২০১২ সালের পরিসংখ্যান৷ সে’বছর ১৭২ জন বিদেশি আসেন সুইজারল্যান্ডে – বেড়াতে নয়, দুরারোগ্য ব্যাধি ও অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে, নিজের জীবনের অন্ত ঘটাতে, এক কথায়: ‘মার্সি কিলিং’-এর জন্য৷
বিজ্ঞাপন
যে ব্যাধি থেকে নিরাময়ের কোনো সম্ভাবনা নেই, যা শুধু যন্ত্রণা ও অসহায়তা বাড়ায়, তা নিয়ে বেঁচে থাকার কোনো অর্থ হয় কিনা, এ তর্ক বহুদিনের, বহুযুগের, এবং সব ধর্মে৷ সে'ধরনের রোগভোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যদি কেউ আত্মহত্যা করতে চায়, তবে তাকে সাহায্য করাটাও তো – পাপ না বলে দণ্ডনীয় অপরাধ বলা চলতে পারে, যেমন আইনি পরিভাষায় বলাও হয়ে থাকে৷ যে কোনো পরিস্থিতিতে আত্মহত্যায় সাহায্য করা যখন আইনবিরুদ্ধ, তখন রোগীর ডাক্তার কিংবা আত্মীয়স্বজন তাঁকে সাহায্য করেন কি করে? হ্যাঁ, সেক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ডে যাওয়া যেতে পারে, যেখানে গত শতাব্দীর চল্লিশের দশক থেকেই ‘মার্সি কিলিং' আইনবিরুদ্ধ নয়, যেখানে চারটি ‘মরণের অধিকার' সংগঠন আছে, যেখানে ডিগনিটাস ক্লিনিকের মতো একাধিক ক্লিনিক আছে, যে সব ক্লিনিকে ‘শান্তিতে মরা যায়', যেমন ‘শান্তির পিল' সোডিয়াম পেন্টোবার্বিটাল খেয়ে৷
২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বিশ্বের ৩১টি দেশ থেকে ৬১১ জন মানুষ আসেন সুইজারল্যান্ডে – স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করার জন্য৷ তাঁদের মধ্যে ৬০৭ জনই ছিলেন ডিগনিটাস ক্লিনিকে৷ ‘সুইসাইড টুরিস্ট'-দের মধ্যে যিনি সবচেয়ে তরুণ, তাঁর বয়স ছিল ২৩; যিনি সবচেয়ে প্রবীণ, তাঁর বয়স ছিল ৯৭৷ ‘মৃত্যু পর্যটকদের' ৬০ শতাংশ মহিলা৷
৬১১ জন মরণকামীর মধ্যে ২৬৮ জন এসেছিলেন জার্মানি থেকে; ব্রিটেন থেকে ১২৬ জন; ফ্রান্স থেকে ৬৬ জন; ৪৪ জন ইটালীয়; ২১ জন মার্কিনি; ১৪ জন অস্ট্রিয়ান; ১২ জন ক্যানাডিয়ান এবং স্পেন ও ইসরায়েল থেকে আটজন করে মানুষ, যারা রোগ ও জরার বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে চাইছিলেন – তা সে সঠিক পন্থা হোক আর নাই হোক৷
ক্যানসারকে দূরে রাখার ৯ উপায়
ক্যানসারের মতো অসুখকে শুধু ভাগ্যের লিখন বলা যায়না৷ কারণ টিউমার হওয়ার কারণগুলো গবেষকরা খুব ভালো করেই জানেন৷ ক্যানসারের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে প্রত্যেকেই কিছু করতে পারেন৷
ছবি: Getty Images
ভাগ্য নিজের হাতেই
‘আপনার ক্যানসার ধরা পড়েছে’ এমন দুঃসংবাদ শোনার জন্য কেউ কখনো অপেক্ষা করেনা৷ তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে হয়তো ক্যানসার রোগীর সংখ্যা অর্ধেক হতে পারে৷ ক্যানসার রোগীর প্রতি পাঁচজনের একজনই হচ্ছে ধূমপায়ী৷ বিষাক্ত তামাকের ধোঁয়া যে শুধু ফুসফুসের ক্যানসারের জন্যই দায়ী তা নয়, ধূমপান অন্যান্য ক্যানসারের হওয়ারও একটি কারণ৷ তবে ধূমপান ক্যানসার হওয়ার একমাত্র কারণ নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অতিরিক্ত ওজন মৃত্যুর কারণও হতে পারে
ক্যানসার হওয়ার নানা কারণের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অতিরিক্ত ওজন এবং ইনসুলিনের মাত্রা বেশি থাকা৷ ইনসুলিনের মাত্রা বেশি হলে তা কিডনি, গলব্লাডার, খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷ শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত মোটা মহিলাদের শরীরের মেদের কারণে খুব সহজে জরায়ু এবং স্তন ক্যানসার হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলসেমি নয়, সোফা থেকে উঠে পড়ুন!
যারা সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকেন অর্থাৎ হাঁটা-চলা কম করেন, তাদের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷ দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে ব্যায়াম বা খেলাধুলা টিউমার হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করে৷ শারীরিক কার্যকলাপ ইনসুলিনের মাত্রা কমায় এবং পাশাপাশি মোটা হওয়াও রোধ করে৷ শরীরচর্চা বলতে যে সব সময় ফিটনেস সেন্টারে যাওয়া বোঝায় তা কিন্তু নয়৷ যে কোনো ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি বা সাইকেল চালানোও হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/runzelkorn
অ্যালকোহলকে না করুন
অ্যালকোহল বা মাদককে ক্যানসার উত্তেজক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে৷ বিশেষ করে অ্যালকোহল পানে মুখের ভেতর, গলা এবং পাকস্থলীর নালীতে টিউমার ছড়ানোকে প্রভাবিত করে৷ তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে ধূমপান এবং মদ্যপান যদি একসাথে করা হয়৷ এই দুটো একসাথে হয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ১০০ ভাগ৷ তবে বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন একগ্লাস ওয়াইন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পশুর মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো
রেড-মিট বা গরু বা ভেড়ার মতো প্রাণীর মাংস ক্যানসার হতে সহায়তা করে৷ তবে এর আসল কারণ ঠিক কী তা এখনও খুঁজে বের করা যায়নি৷ দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় এটুকু জানা গেছে যে রেড-মিটের সাথে ক্যানসারের সম্পৃক্ততা রয়েছে৷ শুকরের মাংসের তুলনায় গরুর মাংস খাওয়া বেশি বিপজ্জনক৷ অন্যদিকে মাছ খেলে হয় ঠিক তার উল্টোটা, অর্থাৎ মাছ খেলে ক্যানসার হওয়া থেকে দূরে থাকা যায়৷
ছবি: Fotolia
ফাস্টফুডকে না বলুন!
ফাস্টফুড বা রেডিমেড খাবার সব সময়ই যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সে কথা কম বেশি সবাই জানি৷ অন্যদিকে বেশি বেশি সবজি এবং ফলমূল ক্যানসার রোধে সাহায্য করে৷ দীর্ঘ গবেষণায় অবশ্য গবেষকরা দেখেছেন যে স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে মাত্র দশ শতাংশ ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেশি রোদ, বেশি ক্ষতি
সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি মানুষের ত্বকের অনেক পরিবর্তন করে৷ তবে সানক্রিম সূর্যের বিকিরণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে ঠিকই, তবে তারও সময়সীমা রয়েছে৷ ত্বক যখন পুড়ে যায়, ধরে নিতে হবে যে ত্বকে অনেক বেশি সূর্যের কিরণ লেগে গেছে৷
ছবি: dapd
আধুনিক ওষুধ থেকে ক্যানসার
এক্সরে রশ্মি জেনোটাইপের ক্ষতির কারণ, তবে সাধারণ এক্সরেতে তেমন ক্ষতি হয়না৷ সে রকম প্রয়োজন না হলে কম্পিউটার-টোমোগ্রাফি না করাই ভালো৷ আবার অন্যদিকে এমআরআই কিন্তু মোটেই শরীরে জন্য ক্ষতিকারক নয়৷ ভালো খবর যে, প্লেন ভ্রমণ থেকে ক্যানসার হবার কোনো আশঙ্কা থাকেনা৷
ছবি: picture alliance/Klaus Rose
ইনফেকশনের মাধ্যমে ক্যানসার
হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস লিভার কোষের ক্ষতি করতে পারে৷ ছবিতে যে ব্যাকটেরিয়া দেখা যাচ্ছে সেটা পাকস্থলী নষ্ট করে দিয়ে সেখানে ক্যানসারের জন্ম দিতে পারে৷ তবে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখতে টিকা বা অ্যান্টিবায়োটিকও নেয়া যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
কী ধরনের রোগ মানুষকে জীবনের মায়া কাটাতে রাজি, এমনকি মরিয়া করে তোলে? নথিপত্র বলছে, পক্ষাঘাত কিংবা মোটর নিউরোন ডিজিজ-এর মতো স্নায়বিক রোগ; সেই সঙ্গে পার্কিনসন্স এবং মাল্টিপল সক্লেরোসিস৷ বিশ্বের খুব কম দেশেই ‘ইউথেনেশিয়া' বা ‘মার্সি কিলিং' সংক্রান্ত আইনকানুন আছে৷ অপরাপর দেশে আত্মহত্যায় সাহায্য করাটা দণ্ডনীয় অপরাধ৷
পরলোকগত মার্কিন অভিনেতা রবিন উইলিয়াম্স সম্প্রতি আত্মহত্যা করেন সম্ভবত তাঁর পার্কিনসন্স ডিজিজ হয়েছে, এটা ধরা পড়ার পর৷ গত জুলাই মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আর্চবিশপ এমেরিটাস ডেসমন্ড টুটু বলেছিলেন যে, তিনি মরণাপন্ন রোগীদের মরতে সাহায্য করাটাকে সমর্থন করেন৷
বলতে কি, মার্সি কিলিং নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ, বেলজিয়াম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যে পুরোপুরি বৈধ – অপরদিকে ব্রিটেন ও ফ্রান্সে প্রসঙ্গটি নিয়ে আদালতে মামলা চলেছে৷ সুইজারল্যান্ডেও মার্সি কিলিং যতই স্বীকৃত হোক না কেন, ‘সুইসাইড টুরিজম' নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷