের মানবাধিকার কর্মী কিরীটি রায়। তার সংস্থার নাম মাসুম। ফেলানী হত্যার পরে কিরীটি রায়ের উদ্যোগেই প্রথমে হাইকোর্টে এবং পরে সুপ্রিম কোর্টে বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সেই মামলা এখনো চলছে। সাত বছর ধরে তা পড়ে আছে সুপ্রিম কোর্টে। এখনো বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার। মধ্যবর্তী সময়ে আরো অনেক ‘ফেলানী’ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দুই বাংলার সীমান্তে।
কিরিটি রায়ের বক্তব্য, ''বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলি এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী গত দশ বছরে সীমান্তে দুই হাজার ৬৩২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের হিসেব, প্রতি বছর প্রায় দেড়শ’ জন করে মানুষকে সীমান্তে হত্যা করা হয়। এর বহু ঘটনাই হারিয়ে যায়। দেহ লোপাট হয়ে যায়। আমাদের রিপোর্ট বলছে, যে পরিমাণ সীমান্ত হত্যা হয়, তার আশি শতাংশ ভারতীয় নাগরিক। বিএসএফ যাদের গরুপাচারকারী বা স্মাগলার বলে গুলি করে দেয়। অথচ এ নিয়ে এ দেশে কেউ কোনো কথাই বলেন না।''
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের বক্তব্য, এ বিষয়ে বিএসএফকে প্রশ্ন করলেই তারা বলে, পাচারকারীরা তাদের আক্রমণ করেছিল। সে কারণেই আত্মরক্ষার জন্য তারা গুলি করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু বাস্তব অন্যরকম। ফেলানীর ঘটনাতেই প্রমাণিত, তার কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। বিএসএফ-কে আক্রমণের প্রশ্ন তো অনেক পরের।
সীমান্তে মৃত্যুর ডাক
যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে পিতা-কন্যার মৃত্যুর ছবিটি এখন অবৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়ার প্রতীক৷ ঝুঁকি জেনেও নদী সাঁতরে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সুদিন চেয়েছিলেন রামিরেজ৷ নদী পার হতে গিয়ে মৃত্যু হয় বাবা মেয়ের৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
ভাগ্য বদলে মৃত্যু ঝুঁকি!
যুক্তরাষ্ট্র আর মেক্সিকোকে দ্বিখণ্ড করে বয়ে চলেছে রিও গ্র্যান্ড৷ যুক্তরাষ্ট্র প্রান্তে রিও গ্র্যান্ডের তীরে পড়ে আছে বাবা আর মেয়ের প্রাণহীন দেহ৷ দুই বছরের শিশুটির একটি হাত তখনো জড়িয়ে ধরে আছে তার বাবার গলা৷ যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে ঢুকতে সেন্ট্রাল অ্যামেরিকানদের কতোটা ঝুঁকি নিতে হয়, এ যেন তারই প্রতিচ্ছবি৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
সবহারা
স্বপ্নের অ্যামেরিকায় পা দিলে, চাকরি মিলবে৷ টাকা জমাতে পারলে, নিজেদের একটা বাড়ি৷ কিন্তু রিও গ্র্যান্ডের স্রোত কেড়ে নিল সব৷ তানিয়া আভলোস প্রাণে বেঁচে গেলেন ঠিকই, কিন্তু চোখের সামনে দেখলেন, স্রোতের তোড়ে স্বামী-সন্তানের ভেসে যাওয়া৷
ছবি: Reuters
মর্গের পাশে
বাবা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধারে পর তা রাখা হয় মর্গে৷ শত ধকল সয়েও তানিয়াকে পালন করতে হয়, সেখানকার দাপ্তরিক কাজ৷ নতুবা, স্বামী সন্তানের সৎকার নিয়ে তৈরি হবে জটিলতা৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
মরদেহের খোঁজে
কোনোরকম পাড়ে পৌঁছান তানিয়া৷ সম্বিৎ পেয়ে শুরু হয় স্বামী সন্তানের জন্য আহাজারি৷ তাঁর আর্তচিৎকারে, স্রোতে ভেসে যাওয়া অস্কার আর তাঁর মেয়েকে খুঁজে পেতে, নদীতে নামে মেক্সিকান নৌ-সেনারা৷
ছবি: Reuters
বিমর্ষ মা!
নিহত রামিরেজের মায়ের নাম রোজা রামিরেজ৷ আপন নিবাস এল সালভাদরে সব প্রতিকূলতা মেনে দিন পার করছেন৷ এই ভয়াল পথ নিয়ে পুত্রকে সাবধান করেছিলেন মা৷ কিন্তু জীবন বদলের স্বপ্নের মোহে, পুত্র শুনলো না মায়ের মিনতি৷ এখন সন্তান হারা মায়ের বুক জুড়ে খাঁ খাঁ শূন্যতা৷
ছবি: Reuters/J. Cabezas
5 ছবি1 | 5
কিরীটি রায় জানান, মাসখানেক আগেও ১৬ বছরের একটি ছেলেকে বিএসএফ ধরে থানায় নিয়ে গিয়ে অত্যাচার চালায়। তারপর গুলি করে হত্যা করে। অথচ এই অধিকার তাদের নেই। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, পাচারকারীর শাস্তি স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে। পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী বিনা কাগজপত্রে কোনো ভারতীয় বা বিদেশি নাগরিক সীমান্তে ধরা পড়লে তার সর্বোচ্চ তিন বছরের সাজা হওয়ার কথা। হত্যার কোনো জায়গাই নেই সেখানে। অথচ বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে।
বিএসএফের কর্মকর্তারা অবশ্য এ কথা মানতে রাজি নন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএসএফ কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, চোরাপাচারকারীদের সঙ্গে অস্ত্র থাকে। তারাও বিএসএফকে আক্রমণ করে। ফলে বাধ্য হয়েই গুলি চালাতে হয়। তবে যে পরিমাণ সীমান্ত হত্যার অভিযোগ মানবাধিকার সংগঠনগুলি করে, বিএসএফ তা মানতে রাজি নয়। বরং তাদের বক্তব্য, সীমান্তে যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহারই তারা করে।
বাস্তব যে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ নয়, তা অবশ্য সীমান্তে বসবাসকারী মানুষদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা সীমান্তে বসবাসকারী এক ভারতীয় নাগরিকের বক্তব্য, ''বিএসএফ প্রতিদিন সীমান্তবর্তী গ্রামে অত্যাচার চালায়। বিভিন্ন পাচারের সঙ্গে তারাও যুক্ত। অথচ গ্রামের মানুষদের উপর তারা অত্যাচার চালায়। পাচারকারী তকমা লাগিয়ে দেয়।
ভারত বাংলাদেশ যত চুক্তি
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক পেয়েছে অন্য এক মাত্রা৷ দুই দেশের সরকারের মধ্যে বেড়েছে পারস্পরিক যোগাযোগ, হয়েছে নানা চুক্তি, আর একে অপরকে দিয়েছে ‘সবচেয়ে পছন্দের দেশের’ মর্যাদা৷
ছবি: AFP/P. Singh
১০০ কোটি ডলার ঋণ ও ১৪ প্রকল্প
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার একবছর পর ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ভারত সফরে যান৷ সেসময় ১০০ কোটি ডলারের এলওসি বা ঋণরেখা অনুমোদন করে ভারত৷ এই অর্থে জনপরিবহন, সড়ক, রেলপথ সেতু আর অভ্যন্তরীন নৌপথের ১৪ টি প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি হয়৷
ছবি: Getty Images/G. Crouch
বন্দী বিনিময়
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি হয়৷ ২০১১ সালের ১৩ই জানুয়ারি তা কার্যকর হয়৷ চুক্তি অনুযায়ী কোনো দেশের নাগরিক অন্য দেশে সাজাপ্রাপ্ত হলে তাকে অনুরোধক্রমে ফেরত পাঠাতে পারবে৷ তবে এর আগেই অনুপ চেটিয়াসহ ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদি নেতাদের গ্রেপ্তার করে দেশটিতে পাঠানো হয় বলে গণমাধ্যমে খবর বেরোয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Barreto
ছিটমহল বিনিময়
২০১৫ সালের জুন মাসে ভারত-বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন হয়৷ যার মাধ্যমে ২০১৫ সালের জুলাইতে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত ছিটমহল বিনিময় হয়৷ ভারতের ১১১টি ছিটমহল যুক্ত হয় বাংলাদেশের সাথে৷ একইভাবে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলও হয়ে যায় ভারতের অংশ৷
ছবি: AFP/Getty Images
নদীর পানি বন্টন
বাংলাদেশের ভারতের অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৪ টি৷ এর মধ্যে শুধু গঙ্গা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি আছে৷ যদিও পানি বন্টনের ক্ষেত্রে এই চুক্তি ভারত মানছে না বলে অভিযোগ আছে৷ অন্যদিকে পাঁচ দশক ধরে তিস্তা চুক্তির চেষ্টা চললেও তা সম্ভব হচ্ছে না দেশটির উদাসীনতার কারণে৷ যার ফলে এখন একতরফাভাবে নদীটির পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
ভারসাম্যহীন বাণিজ্য
১৯৭২ সালে প্রথম বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়৷ ২০১৫ সালে স্বাক্ষর হয় এ বিষয়ে নতুন চুক্তি৷ এর আওতায় দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত হাটসহ আরো কিছু বাণিজ্য সম্পর্কিত চুক্তি হয়েছে৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের আকার ছিল ৯১৪ কোটি ডলার৷ যার সিংগভাগই ভারতের অনুকূলে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
উন্নয়ন সহযোগিতার কাঠামো
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে একটি উন্নয়ন সহযোগিতাবিষয়ক কাঠামোগত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ যার মধ্যে আছে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানি সম্পদ; বিদ্যুৎ; শিক্ষা, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ইত্যাদি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.U. Zaman
দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি
এই চুক্তি সম্পর্কে ভারতীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘‘দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক দেশ অন্য দেশের ভূখণ্ড থেকে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও রক্ষার লক্ষ্যে এ চুক্তি হয়েছে৷ ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরকে ‘সবচেয়ে পছন্দের দেশ’-এর মর্যাদা দিয়েছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
বাংলাদেশ ভারতের পণ্য পরিবহন
দুই দেশের মধ্যে হওয়া বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ী এক দেশ আরেক দেশের জল, স্থল ও রেলপথ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য ট্রানজিটের সুবিধা নিতে পারে৷ ২০১৬ সালে মাশুলের বিনিময়ে ভারতকে আশুগঞ্জ নৌ বন্দর দিয়ে বহুমাত্রিক ট্রানজিট সুবিধা দেয় বাংলাদেশ৷ সড়কপথে ট্রানজিট দিতে ২০১৫ সালে আখাউড়া অগরতলা সীমান্ত দিয়ে পরীক্ষামূলক চালান পাঠানো হয়৷ যা পরবর্তীতে নিয়মিত হয়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভারতের রেল যাবে বাংলাদেশ হয়ে
আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে কোলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে শিলিগুড়ি যাবে৷ ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় এ বিষয়ক একটি চুক্তি হয়৷ চুক্তি অনুযায়ী এজন্য দুই দেশকে তাদের অংশের রেলপথ নির্মাণ করতে হবে৷ বাংলাদেশ অংশের সাত কিলোমিটার রেলপথ আগামী বছরে জুন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা৷
ছবি: DW/P. Mani
সাবরুমের মানুষে জন্য ফেনীর পানি
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সাতটি সমঝোতা সই ও চুক্তি হয়েছে৷ একটি সমঝোতার আওতায় ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত৷ ওই পানি তারা ত্রিপুরার সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে৷
ছবি: AFP/P. Singh
বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে ভারত আটটি রুটে তার উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোদে পণ্য আনা নেয়া করতে পারবে৷ এজন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর বা পদ্ধতি কী হবে, তা নির্ধারণে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফরে৷
ছবি: DW/U. Danisman
চুক্তি থাকলেও হত্যা থেমে নেই
সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে ২০১১ সালে বিজিবি-বিএসএফ একটি চুক্তি করে৷ নেয়া হয় সীমান্ত পারাপারে অস্ত্র ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত৷ তবে সীমান্তে দেশটির আচরণে তার প্রতিফলন নেই৷ গত ১০ বছরে ২৯৪ বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
12 ছবি1 | 12
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে গরুপাচারের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে এক বিএসএফ অফিসারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কীভাবে সীমান্তে বিভিন্ন চক্রের সঙ্গে ওই অফিসার এবং তার পরিবার যুক্ত ছিল, তা প্রকাশ করেছে সিবিআই।
ভারতীয় সেনা বাহিনীর সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গত ৫০ বছর ধরেই অনুপ্রবেশ একটি বড় সমস্যা। অনুপ্রবেশ এবং পাচারের সঙ্গেই সীমান্ত হত্যার বিষয়টি জড়িত। দুঃখজনকভাবেই বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে সীমান্তে। তবে আমার মনে হয়, আগের চেয়ে বিষয়টি কিছুটা কমেছে। কারণ, পাচারও কমেছে। অনুপ্রবেশও আগের চেয়ে কমেছে।'' উৎপল ভট্টাচার্য মনে করেন, দুই দেশের সরকার যদি এ বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা জারি রাখে, তাহলে সমস্যাটি সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব।’’
ভারতীয় সেনা বাহিনীর সাবেক চিফ অফ স্টাফ জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরীও তা-ই মনে করেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''সীমান্তে কোনো কোনো সময় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে গুলি চালাতেই হয়। কারণ, অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। পাচারের ঘটনা ঘটে। তবে ফেলানীদের মৃত্যুর ঘটনা সব সময়ই দুঃখজনক। আমরা চাই না, এমন হোক। আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধানসূত্র খুঁজে বের করতে হবে।''
অনুপ্রবেশ, সীমান্তহত্যা নিয়ে দীর্ঘদিন লড়াই করেছেন সাবেক সাংসদ এবং সর্বভারতীয় কৃষকসভার নেতা হান্নান মোল্লা। সিপিএমের এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মনে করেন, ''দুই দেশের সরকার চাইলে সাত দিনের মধ্যে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে পারে। সেই ক্ষমতা তাদের আছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। এর সঙ্গে দুই দেশের সীমান্তে বন্দুকধারী ও বন্দুক ছাড়া প্রচুর মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে আছে।''
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন সাংবাদিক মিলন দত্ত। তার মতে, ভারত-পাকিস্তান কিংবা ভারত-চীন সীমান্ত আর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এক নয়। এই সীমান্ত অনেক বেশি পোরাস। ফলে ভুটান বা নেপালের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত যেমন, বাংলাদেশের সঙ্গেও তেমনই হওয়া উচিত। সেই কথা মাথায় রেখেই এক সময় আসাম, মিজোরাম এবং ত্রিপুরায় সীমান্ত হাট শুরু হয়েছিল। দুই দেশের মানুষ সেখানে এসে জিনিসপত্র কেনাবেচা করতে পারতেন। বর্তমানে তা-ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সীমান্তে কড়াকড়ি যত বাড়বে, হত্যা, অত্যাচারের ঘটনাও তত বাড়বে।
পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম সীমান্ত রয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে। দুই দেশের মানুষের কাজ, সংস্কৃতি সব কিছুই জড়িয়ে রয়েছে এই সীমান্ত ঘিরে। সীমান্ত হত্যা সেই সংস্কৃতিকেই নষ্ট করে দিচ্ছে বলে অধিকাংশ মানবাধিকার কর্মীর অভিমত। সকলেরই বক্তব্য, দুই দেশের সরকার চাইলে এর সমাধানসূত্র খুঁজে বের করা খুব কঠিন হবে না।