অনেকটা প্রত্যাশিতই ছিল৷ দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে যেভাবে আক্রমণের পসরা সাজিয়েছিলেন বোঝা যাচ্ছিল যে-কোনো মুহূর্তে লক্ষ্য খুঁজে পাবে ব্রাজিলিয়ানদের পা৷
বিজ্ঞাপন
সেটা অবশ্য হয়েও গিয়েছিল৷ ৬৫ মিনিটের মাথায় লেফট উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের দেওয়া গোলে উদযাপন শুরু করেছিলেন ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা আর গোটা স্টেডিয়াম৷
কিন্তু প্রযুক্তির সহায়তায় রেফারি জানিয়ে দেন রিচার্লিসন অফসাইড ছিলেন৷
এরপর কাঙ্খিত গোলটি আসে ৮৩ মিনিটের মাথায়৷ মিডফিল্ডার কাসেমিরোর নেওয়া শট লক্ষ্য খুঁজে পেতে ভুল করেনি৷
শুরু থেকে খুব একটা আগ্রাসী না হলেও ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালায় ব্রাজিল৷ মাঝ মাঠ থেকে পাসিং লাইন তৈরি করে প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভাঙার চেষ্টা করে তারা৷
সুযোগও তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েকটি৷ জয়ী দলের শেষ ষোলো নিশ্চিত হবে এমন ম্যাচে ২৭ মিনিটে ব্রাজিলকে লিড এনে দেওয়ার সুযোগ হারান ভিনিসিয়ুস জুনিয়র৷ আর সেন্টার ফরোয়ার্ডে থাকা রিচার্লিসনও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন৷
খেলার শুরু থেকেই রক্ষণ সামলানোর দিকে মনোযোগ দেয় সুইজারল্যান্ড৷ ফলে আক্রমণ করলেও তা কাজে লাগাতে পারছিল না ব্রাজিল৷
বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের সেরা একাদশ
এই একাদশ বাছাই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই৷ কয়েকবছর আগে বিশ্লেষক ও সাংবাদিকদের ভোটে নির্বাচিত এই একাদশ প্রকাশ করেছিল বিশ্বখ্যাত ফুটবল ম্যাগাজিন ওয়ার্ল্ড সকার৷ দেখুন কারা ছিলে ৪-৪-২ ফর্মেশন মাথায় রেখে গড়া সেই দলে৷
ছবি: AP
গোলরক্ষক: লেভ ইয়াসিন
ফুটবলে গোলরক্ষকের নাম নেয়া হবে আর লেভ ইয়াসিনের নাম আসবে না তা হতে পারে না৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই গোলরক্ষক খেলেছেন ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৬৬ বিশ্বকাপ৷ ১৯৫৬ সিডনি অলিম্পিকে জিতিয়েছিলেন দেশকে৷ ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েই একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/empics
লেফট ব্যাক: পাওলো মালদিনি
বিশ্ব ফুটবলের সেরা ডিফেন্ডার কে? অবলীলায় এই নামটি চলে আসবে৷ ভোটেও তাই হয়েছে৷ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বিগুণ ভোট পেয়েছেন তিনি৷ ১৯৯০, ১৯৯৪ ও ১৯৯৮-র বিশ্বকাপে খেলেছেন এই ইটালিয়ান ডিফেন্ডার৷ ১৯৯৪-এর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে ইটালির টাইব্রেকার হার একটুর জন্য তাঁকে শিরোপার নাগাল পেতে দেয়নি৷
ছবি: picture-alliance/AP-Photo/B. Luca
রাইট ব্যাক: কাফু
টানা তিন বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছেন তিনি৷ জিতেছেন ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপ৷ এর মধ্যে ২০০২-এ ব্রাজিল দলের নেতৃত্বে ছিলেন৷ ভোটে ডিফেন্ডারদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানটি ছিল কাফু’র৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার
ফুটবলের ইতিহাসে বেকেনবাওয়ারই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি কোচ, খেলোয়াড় বা অধিনায়ক থাকাকালে দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন৷ এই কিংবদন্তীর নেতৃত্বে জার্মানি বিশ্বকাপ জেতে ১৯৭৪ সালে৷ আর কোচ হিসেবে ডয়েচলান্ডকে আবারো শিরোপার স্বাদ দেন ১৯৯০-এ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: ববি মুর
ইংল্যান্ডের একমাত্র বিশ্বকাপটি (১৯৬৬) জয়ে নেতৃত্ব দেন এই কিংবদন্তী ডিফেন্ডার৷ তাঁর পায়ের দক্ষতা আর রক্ষণভাগে দেয়াল তৈরি করে প্রতিপক্ষকে কঠিন সময় উপহার দেয়ার কৌশল তাঁকে জায়গা করে দিয়েছে একাদশে৷ তবে ভোটের মাঠে এর জন্য তাঁকে ইটালির ফ্র্যাঙ্কো বারেৎসি’র সঙ্গে কঠিন লড়াই করতে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিডফিল্ডার: আলফ্রেডো ডি স্টেফানো
যে চারজন মিডফিল্ডার একাদশে জায়গা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আলফ্রেডো ডি স্টেফানো সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন৷ এই প্রতিভাবান ফুটবলারের বিশেষ দিক হলো তিনি যে কোনো পজিশনে খেলতে পারতেন৷ অসম্ভব স্ট্যামিনার অধিকারী ছিলেন৷ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিনি আর্জেন্টিনা ও স্পেনের হয়ে খেলেছেন৷ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেললেও মূল পর্বে খেলা হয়নি তাঁর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিডফিল্ডার: জিনেদিন জিদান
জিদানের পায়ের জাদু’র প্রশংসা করেন না এমন ফুটবলপ্রেমী পাওয়া মুশকিল৷ স্কিলের দিক থেকে অনেকেই তাঁকে মারাদোনা আর পেলের সঙ্গেই তুলনা করেন৷ ১৯৯৮-এর বিশ্বকাপ জয়ে ফ্রান্সের নায়ক ছিলেন তিনিই৷ এমনকি ২০০৬ বিশ্বকাপেও সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন৷ তবে সেবার ইটালির মাতেরাৎসিকে মাথা দিয়ে গুঁতো মেরে অনেক সমালোচনার ভাগীদারও হন৷
ছবি: picture-alliance/DPPI
মিডফিল্ডার: ইয়োহান ক্রুইফ
হল্যান্ডের এই কীর্তিমান ফুটবলার যে একাদশে থাকবেন তা জানাই ছিল৷ টোটাল ফুটবলের একরকম জনকই তিনি৷ তাঁর কৌশলের কাছে প্রতিপক্ষরা যেন দাঁড়াতেই পারতেন না৷ তাঁর নৈপূণ্যে ১৯৭৪ বিশ্বকাপে পূর্ব জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় হল্যান্ড৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পশ্চিম জার্মানির কাছে ধরাশায়ী হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
মিডফিল্ডার: ডিয়েগো মারাদোনা
ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিতর্ক হলো, সর্বকালের সেরা কে? পেলে, না মারাদোনা? এই ফুটবল জাদুকরের জাদু অবশ্য ১৯৮২-তেই দেখেছিল বিশ্ব৷ কিন্তু সেবার তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি৷ এরপর প্রায় একক নৈপূণ্যেই আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছিলেন ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ৷ ১৯৯০ সালেও ফাইনালে খেলেছে তাঁর দল৷ তাঁর ‘ঈশ্বরের হাত’-এর গল্প কার না জানা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্ট্রাইকার: পেলে
সর্বকালের সেরা বিতর্কের আরেক নায়ক পেলে৷ ‘কালোমানিক’ নামেও পরিচিত৷৷ ব্রাজিল ও ফুটবল উভয়কেই মহিমান্বিত করেছেন এই কিংবদন্তী৷ ১৯৬২ বিশ্বকাপে তিনি দ্বিতীয় ম্যাচে ইনজুরির শিকার হয়ে আর খেলতে পারেননি৷ তবে সেই বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল৷ পরের বিশ্বকাপে ব্রাজিল অবশ্য আগেই বাদ পড়ে যায়৷ প্রচুর ফাউলের শিকার হন পেলে৷ তবে ১৯৭০-এর বিশ্বকাপে চরম নৈপূণ্য দেখিয়ে জিতে নেন শিরোপা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্ট্রাইকার: লিওনেল মেসি
একাদশে এ সময়ের একমাত্র প্রতিনিধি হলেন লিওনেল মেসি৷ যদিও এখনো বিশ্বকাপে মেসির জাদুর প্রতিফলন তেমন একটা ঘটেনি, তারপরও তাঁর নৈপুণ্য তাঁকে সেরা একাদশে জায়গা করে দিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, পেলে ও মেসির মাঝে ব্যবধান গড়েছে মাত্র ১০টি ভোট৷
ছবি: Reuters/A. Raggio
11 ছবি1 | 11
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে আগে জিততে পারেনি ব্রাজিল৷ রাশিয়া বিশ্বকাপে সুইসদের রক্ষণ দেয়ালে আটকে গিয়েছিল সেলেসাওরা৷ কাতারেও ওই রক্ষণ দুর্গ শক্ত করে খেলছিল সুইসরা৷ হলুদ জার্সির খেলোয়াড়রা আক্রমণে উঠলেও দুর্গ ভেদ করতে পারছিল না৷ শেষ পর্যন্ত মিডফিল্ডার কাসেমিরো এনে দেন ব্রেক থ্রু ৷ ১-০ গোলের জয়ে দলকে তুলে নেন বিশ্বকাপের শেষ ষোলয়৷
এদিকে দিনের আরেক ম্যাচে শেষ সময়ে জোড়া গোল করে সার্বিয়ার সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে ক্যামেরুন৷ ম্যাচে প্রথমে ক্যামেরুন লিড নিলেও পরে জোড়া গোল করে লিড নিয়ে বিরতিতে যায় সার্বিয়া৷ বিরতি থেকে ফিরে আবারও গোলের দেখা পায় সার্বিয়া৷ তবে শেষ পর্যন্ত ৩-৩ গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়ে সার্বিয়া ও ক্যামেরুন৷
অন্য ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে আফ্রিকার দেশ ঘানা৷ দুই গোলে পিছিয়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করার পর দ্রুতই খেলায় সমতা এনেছিল দক্ষিণ কোরিয়া৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত কুদুস মোহাম্মদের গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ঘানা৷ কুদুস মোট দুটি গোল করেন৷