1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হবে

আরাফাতুল ইসলাম১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রাণহানির খবর মাঝেমাঝেই চোখে পড়ে৷ সব মৃত্যু হয়ত ফেলানী হত্যাকাণ্ডের মতো আলোড়ন তোলে না, কিন্তু তাই বলে হত্যা থেমে নেই৷ প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে থামানো যেতে পারে সীমান্ত হত্যা?

Die Grenze zwischen Indien und Bangladesch
ছবি: S. Rahman/Getty Images

সেই ২০০৪ সালের কথা৷ কলকাতায় এক তথ্য-প্রযুক্তি মেলায় যাওয়ার নিমন্ত্রণ পেলাম৷ আমরা কয়েকজন সাংবাদিক সড়কপথে রওয়ানা হই৷ রাতে ঢাকা ছেড়ে খুব ভোরে বেনাপোল পৌঁছালাম বাসে৷ দুই দেশের সীমান্তের মধ্যকার কিছু অংশ পার হতে হয় পায়ে হেঁটে৷ তখন সীমান্তের দুই পাশে মরণাস্ত্র হাতে থাকা সীমান্তরক্ষীদের দেখলে ভয় হয়, পা চলতে চায় না৷ সাহস করে সেই অংশটুকু পার হয়ে ভারতের সীমান্তে পৌঁছানোর পর নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল৷ কেন যাচ্ছি? কতদিন থাকবো? কত টাকা সঙ্গে আছে? ফেরার নিশ্চয়তা কী? এরকম নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে৷ সব প্রশ্ন মনেও নেই৷ সীমান্তের সেই নিরাপত্তা চৌকি পার হবার পর অবশ্য আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷ বরং ভালো লেগেছে ভারতীয় বাঙালিদের সান্নিধ্য৷

ভারতে এরপর যাওয়া হয়েছে আরো কয়েকবার, কখনো সড়ক পথে, কখনো আকাশপথে৷ সড়ক পথের অভিজ্ঞতা সবসময় একই রকম৷ ইউরোপে না আসলে হয়ত বুঝতামই না সড়ক পথে সীমান্ত পারাপারের ব্যাপারটি বাংলাদেশ-ভারত সীমানার মতো জটিল নয়৷ ইউরোপের শেঙেনভুক্ত কয়েকটি দেশে গিয়েছি সড়কপথে৷ কখন যে সীমান্ত পার হয়ে গেছি টের পাইনি৷ মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে সাইনবোর্ড বা মোবাইল ম্যাসেজ দেখে বুঝেছি জার্মানি থেকে অন্য দেশে চলে গেছি৷ এমনটা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বা মিয়ানমারের সীমান্তে কল্পনা করাও অসম্ভব৷

বলছি না, শুধুমাত্র এই দুই দেশের সীমান্তেই কড়াকড়ি৷ বিশ্বের আরো অনেক দেশের সীমান্তে কড়াকড়ি আছে, থাকবে৷ কিন্তু হতাশার জায়গাটা হচ্ছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অসংখ্য প্রাণহানি৷ এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কটা দীর্ঘদিনের, বন্ধুত্বের৷ দুই দেশের অনেক পরিবার একসময় ছিলেন একত্রে, দেশভাগের পর ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে জেগে উঠেছে কাটাতারের বেড়া৷ বৈধ, অবৈধ পথে সেই বেড়া ডিঙাতে হয় অনেকের জীবনের প্রয়োজনে৷ তাই বলে কি তাদের পাখির মতো গুলি করে মারতে হবে?

গত কয়েকবছরে সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছেন সহস্রাধিক নিরস্ত্র মানুষ৷ এদের প্রায় সবাই নিহত হয়েছেন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর হাতে৷ অন্যদিকে, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-র গুলিতে কোনো ভারতীয় নাগরিকের প্রাণহানির খবর গত কয়েক বছরে শুনেছি বলে মনে পড়ছে না৷ তাই সীমান্তে গুলির বিষয়টি আমার কাছে একপাক্ষিক মনে হচ্ছে৷ বিএসএফ সেটা করছে নির্বিচারে৷ ভাবটা এমন, তাদের জবাবদিহিতার কোনো জায়গা নেই, প্রয়োজনও নেই৷

আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

একাধিক মানবাধিকার সংগঠন মনে করে, সীমান্তে কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা বা সতর্ক না করেই বিএসএফ গুলি চালায়৷ এমনকি যেসব ক্ষেত্রে কোনো রকম মরণাস্ত্র ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই, সেসব ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করছে সীমান্তরক্ষীরা৷ আর শুধু গুলি নয়, সীমান্ত পারপারের চেষ্টা করায় পিটিয়ে মারার ঘটনাও বিএসএফ ঘটিয়েছে বেশ কয়েকবার৷ বাংলাদেশ যে ভারতের একটি বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র, সেটা বিএসএফ-এর আচরণ থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই৷

আমি বলছি না, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ইউরোপের দেশগুলোর মতো খুলে দেয়া হোক৷ সেটা অলিক কল্পনা৷ বরং কেউ অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিতে চাইলে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা যেতেই পারে৷ তবে তাদের বিচারের দায়িত্ব কোনোভাবেই সীমান্তরক্ষীদের নয়

বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষায়, এগিয়ে নিতে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে এক্ষুনি৷ এ জন্য যেসব কারণে মানুষ অবৈধপথে সীমান্ত পার হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে৷ যেসব পণ্য বৈধভাবে আমদানি, রপ্তানি করা যায়, সেগুলো অবৈধভাবে করা বন্ধ করতে হবে৷ প্রয়োজনে নীতিগত পরিবর্তন আনা যেতে পারে৷ যারা নিয়মিত দু'দেশের মধ্যে যাতায়াত করেন, কাজ করতে চান, তাদের জন্য একাধিকবার ব্যবহার উপযোগী দীর্ঘমেয়াদের ভিসা সহজলভ্য করতে হবে৷ সবচেয়ে বড় কথা, সীমান্তরক্ষীদের মরণাস্ত্র ব্যবহার থেকে দূরে রাখতে হবে৷ আর যারা নির্বিচারে গুলি করে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে৷

আপনারও কি এমন অভিজ্ঞতা আছে? লিখে জানান আমাদের, নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ