সুইডেনকে সঙ্গে নিয়েই ন্যাটোতে যোগ দিতে চায় ফিনল্যান্ড
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
জার্মানির মিউনিখে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্স৷ ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন এবং ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গসহ বিশ্বনেতারা উপস্থিত ছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
মিউনিখ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অর্থাৎ শনিবারের প্রথম আলোচনা সভায় ফিনল্যান্ডের সামরিক জোট ন্যাটেতে যোগদানের বিষয়টি প্রাধান্য পায়৷
সভায় দেওয়া বক্তৃতায় ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন বলেন, ‘‘এটি স্পষ্ট যে রাশিয়া যেদিন ইউক্রেনে আক্রমণ করছে সেদিনই ফিনল্যান্ড ন্যাটেতে দিতে চেয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘যেদিন আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র রাশিয়া আরেক প্রতিবেশি ইউক্রেনে হামলা চালালো তখনই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ফিনল্যান্ড ন্যাটেতে যোগদান করবে৷ কারণ এটিই একমাত্র সীমারেখা যেটি রাশিয়াঅতিক্রম করবে না৷''
ন্যাটেতে কোনো নতুন সদস্য যোগ দিতে চাইলে জোটের সব সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন৷
কিন্তু সদস্য রাষ্ট্র তুরস্ক এবং হাঙ্গেরির বাধার কারণে আটকে আছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সদস্যপদ৷ তুরস্কের দাবি, এই দেশ দুটি ‘সন্ত্রাসীদের' অর্থাৎ বিদ্রোহী কুর্দিদের এবং তুরস্কে ২০১৬ সালে হওয়া ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের সন্দেহভাজন নেতা ফেথুল্লাহ গুলেনের সমর্থকদের আশ্রয় দিচ্ছে৷
তবে সম্প্রতি কোরান পোড়ানোর এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ানের মুর্তি পোড়ানোর ঘটনায় সুইডেনের সাথে দেশটির কূটনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে৷
এমন পরিস্থিতিতে সুইডেনের সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়টি তুরস্ক ও হাঙ্গেরির অনুমোদনের জন্য আটকে থাকলে ফিনল্যান্ডের আলাদাভাবে ন্যোটেতে যোগদান করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে, ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা এ বিষয়ে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি৷''
‘‘আমরা সুইডেনকে নিয়ে একসাথে এবং একই সময়ে ন্যাটেতে যোগদান করতে চাই৷ এর একমাত্র কারণ হলো আমরা ভালো প্রতিবেশি এবং সহযোগী৷''
তিনি আরো জানান, একসাথে সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে দু'দেশের আগ্রহ রয়েছে৷ সেইসাথে এটি ন্যাটোর কোশলগত আগ্রহের বিষয়ও৷
তবে তিনি বলেন, ‘‘সদস্য দেশগুলো কীভাবে এ বিষয়টির অনুমোদন দেবে তা আমরা প্রভাবিত করতে পারি না৷ এটি তাদের সিদ্ধান্ত৷''
‘‘আমাদের কথা হলো, আমরা ন্যোটেতে যোগ দিতে চাই৷ আমরা (ফিনল্যান্ড ও সুইডেন) একসাথে যোগ দিতে আগ্রহী৷''
আরআর/এডিকে (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)
জার্মানির ন্যাটো মিশন
ন্যাটোতে পশ্চিম জার্মানির অন্তর্ভূক্তির পর থেকে ট্রান্স-আটলান্টিক জোটের বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়েছে বার্লিন৷ আর ১৯৯০ সাল থেকে জার্মানির সেনাবাহিনী বুন্ডেসভেয়ার নিজেদের ‘আওতাভুক্ত নয়’, এমন জায়গায়ও কাজ করেছে৷
ছবি: S. Gallup/Getty Images
ন্যাটোতে জার্মানির ভূমিকা
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি ১৯৫৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগ দেয়৷ তবে, দুই জার্মানির পুর্নমিলনের আগ অবধি নিজেদের ‘আওতাভুক্ত নয়’ এমন এলাকাতে ন্যাটোর নেতৃত্বে মিশনে যায়নি জার্মানি৷ ১৯৯০ সালের পর থেকে বিশ্বের নানাপ্রান্তে শান্তিরক্ষা থেকে প্রতিরক্ষা অবধি নানা পর্যায়ে ন্যাটোর মিশনে অংশ নিয়েছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
বসনিয়া: জার্মানির প্রথম ন্যাটো মিশন
জার্মানি ১৯৯৫ সালে প্রথম ‘নিজেদের আওতাভুক্ত নয়’ এমন এলাকায় ন্যাটোর নেতৃত্বে শান্তি রক্ষায় সেনা মোতায়েন করে৷ দেশটির নাম বসনিয়া হ্যারৎসেগোভিনা৷ বসনিয়া যুদ্ধের সময় সেখানে নিরাপত্তা প্রদানে ভূমিকা পালন করে জার্মান সেনারা৷ ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর ষাট হাজারের বেশি সেনা সেসময় বসনিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/H. Delic
কসভোয় শান্তি রক্ষা
কসভোতে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশনের শুরু থেকে সাড়ে আট হাজারের মতো জার্মান সেনা সেখানে মোতায়েন করা হয়৷ ১৯৯৯ সালে ন্যাটো সার্বিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বিমান হামলাও চালিয়েছিল, কেননা, সেই সময় তারা সংখ্যালঘু আলবেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং তাদের বেসামরিক সমর্থকদের উপর দমনপীড়ন চালাচ্ছিল৷ এখনও সাড়ে পাঁচশ’র মতো বুন্ডেসভেয়ারের সেনা দেশটিতে মোতায়েন রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Xhemaj
এজিয়ান সি-তে টহল
জার্মানি ২০১৬ সালে কমব্যাট সাপোর্ট শিপ ‘বন’-কে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমর্থিত ন্যাটো মিশনের আওয়তায় এজিয়ান সি-তে মোতায়েন করে৷ অভিবাসী সংকটের সময় গ্রিক এবং তুর্কি সমুদ্রসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ছিল এই মিশনের অংশ৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M.Schreiber
এক দশকের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে
জার্মান সংসদ ২০০৩ সালে আফগানিস্তানে মোতায়েন ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বাহিনীতে সেনা পাঠানোর পক্ষে মত দেয়৷ ফলে জার্মানি ন্যাটো বাহিনীতে তৃতীয় বৃহত্তম সেনা পাঠানো দেশে পরিনত হয়৷ এই মিশনে পঞ্চাশ জনের বেশি জার্মান নিহত হয়েছে৷ এখনো প্রায় হাজারখানেকের মতো সেনা সেদেশে মোতায়েন রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A.Niedringhaus
লিথুয়ানিয়ায় জার্মান ট্যাংক
বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে ন্যাটোর উপস্থিতি বাড়ানোর অংশ হিসেবে বুন্ডেসভেয়ারের সাড়ে চারশ’ সেনা ২০১৭ সালে লিথুয়ানিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছে৷ ন্যাটোর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই উপস্থিতিকে শক্তিশালী করছে জার্মানির সর্বাধুনিক ট্যাংক৷ তাছাড়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তত বাহিনীর নেতৃত্বেও রয়েছে জার্মানি, ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Kul
নেতৃত্ব গ্রহণ
২০১৯ সালে ন্যাটোর বহুজাতিক ‘ভেরি হাই রেডিনেস জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স (ভিজেটিএফ)’-এর নেতৃত্ব দেবে জার্মানি৷ জোটটির পূর্বাংশে রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসনের জবাব দিতে এই ব়্যাপিড রিঅ্যাকশন ফোর্স তৈরি করা হয়েছে৷