আধুনিক নগরকেন্দ্রিক জীবনে অপচয়ের দৃষ্টান্তের অভাব নেই৷ সুইডেনের এক শহরের একদল ডিজাইনার খালের মধ্যে পরিত্যক্ত ই-স্কুটারের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে নানা প্রয়োজনীয় পণ্য গড়ে তুলে পরিবেশ সংরক্ষণ করছেন৷
বিজ্ঞাপন
সুইডেনের দক্ষিণের বন্দর শহর মালম্যোয় খালের বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ সেখানকার অবস্থা সম্পর্কে পেরো রাসিচ বলেন, ‘‘করোনা সংকটের পর এক সহকর্মী ও আমি জানতে চেয়েছিলাম, জাহাজ চলাচল কমে যাবার ফলে খালের অবস্থা কতটা সামলে উঠেছে৷ সত্যি উন্নতি হয়েছে৷ কিন্তু সেই সঙ্গে দেখলাম, খালের মধ্যে চারিদিকে অসংখ্য ই-স্কুটার পড়ে রয়েছে৷ এখনো পর্যন্ত আমরা প্রায় ৩০০টি যান উদ্ধার করেছি৷ এটা পরিবেশের জন্য বড় এক সমস্যা৷''
চার জন ডিজাইনার ও দুই জন ডুবুরি পরিবেশের সেই সমস্যার সমাধান চান৷ ক্রিস্টিয়ান স্ভেনসসন তাঁদেরই একজন৷ ডিজাইনার হিসেবে তিনি মনে করেন, ‘‘ব্যাটারির মধ্যে লিথিয়ামের মতো অনেক রাসায়নিক রয়েছে, যেগুলি মোটেই সমুদ্রে গিয়ে পড়া উচিত নয়৷ অন্যদিকে অনেক ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের পুনর্ব্যবহার সম্ভব৷''
ডিজাইনের মাধ্যমে জগতের উন্নতি ‘আন্দ্রা ফর্মেন' উদ্যোগের মিশন৷ সেই গোষ্ঠীর ডিজাইনাররা ২০২১ সাল থেকে এই প্রকল্পের জন্য কাজ করছেন৷ মালম্যোর খালে ডুবে যাওয়াসুইডেনে ফেলে দেওয়া ই-স্কুটার পুনর্ব্যবহারের উদ্যোগ ও ভাড়া কোম্পানির ভুলে যাওয়া ই-স্কুটার খুলে নিয়ে উপাদানগুলি কাজে লাগাচ্ছেন তাঁরা৷
ডিজাইনাররা কাছেই নিজেদের ওয়ার্কশপে সেগুলি দিয়ে অনেক কিছু তৈরি করছেন, যেমন বাতি, চেয়ার অথবা বারবিকিউ গ্রিল৷ ডিজাইনার হিসেবে অস্কার ওলসসন মনে করেন, ‘‘আমরা যত বেশি সময় ধরে এই কাজ করছি, ততই বুঝতে পারছি যে এই আইডিয়া কত ভালো ছিলো৷ এমন সব মালমশলা হাতে পাচ্ছি, যেগুলি দিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব৷ আকর্যণীয় ডিজাইন সৃষ্টি করতে আমাদের বেশি কিছু যোগ করতে হচ্ছে না৷''
ইউরোপের অনেক দেশে ই-স্কুটারের রমরমা দেখা যাচ্ছে৷ ই-স্কুটার ভাড়া নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া যায়৷ তারপর সেখান থেকে অন্য কেউ সেটি ভাড়া নিতে পারে৷ এমন আইডিয়া শুনতে ভালো মনে হলেও বাস্তবে বার বার সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ যেমন অনেকে হাঁটার পথের উপর ই-স্কুটার রেখে চলে যাচ্ছেন৷
অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে স্কুটার ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ ডিজাইনাররা সেগুলিকে নতুন জীবন দিচ্ছেন৷ ডিজাইনার জিংবাই জেং বলেন, ‘‘আমার মনে হয় আমি এই টিউবটিকে স্টাকেবল শেল্ফ সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করবো৷ এটা অন্যতম প্রধান অংশ৷ তাকের প্রণালী ধরে রাখতে এটি ব্যবহার করবো৷ রোলার অ্যালুমিনিয়াম পাত দিয়ে তাকের উপরিভাগ তৈরি করবো৷''
সুইডেনে পরিবেশরক্ষায় ই-স্কুটার
04:01
‘সাদার্ন সুইডেন ডিজাইন ডেস'-এর মতো প্রদর্শনীতে ‘আন্দ্রা ফর্মেন' প্রকল্পের ডিজাইন তুলে ধরা হয়৷ অবশ্যই সেই সব পণ্যও বিক্রি করা হয়৷ মূল্য ৩০০ থেকে ৬০০ ইউরো৷ তবে পণ্য বিক্রিই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য নয়৷ অস্কার ওলসসন বলেন, ‘‘সব অংশ ব্যবহার করাই আসল লক্ষ্য৷ অনেকটা খাদ্যের জন্য কোনো প্রাণী জবাইয়ের মতো৷ সেটির সব অংশই খাওয়া উচিত, কিছুই ফেলে দেওয়া উচিত নয়৷ সেই চ্যালেঞ্জ আমরা এখনো পুরোপুরি আয়ত্ত করতে পারিনি৷''
কাঁচামালের কোনো অভাব নেই৷ অনিচ্ছাকৃত হলেও মালম্যোর খালগুলিতে প্রায় অফুরন্ত উপাদান পাওয়া যায়৷ আইনগতভাবে স্কুটারগুলি ভাড়া কোম্পানির সম্পত্তি হলেও পরিত্যক্ত যানগুলি ফিরে পাবার কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না৷
ইলেক্ট্রিকযান কতটা পরিবেশবান্ধব?
আশপাশে ঘুরতে যেতে, যানবাহন হিসেব কতো বিকল্পই তো আছে! ভাবতে গেলে, চোখে ভাসে ই-স্কুটার, হোভারবোর্ডস কিংবা ই-বাইক৷ কথা হলো, বিদ্যুতায়িত এসব যান কতোটা উপকারী? পরিবেশের জন্য কতোটা উপযোগী? ছবিঘরে দেখুন তারই বিশ্লেষণ...
ছবি: picture-alliance/dpa
চিরচেনা সাইকেল
বাইরে একটু চক্কর কাটার ভাবনা এলে, যে কারো মনে শুরুতেই আসে চিরচেনা দুই চাকার সাইকেলের কথা৷ যদিও প্রযুক্তির হাত ধরে আমাদের আছে নানা বিকল্প৷ তবে যতোটা ভাবা হয়, ই-বাইক আর ই-স্কুটার কিন্তু ততোটা পরিবেশ বান্ধব নয়৷ এগুলো তৈরি করতে পারে আরো কিছু জটিলতা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kahnert
ইলেক্ট্রো-ক্লাসিক
সাধারণ সাইকেলের বিকল্প হিসেবে বিদ্যুতায়িত সাইকেল বা ই-বাইকের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি৷ মোটর থাকায় এটি পেয়েছে দ্রুত গতি৷ ঢাল বেয়ে উঠাও হয়েছে সহজ৷ বয়সের কারণে বাস, ট্রামে যারা উঠতে চায় না, তাদের কাছে ই-বাইক ভালো বিকল্প৷ কিন্তু সমস্যাও আছে৷ সাইক্লিংয়ের আসল মজাটা যেমন নেই, তেমনি ক্যালরিও খরচ হচ্ছে না৷ আবার বাড়ছে দুর্ঘটনা ঝুঁকি ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
সংকটের নাম ব্যাটারি
ই-বাইকের বিপক্ষ নিলে, ব্যাটারি প্রসঙ্গটা এড়ানো যায় না৷ ব্যাটারি তৈরিতে প্রচুর প্রাকৃতিক শক্তির অপচয় হয়৷ রিচার্জেবল লিথিয়াম ব্যাটারি এই যানের চালিকাশক্তি৷ মাটি খুঁড়ে লিথিয়াম তুলে আনাও কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়৷ আবার এই ব্যাটারি তৈরিতে প্রয়োজন লিথিয়ামের বিশাল খনি৷ ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে লিথিয়ামের মজুদ মাত্র ৫৩.৮ মিলিয়ন টন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাড়ছে জ্বালানি চাহিদা
বিদ্যুতায়িত যানে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হচ্ছে না৷ কিন্তু ব্যাটারিগুলো নিয়ম করে চার্জ করতে হয়৷ ই-বাইক বলে নয়, ই-স্কুটার, ই-স্টেকবোর্ড মনোহুইল কিংবা হোভারবোর্ডস-সবেক্ষেত্রে কথাটি প্রযোজ্য৷ বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে, বিদ্যুতের চাহিদা৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে সেই চাহিদার পুরোটা যোগান দেয়া সম্ভব না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
নতুন ভাবনায় বাড়ছে ব্যাটারি চাহিদা
প্রযুক্তি নির্মাতারা ক্ষণে ক্ষণে আনছে চোখ ধাঁধানো গ্যাজেট৷ আর এগুলো সচল রাখতে, ব্যাটারি চার্জ দেয়ার বিকল্প কিন্তু নেই৷ সাধারণ ই-বাইকগুলোতে, ব্যাটারির বদলে প্যাডেলের ব্যবস্থা আছে৷ কিন্তু ব্যাক টু দ্যা ফিউচার টু-এর আদলে আসা হোভারবোর্ডে সেই সুযোগ নেই!
ছবি: Getty Images/S. Gallup
স্বল্প দূরত্বের স্কুটার
শৈশবে দেখা স্কুটারের সঙ্গে ই-স্কুটারের কোনো অমিল নেই৷ তবে এটি চালাতে পায়ের ওপর আর নির্ভর করতে হচ্ছে না৷ বরং ব্যাটারিই তার চালিকাশক্তি৷ আর পোড়া ইঞ্জিনের চেয়ে, এই প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে পরিবেশ বান্ধব৷ মাথায় রাখা ভালো, এটি দিয়ে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছানোর কাজটি হয় না৷ অনেকেই স্বল্পদূরত্বের যান হিসেবে, যেমন ঘর থেকে বাস বা ট্রেন স্টেশন যাওয়ার কাজে ব্যবহার করে ই-স্কুটার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
নিয়মভাঙার পালা
জার্মানিতে এখনো ই-স্কুটার নিয়ে পথে নামার অনুমতি নেই৷ ছোট্ট হলেও একটি ইঞ্জিন আছে, এই যানে৷ আর তাই ঠিক গাড়ির মতো এটির জন্যও লাইসেন্স থাকা চাই! এ বছর গ্রীষ্মের শুরু থেকে অনুমতি দেয়ার কথা ভাবছে জার্মানি৷ শর্ত থাকছে, গতিসীমা সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার, এবং চলতে হবে সাইকেলের নির্ধারিত পথে৷ যুক্তরাষ্ট্রেও কিছু দিনের জন্য ই-স্কুটার নিয়ে রাস্তায় নামার অনুমতি ছিল৷