সুইজারল্যান্ডে সাম্প্রতিক গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের অধিকার খর্ব করার পক্ষে রায় পড়েছে৷ ইইউ পাল্টা পদক্ষেপের হুমকি দিচ্ছে৷ এর ফলে সামগ্রিকভাবে ইউরোপীয় অর্থনীতির ক্ষতির আশঙ্কা করছে অনেক মহল৷
বিজ্ঞাপন
সুইস গণভোটের রায়ের ফলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ কারণ সুইজারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও ইইউ-র সঙ্গে সে দেশের বিশেষ চুক্তি রয়েছে৷ ফলে পণ্য, পরিষেবা ও কর্মীদের অবাধ চলাচলের ক্ষেত্রে এতকাল কার্যত তেমন কোনো পার্থক্য ছিল না৷ সুইস সরকার এই গণভোটের রায় কার্যকর করলে ইইউ নাগরিকরা আর ইচ্ছামতো সে দেশে বসবাস করতে পারবেন না৷
২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চ্যালেঞ্জ
ইইউ অঞ্চলের বিদ্যমান সংকট নিরসনে নতুন বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে৷ ছবিঘরে সেসব বিষয় সম্পর্কে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নির্মাণাধীন ভবন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে৷ গড়ে উঠছে নতুন নতুন ভবন৷ ভবন নির্মাণের সময় প্রচুর শব্দ হয়, ধুলাও হয় প্রচুর৷ আর্থিক দিকটা দেখে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আর নির্মাণ শ্রমিকরা নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেন, আশপাশের এলাকাবাসীর সব রকমের ঝামেলাই মেনে নিতে হয়৷
ছবি: DW
ইউরোপীয়দের আছে বিকল্প
চলমান সংকটের সময় ইইউ-র নানা কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে কর্মসূচির কার্যকারীতা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে৷ মে মাসে অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব দেখা যেতে পারে৷ গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কমছিল৷ কিন্তু এবার ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছে ইইউ পার্লামেন্ট৷ এমনকি টেলিভিশনে বিতর্কের মাধ্যমেও অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
ইউরোপীয় বিস্ময়?
ইইউ-র সংশয়বাদী অংশগুলো নিজেদের ভোট বাড়ানো জন্য উঠেপড়ে লেগেছে৷ ব্রিটেনের ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট কিংবা জার্মানির অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড – সবাই চায় ‘স্বল্প ইউরোপ’৷ প্রশ্ন হলো, তারা কি একটি স্থিতিশীল প্যান-ইউরোপিয়ান জোট গড়তে পারবে?
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
সংকট ব্যাবস্থাপনা
কয়েক বিলিয়ন বেইলআউট সংকটাপন্ন ইউরোপে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে৷ আর্থিক অনুদান এবং সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড ইইউ-র বিশেষ অর্থায়নের সহায়তা ছাড়াই চলতে পারছে৷ অন্য দেশগুলোতেও কৃচ্ছতা সাধন এবং আর্থিক সংস্কার কর্মসূচিতে কঠোরতা আসার অপেক্ষায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংকট নিরসনে অলৌকিকের সহায়তা?
সংকট নিরসনের আগে কারণটা জানতে হয়৷ ইইউ অঞ্চলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করার চেষ্টা চলছে৷ যেসব ব্যাংকের অস্তিত্ব বিপন্ন, তাদের কখনোই দেশের অর্থনৈতিক সংকট চরমে তোলার মতো পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয়, নাগরিকদের উচিত নয় করের টাকায় ব্যাংকগুলোকে বেইলআউটের দিকে এগিয়ে দেয়া৷ প্রস্তাবিত ব্যাংকিং ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে ইইউকে আগেই হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাকুরি প্রত্যাশীদের জন্য সুখবর
ইইউ অঞ্চলের ২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি বেকারের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে৷ অতীতে সংকটের সময় কর্মহীনদের কাজ দেয়ার ব্যাপারে সহায়তা না করায় কঠোর আর্থিক পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সমালোচনা হয়েছে৷ এবার ব্রাসেলস থেকে সাহায্যের হাত বাড়ানো হবে, সংকটাপন্ন দেশগুলোর তরুণদের সহায়তা করবে ইইউ-র বিভিন্ন কর্মসূচি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাই আরো প্রতিযোগিতার মনোভাব
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ইইউ অঞ্চলের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে৷ এ লক্ষ্যে উন্মুক্ত অভ্যন্তরীণ বাজার এবং তৃতীয় দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার কথা ভাবছে ইউরোপীয় কমিশন৷ এছাড়া ইইউ-র সংকটগ্রস্ত সদস্য দেশগুলোকে নিজ নিজ সমস্যা সমাধানে অবশ্যই আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে৷
ছবি: Getty Images
তথ্য নিরাপত্তা ২.০
ইইউ অঞ্চলে দু’বছর পর্যন্ত সবার টেলিফোন এবং ইন্টারনেট তথ্যের রেকর্ড রাখা আইনসম্মত৷ তবে এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে৷ ইউরোপীয় কোর্ট অফ জাস্টিস এ বছরের শুরুতেই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ বিচারকদের অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে তথ্য ধারণ করে রাখলে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়৷ তাই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: CC-BY-Verena Hornung 3.0
অভিবাসন নীতিমালা
ইইউ অঞ্চলে শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়ক নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ ২০১৩ সালের অক্টোবরে ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় এসে ৩৬০ জন আফ্রিকান অভিবাসী ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরার পর, ইইউ-র অভিবাসন নীতিমালা পড়েছে তোপের মুখে৷ নতুন বছরে ইইউ তাই অভিবাসন প্রত্যাশীদের মূল দেশ এবং ট্র্যানজিট দেশের সঙ্গে সহযোগীতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হবে৷ এক্ষেত্রে উল্লেখিত দেশগুলোকে আরো বেশি উন্নয়ন সহায়তা দেয়ার কথাও ভাবছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
বলা বাহুল্য, ইইউ এমনটা মেনে নিতে পারছে না৷ পাল্টা পদক্ষেপের হুমকিও শোনা যাচ্ছে ব্রাসেলস থেকে৷ ইইউ যদি পণ্য ও পরিষেবার অবাধ চলাচলের উপর শর্ত চাপায়, সুইজারল্যান্ডের আমদানি-রপ্তানির উপরেও তার প্রভাব পড়তে পারে, প্রভাব পড়তে পারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপরেও৷ তবে রাতারাতি নয়, এই প্রবণতা ধীরে ধীরে দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ তার আগেই যদি রাজনৈতিক স্তরে এই সংকটের সমাধান করা সম্ভব হয়, তাহলে অবশ্য বিপদ এড়ানো সম্ভব হবে৷ প্রাথমিকভাবে সুইস মুদ্রা ফ্রাঁ ও সে দেশের পুঁজিবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল৷ কিন্তু গোটা ইউরোপে এই রায় নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷
এর ফলে ইউরো এলাকার নিজস্ব প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে৷ সুইস গণভোটের পর পুঁজিবাজারের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া আপাতত কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম৷ স্থায়ীভাবে প্রবৃদ্ধির পথে ফেরার পথে ইউরোপের সামনে বড় সমস্যা হলো উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলির দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি৷ এ সব দেশে যথেষ্ট চাহিদা না দেখা দিলে ইউরোপের রপ্তানি কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ জার্মান অর্থমন্ত্রী ভল্ফগাং শয়েবলে বলেছেন, প্রয়োজনে এই সব দেশের সহায়তা করা হবে৷ আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়ায় জি-টোয়েন্টি দেশগুলির অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনে বিষয়টি আলোচিত হবে৷
এদিকে ইউরো এলাকায় ইনফ্লেশন বা মূল্যস্ফীতির বদলে ডিফ্লেশন বা পড়তি মূল্যের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তার ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে৷ ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারিও দ্রাগি ও শয়েবলে অবশ্য এর ফলে বিপদের কোনো আশঙ্কা দেখছেন না৷ সাময়িক সমস্যাগুলি সত্ত্বেও জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের চুক্তির রদবদল করে আরও পারস্পরিক সমন্বয়ের উপর জোর দিয়ে চলেছে৷