1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি শুধু কথার কথা?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও বন্ধ তো হয়ইনি, বরং বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে শুধু চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত এলাকাতেই বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন দুই বাংলাদেশি৷

বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে বিএসএফের টহল
ফাইল ছবি: বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে বিএসএফের টহলছবি: Dipa Chakraborty/Pacific Press/picture alliance

অথচ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জি-২০ সম্মেলনে ভারতে গিয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন সীমান্ত হত্যা কমেছে৷
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিং ২০২২ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে সীমান্ত সম্মেলনে যোগ দিতে এসে বলেছিলেন,"সীমান্তে যারা হতাহতের ঘটনার শিকার হন তারা সবাই অপরাধী৷ তারা চোরাচালানি৷” একই সম্মেলনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ বলেন, সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনায় জোর দিচ্ছেন তারা৷ এ নিয়ে একযোগে কাজ করতে বিএসএফ রাজি বলেও জানানো হয় তখন৷
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে যশোরে বিজিবি ও বিএসএফ-এর ফ্রন্টিয়ার আইজি পর্যায়ের চার দিনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ ওই সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা নিরসনে প্রাণঘাতী নীতি বিসর্জনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়৷ যশোর রিজিয়ন সদর দপ্তর পরিচালক (অপারেশন) মোহাম্মদ আনোয়ারুল মাযহার বলেন, "বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিএসএফের পক্ষ থেকে নন-লেথাল (প্রাণঘাতী নয় এমন) নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে৷”

ভারত সীমান্ত হত্যা বন্ধ চায় না: কিরীটি

This browser does not support the audio element.

কিন্তু এই চলতি সেপ্টেম্বরেই চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে ১৫ দিনে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসাবে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বিএসএফ-এর হাতে নিহত হয়েছেন ১২ জন৷ সবাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে৷ ২০২২ সালে হত্যা করা হয় ২৩ জনকে৷ তাদের মধ্যে ১৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ ২০২১ সালে হত্যা করা হয় ১৭ জনকে ৷ তাদের মধ্যে ১৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ গুলি করে হত্যার পরিসংখ্যান দেখলে এটা স্পষ্ট যে , যতই বলা হোক না কেন বিএসএফ সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ( লেথাল উইপন) ব্যবহার কেনোভাবেই বন্ধ করেনি৷
২০১৫ থেকে এ পর্যন্ত বিএসএফ-এর হাতে ২৫৬ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন৷ আহতের সংখ্যা তিনশ'রও বেশি৷

ভারতীয় মানবাধিকার কর্মী এবং বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম)-এর প্রধান কিরীটি রায় বলেন, "আসলে ভারত সীমান্ত হত্যা বন্ধ চায় না, তাই বন্ধ হয় না৷ ওরা মুখে এক কথা বলে আর কাজে করে আরেকটা৷ আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও শক্ত কোনো প্রতিবাদ নেই৷ তারা ভারতের কাছে নতজানু হয়ে থাকে৷”

চোরাচালানির নামে হত্যাকাণ্ড বৈধ করার সুযোগ নেই: মিজানুর

This browser does not support the audio element.

তার কথা, " সীমান্তে ভালো মানুষ আছে, আবার চোরাচালানিও আছে৷ কিন্তু কথা হলো, চোরাচালানি যারা তারা তো সামনের ক্যারিয়ার৷ মূল হোতারা পিছনে থাকে৷ সেটা দুই দেশেই আছে৷ তাদের সঙ্গে বিজিবি এবং বিএসএফ সদস্যদের কারুর কারুর সখ্য আছে৷ বিষয়টি হলো, যখন চোরাচালানিরা অর্থ দেয়, তখন সমস্যা হয় না৷ অর্থের টান পড়লেই গুলি করে হত্যা করা হয়৷”
তিনি বলেন, "ভারত থেকে যে গরু চোরাচালন হয়, তা তো সীমান্ত এলাকার নয়৷ ওই গরু আনা হয় রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার থেকে৷ উত্তর প্রদেশ থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে গরু আনতে তিন হাজার কিলোমিটার পার হতে হয়৷ এই তিন হাজার কিলোমিটার পথ পার হয়ে গরু আনে কীভাবে? পথে থানা আছে, পুলিশ আছে, এসপি আছে, গোয়েন্দা সংস্থার লোক আছে৷ তারা কি এটা জানে না?”

বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, "চোরাচালানি বলে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বৈধ করার কোনো সুযোগ নেই৷ আসলে এটা বিএসএফ-এর একটা অজুহাত৷ আর চোরাচালনি হলেও তো তাকে গুলি করে হত্যা করা যায় না৷ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জোরালো প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন, তা না হলে এটা বন্ধ হবে না৷”
তার কথা, "সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও এটা কার্যকরের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ উভয়পক্ষ মিলে এটা কার্যকর করার একটি পদ্ধতি বের করা দরকার৷ বিষয়টি মনিটরিং করে যাতে কার্যকর হয় সেই উদ্যোগ নিতে হবে৷”

তিনি বলেন, "ভারত থেকে গরু চোরাচালানি বন্ধ করলেই তো আর সীমান্তে গরু আসবে না৷ তাহলে ভারতের ভিতর থেকে সেটা বন্ধ না করে সীমান্তে কেন বাংলাদেশিদের হত্যা করা হচ্ছে?''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ