জার্মানির কোলোন শহরের আশেপাশের অঞ্চলে বড় অভিযান চালিয়ে সম্প্রতি বিদেশি চোরদের ধরপাকড় করেছে পুলিশ৷ শেঙেন চুক্তির কল্যাণে মুক্ত সীমান্তের সুযোগ নিয়ে দূর থেকেও চোরেরা এখানে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
চোর নিজের পাড়ায় চুরি করলেই সমস্যা, কখন যে ধরা পড়ে যাবে তার নেই ঠিক! কিন্তু বেপাড়ায় সেই ঝুঁকি কম৷ বামাল সমেত পালাতে পারলেই হলো৷ ধরা পড়ার ভয় প্রায় নেই বললেই চলে৷ সীমাহীন ইউরোপেও চোর-জোচ্চররাও আরও বেশি করে সেই পথই বেছে নিচ্ছে৷ ইউরোপের শেঙেন এলাকার ভেতরে সীমানায় কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তাদের কাজ আরও সহজ হয়ে যাচ্ছে৷
২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চ্যালেঞ্জ
ইইউ অঞ্চলের বিদ্যমান সংকট নিরসনে নতুন বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে৷ ছবিঘরে সেসব বিষয় সম্পর্কে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নির্মাণাধীন ভবন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে৷ গড়ে উঠছে নতুন নতুন ভবন৷ ভবন নির্মাণের সময় প্রচুর শব্দ হয়, ধুলাও হয় প্রচুর৷ আর্থিক দিকটা দেখে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আর নির্মাণ শ্রমিকরা নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেন, আশপাশের এলাকাবাসীর সব রকমের ঝামেলাই মেনে নিতে হয়৷
ছবি: DW
ইউরোপীয়দের আছে বিকল্প
চলমান সংকটের সময় ইইউ-র নানা কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে কর্মসূচির কার্যকারীতা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে৷ মে মাসে অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব দেখা যেতে পারে৷ গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কমছিল৷ কিন্তু এবার ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছে ইইউ পার্লামেন্ট৷ এমনকি টেলিভিশনে বিতর্কের মাধ্যমেও অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
ইউরোপীয় বিস্ময়?
ইইউ-র সংশয়বাদী অংশগুলো নিজেদের ভোট বাড়ানো জন্য উঠেপড়ে লেগেছে৷ ব্রিটেনের ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট কিংবা জার্মানির অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড – সবাই চায় ‘স্বল্প ইউরোপ’৷ প্রশ্ন হলো, তারা কি একটি স্থিতিশীল প্যান-ইউরোপিয়ান জোট গড়তে পারবে?
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
সংকট ব্যাবস্থাপনা
কয়েক বিলিয়ন বেইলআউট সংকটাপন্ন ইউরোপে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে৷ আর্থিক অনুদান এবং সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড ইইউ-র বিশেষ অর্থায়নের সহায়তা ছাড়াই চলতে পারছে৷ অন্য দেশগুলোতেও কৃচ্ছতা সাধন এবং আর্থিক সংস্কার কর্মসূচিতে কঠোরতা আসার অপেক্ষায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংকট নিরসনে অলৌকিকের সহায়তা?
সংকট নিরসনের আগে কারণটা জানতে হয়৷ ইইউ অঞ্চলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করার চেষ্টা চলছে৷ যেসব ব্যাংকের অস্তিত্ব বিপন্ন, তাদের কখনোই দেশের অর্থনৈতিক সংকট চরমে তোলার মতো পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয়, নাগরিকদের উচিত নয় করের টাকায় ব্যাংকগুলোকে বেইলআউটের দিকে এগিয়ে দেয়া৷ প্রস্তাবিত ব্যাংকিং ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে ইইউকে আগেই হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাকুরি প্রত্যাশীদের জন্য সুখবর
ইইউ অঞ্চলের ২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি বেকারের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে৷ অতীতে সংকটের সময় কর্মহীনদের কাজ দেয়ার ব্যাপারে সহায়তা না করায় কঠোর আর্থিক পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সমালোচনা হয়েছে৷ এবার ব্রাসেলস থেকে সাহায্যের হাত বাড়ানো হবে, সংকটাপন্ন দেশগুলোর তরুণদের সহায়তা করবে ইইউ-র বিভিন্ন কর্মসূচি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাই আরো প্রতিযোগিতার মনোভাব
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ইইউ অঞ্চলের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে৷ এ লক্ষ্যে উন্মুক্ত অভ্যন্তরীণ বাজার এবং তৃতীয় দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার কথা ভাবছে ইউরোপীয় কমিশন৷ এছাড়া ইইউ-র সংকটগ্রস্ত সদস্য দেশগুলোকে নিজ নিজ সমস্যা সমাধানে অবশ্যই আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে৷
ছবি: Getty Images
তথ্য নিরাপত্তা ২.০
ইইউ অঞ্চলে দু’বছর পর্যন্ত সবার টেলিফোন এবং ইন্টারনেট তথ্যের রেকর্ড রাখা আইনসম্মত৷ তবে এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে৷ ইউরোপীয় কোর্ট অফ জাস্টিস এ বছরের শুরুতেই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ বিচারকদের অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে তথ্য ধারণ করে রাখলে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়৷ তাই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: CC-BY-Verena Hornung 3.0
অভিবাসন নীতিমালা
ইইউ অঞ্চলে শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়ক নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ ২০১৩ সালের অক্টোবরে ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় এসে ৩৬০ জন আফ্রিকান অভিবাসী ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরার পর, ইইউ-র অভিবাসন নীতিমালা পড়েছে তোপের মুখে৷ নতুন বছরে ইইউ তাই অভিবাসন প্রত্যাশীদের মূল দেশ এবং ট্র্যানজিট দেশের সঙ্গে সহযোগীতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হবে৷ এক্ষেত্রে উল্লেখিত দেশগুলোকে আরো বেশি উন্নয়ন সহায়তা দেয়ার কথাও ভাবছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
তবে চোর-পুলিশের খেলাও চলছে৷ সীমাহীন ইউরোপে বিভিন্ন দেশের পুলিশের মধ্যে সহযোগিতা, সাধারণ তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার – এ সব বেড়ে চলেছে৷ ফলে চোর ডালে-ডালে এগোলে পুলিশও এগোতে চায় পাতায়-পাতায়৷
জার্মানির কোলোন শহরকে কেন্দ্র করে এমনই একটি পুলিশি অভিযান দেখা গেলো৷ তাতে বেশ কয়েকজন ‘মোবাইল' বা ভ্রাম্যমাণ চোরেদের পাকড়াও করতে পেরেছে পুলিশ৷ ২,৮০০ গাড়িতে প্রায় ৩,৮০০ পুলিশকর্মী এতে অংশ নেন৷ ধরা পড়েছে ৩০ জন অপরাধী, যাদের মধ্যে আগে থেকেই ১৩ জনের খোঁজ চলছিল৷ ফেডারেল পুলিশ, শুল্ক দপ্তর, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডস-এর পুলিশ কর্মীরাও এই অভিযানে অংশ নেন৷
এমন অভিযানে প্রায়ই কেঁচো খুঁড়তে সাপ পাওয়া যায়৷ এবারেও চাই হয়েছে৷ একটি গল্ফ ক্লাবে চুরি করার সময় চারজন চোর হাতেনাতে ধরা পড়ে৷ তাদের গাড়িতে দামি গল্ফ সেট ছাড়াও ল্যাপটপ ইত্যাদি অনেক চোরাই মালপত্র পাওয়া যায়৷ রুমেনিয়া থেকে আসা এই দল আশেপাশের এলাকায় আরও অনেক ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ রুমেনিয়ার আরও একটি দলকে ধরতে পেরেছে পুলিশ৷ তাদের গাড়িতেও অনেক কিছু পাওয়া গেছে৷ বেলজিয়াম সীমান্তে আরেকটি সন্দেহজনক গাড়ি আটক করে পুলিশ নানা আধুনিক যন্ত্রপাতি সহ চোরেদের একটি দলকে আটক করেছে৷