1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সীমান্ত হত্যা: ভারতের ‘অনুতাপ’ বনাম ‘উদ্ভট তথ্য’

৩ মার্চ ২০২০

ঢাকা সফরে এসে বিস্ময়কর তথ্য হাজির করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা৷ সীমান্ত হত্যার জন্য অনুতাপের পাশাপাশি তিনি বলেছেন, সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য ফিফটি-ফিফটি৷

ছবি: bdnews24.com

গড়ে প্রতি আট দিনে ঘটছে একজনের মৃত্যু৷ ২০১৯ সালে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৪৩ জন, যা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে তিনগুণ৷ শুধু জানুয়ারিতে মারা গেছেন ১৫ জন৷ কোনো স্বাভাবিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান নয় এগুলো৷ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের হাতে বাংলাদেশিদের প্রাণহানির সংখ্যা৷

এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কোনো যুদ্ধাবস্থা নেই৷ দুই দেশের সরকার একে অন্যকে সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে৷ অথচ বিশ্বে প্রাণঘাতী সীমান্তের তালিকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রয়েছে শীর্ষে৷ এই তালিকায় বাকি যে দেশগুলো রয়েছে তাদের মধ্যে হয় যুদ্ধ পরিস্থিতি নয়তো শরণার্থী-সংকট বিদ্যমান, যার কোনটিই নেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে৷

এমন পরিস্থিতি একদিন দুইদিন নয়, চলছে বছরের পর বছর ধরে৷ বিষয়টিকে ভারত বাংলাদেশের কোনো সরকারই অবাক করা কারণে আমলে নেয়নি কখনো৷ গত এক দশকে তারা ডজনের পর ডজন চুক্তি করেছে৷ কিন্তু সীমান্ত হত্যা বন্ধে কেউ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেছে বলে মনে হয় না৷ দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে এই সমস্যা সুরাহার দায়িত্ব তুলে দিয়ে দৃশ্যত একে অন্যের বন্ধুত্বের গুণকীর্তনে ব্যস্ত থেকেছে তারা৷

বিএসএফ -বিজিবি পতাকা বৈঠক কিংবা কর্মকর্তাদের আলোচনায় সীমান্ত হত্যার বিষয়টি যে তোলা হয় না, তা নয়৷ কিন্তু আলোচনাটি গত কয়েক বছর ধরেই চলছে গৎবাঁধা প্রক্রিয়ায়৷ ভারতীয় গণমাধ্যমে দেশটির সরকারের যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় সেগুলো এমন-

‘‘আমরা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাই’’, ‘‘আমরা কখনো কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালাই না'', কিংবা ‘‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের উদ্দেশ্যে গুলি চালানো হয়’’৷ আছে চোরকারবারিদের প্রতিহত করার তত্ত্বও৷ কিন্তু কোনো অবস্থাতেই গুলি চালানো ও হত্যার বিষয়টি ধোপে টেকে না৷ কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধান না হলে বাংলাদেশ এমনকি আইনি পদক্ষেপও নিতে পারে৷ সে সুযোগ আছে৷ তবে সেরকম পদক্ষেপ না নিলেও  সরকারের পক্ষ থেকে অবশেষে কিছু যৌক্তিক বক্তব্য অন্তত আমরা পেয়েছি৷

সম্প্রতি ঢাকা সফরে আসা ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘‘আপনারা আমাদের বন্ধু মানুষ৷ এই বন্ধুদের মধ্যে কিলিং হওয়া ঠিক না৷’’ জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সীমান্ত হত্যা বন্ধে ‘চেষ্টা চালাবেন’ বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷ এ আশ্বাসটি অবশ্য তারা গত এক দশক ধরেই দিয়ে আসছেন৷ এবারের চেষ্টার আন্তরিকতা কতটা? তার জবাবও মিলছে শ্রিংলার কাছ থেকে৷ ঢাকার এক অনুষ্ঠানে অবাক করা তথ্য হাজির করেছেন তিনি৷ তিনি বলেছেন, ‘‘সীমান্তে মৃত্যু কেবল বাংলাদেশিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, একই সংখ্যায় ভারতীয়রও মৃত্যু হয়৷ যদিও সেই পরিসংখ্যান আপনাদের এখানে প্রতিফলিত হয় না৷ আমার হাতে থাকা পরিসংখ্যান বলছে, সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য ফিফটি-ফিফটি৷’’

জনাব শ্রিংলা তার হাতে থাকা পরিসংখ্যানটি অবশ্য প্রকাশ করেননি৷ এই পরিসংখ্যান তিনি কোথা থেকে হাজির করেছেন সে এক বিরাট বিস্ময়৷ সত্যি কোনো ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবির হাতে নিহত হয়েছেন, আর সে বিষয়ে ভারতের সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, প্রতিবাদ করেনি, এমন কথা বিশ্বাস করা কঠিন৷ এ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোও কি কোনো সংবাদ প্রকাশ করেছে? না করলে কেন করেনি? বাংলাদেশের বিজিবির হাতে ভারতের নাগরিক নিহত হলে সে দেশের মানুষও তো কোনো-না-কোনোভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতো৷ ভারতের গণমাধ্যম ঘেঁটেও তো তেমন কিছু পাওয়া গেল না৷ 

ফয়সাল শোভন, ডয়চে ভেলেছবি: Masum Billah

শ্রিংলা সীমান্ত হত্যা বন্ধে কিছু ‘কিন্তু’ এবং ‘যদি’ সূচক বাক্যও ব্যয় করেছেন একই অনুষ্ঠানে৷ তিনি বলেছেন, সীমান্তে একজন মানুষও যদি মারা যায়, সেজন্য ভারত ‘সত্যি অনুতপ্ত'৷ এই যদির সঙ্গে তিনি টেনেছেন আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিষয়গুলো৷ প্রশ্ন হলো, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ হয়ে থাকলে তার জন্য কি শুধু বাংলাদেশ দায়ী৷ সীমান্তের অপর পারে অপরাধটা কে করছে? ভারতের দিক থেকে যারা অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তাদেরকে কেন থামানো হচ্ছে না? সেখান থেকে যেসব অপরাধী বাংলাদেশে অবৈধভাবে পণ্য পাচার করছে, বিএসএফ তাদেরকে থামাতে কী ব্যবস্থা নিয়েছে?

এইসব প্রশ্নের কোনো জবাব ছিল না ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্যে৷ তিনি এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় মোদীর সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করতে৷ তাকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আগেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ এ নিয়ে এরইমধ্যে বাংলাদেশে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে৷ এই পর্যায়ে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর বাতিল করা কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়৷ তবে, ‘যদি’, ‘কিন্তু’ বাদ দিয়ে মোদীর কাছ থেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধের একটি ঘোষণা কি অন্তত বাংলাদেশ এই আয়োজন থেকে পেতে পারে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ